Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

হোক সে আপনার সন্তান, তবুও তার স্বপ্নদোষ হবে

Advertisements

হোক সে আপনার সন্তান। তবুও তার স্বপ্নদোষ হবে, প্রেম হবে, শরীরের গঠন বদলাবে, আন্ডার আর্মস হেয়ার হবে এটাই তো স্বাভাবিক। স্বাভাবিক যা কিছু তাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিন।

বয়ঃসন্ধি আসবেই… আপনি একে আটকাতে পারবেন না। পাশে থাকুন সন্তানের। এটাই একমাত্র সরল সুন্দর।

আরাফ আমাকে একেকবার একেক ভাবে ডাকে, ধ্রুবও তাই। কখনো মামমাম, কখনো মাম্মা, আম্মু, মাতা (!!), মা’জী, সেতু, মামনি! আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। দু’বছর আগে একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে অপরিচিত কণ্ঠের মাম্মা ডাক শুনে চমকে উঠে তাকিয়ে দেখি আমার আরাফ।

তার কণ্ঠ বদলে গেছে, বয়ঃসন্ধি!! কি আজব একটা কণ্ঠ। আমার এতো দিনের পরিচিত মধুর কণ্ঠ হারিয়ে গেছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখি ছেলের মুখের নানান প্রান্তে দু’চারটা ব্রণ।

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়েছিলাম!! ছিঃ ছিঃ ছিঃ আমিও ভ্রু কুঁচকে তাকালাম? নিজেকে কতই না উদার ভেবেছি। প্রথম প্রথম তো আমি চিৎকার করে ওকে ধমক দিয়ে এও বলেছি ‘এতো জোড়ে কথা বলবি না তো। কানে লাগে তোর আওয়াজ।’

আমার ছেলেটা তার ঠিক কতদিন আগে থেকে কে জানে নিজেই নিজের এ পরিবর্তন টের পেয়ে খানিকটা গুটিয়ে গিয়েছে। খানিকটা একা হয়েছে। খানিকটা বিব্রত, প্রশ্ন, লজ্জিত, রহস্যে ঢাকা।

আমি একটু একটু করে দেখেছিলাম। আমার পাশে এসে জড়িয়ে ধরে ঘুমানো ছেলেটা কেমন করে একা হয়ে যাচ্ছিলো।

সমস্ত পর্দা তুলে দিয়ে একদিন নিজের কাছে নিজে ক্ষমা চেয়ে তার সাথে আমি বসেছিলাম। প্রথম বললাম -‘বুড়া, আন্ডারআর্মস হেয়ার কাটতে হয় জানিস? “

ছেলেটা মাথা নিচু করে বলেছিলো -‘আমি পারবো না মা। ভয় লাগে। যদি কেটে যায়” প্রথমবার আমি দেখিয়ে দিয়েছিলাম। তারপর থেকে সে রেজার নিয়ে তার ছোট ভাইয়ের কাছে যেতো। এ নিয়ে কোনো জড়তা ছিল না আর। তার বয়ঃসন্ধি পরিবর্তন নিয়ে আমি সহজ হতেই সে আবার আগের মত হয়ে গিয়েছিলো। উচ্ছ্বল, সহজ, আত্মবিশ্বাসী।

সে এখন ক্লাস টেনে। চার মাস আগে ভবিষ্যতের জন্য লেখার সময় বয়ঃসন্ধিকালিন পরিবর্তন নিয়ে কথা বলার জন্য আমার আরাফ শতভাগ সাহায্য করেছে আমাকে। আমি পরিষ্কার বলে নিয়েছিলাম ‘দেখ ছেলে আমাকে কিন্তু সব বলতে হবে’। সে বলল, সবাইকে এখান থেকে যেতে বলো। আমি শুধু তোমাকে বলবো।

আমি তার সবথেকে কাছের বন্ধু! সে আমাকে বলেছিলো। তার ভালোবাসার কথা, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ভালোলাগার কথা, তার স্বপ্ন থেকে শুরু করে স্বপ্নদোষ পর্যন্ত। আমার একটু একটু বুক কাঁপছিলো যখন তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‘বাবাই, এটা ঠিক কতদিন পরপর হতে পারে? জীবনে প্রথম হল কবে তোমার মনে আছে? ”

আমার ছেলেটা কাঁপছিলো না। ভীষণ স্মার্টলি বলেছিল -” ডিপেন্ড করে মা। এ নিয়ে যারা বেশী ভাবে তাদের বেশী হয়। আমি তো খুব বেশী ভাবি না। তবে মাঝেমাঝে ভাবতে না চাইলেও ভাবনা আসে মা। আমি কি খারাপ?’ আমি অস্থির হয়ে তার হাত ধরে বলেছিলাম, না বাবা। সকল ভাবনা তো মন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না সব সময়। তবে চেষ্টা করবে যেনো মন পারে ভাবনাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে। অন্য যে কোনো ভালো কাজে ব্যস্ত থাক।

সে ক্রিকেটে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো। এক বছর আগে সে আমাকে পরিষ্কার ভাবে বলেছিলো -‘মাম্মা, এবার আমি ‘গোঁড়া’ নৌকাডুবি পড়ে ফেলি? বড় হয়েছি তো। বুঝি সব।

আমি হাসলাম। বয়ঃসন্ধি একটা সাঙ্গাতিক সময়। আপনার মেয়ে বা ছেলে আপনার চোখের সামনে বদলাবে। আপনি চাইবেন তাকে অভ্যস্ত চোখে শিশুর মতন দেখতে কিন্তু প্রকৃতি তো তার নিয়মেই চলবে। পরিবর্তনগুলো স্বাভাবিক ভাবে নিন। সন্তানের পাশে থাকুন। প্রকৃতির খামখেয়ালি আপনার শিশু ভালো ভাবে চেনে না বলে কখনো কখনো সে নিজেকে অপরাধী ভাবতে পারে। আপনি তাকে সেই কষ্ট থেকে বের করে আনুন।

রাস্তার ক্যানভাসারের হাতে তাকে ঠেলে দেবেন না। আমি জানি আজও অনেকে আমাকে গালি দেবে। কিছু যায় আসে না আসলে। কেউ কেউ বলবে, মা হয়ে ছেলের সাথে এসব বলতে লজ্জা লাগে নাই?

সত্যি বলতে কি লাগে নাই। ও আমার শরীরের অংশ। নাড়ি ছেড়া আমার। সিঙ্গেল মা ছিলাম আমি। এই কঠিন দায়িত্ব অন্য কাউকে দেয়ার রিস্ক আমি কেনো নেবো?

আমার সন্তানের ভালো মন্দ আমার। মা আমি। মা হয়ে যদি না পারি তবে পৃথিবীর আর কোনো সম্পর্ক পারবে। সিঙ্গেল বাবাও আছেন নিশ্চয়ই অনেক। তারা সকল জড়তা কাটিয়ে কন্যাদের হাত ধরুন। তার জীবনের প্রথম স্যানিটারি প্যাড আপনি কিনে দিন। কিসের জড়তা? আপনার মেয়ে আপনার মা তো। আর মা তো মা তাই না?

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

Exit mobile version