নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমকে বাদ দিয়ে হলি আর্টিজান হামলার ঘটনার চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনার চার্জশিটে হাসনাত করিমের না থাকার কারণ তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বয়ানে উঠে এসেছে।
তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে হাসনাত করিমের এই হামলায় ‘কোন সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায়’ চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তাকে।
সোমবার দুপুরে আদালতে এই ঘটনায় চার্জশিট দাখিল করা হয়। মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত করিমকে চার্জশিটে না রাখার কারণ জানান পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
মনিরুল ইসলাম বলেন, এজাহারের কলামে কারো নাম ছিলো না, বডিতে ছিলো সন্দেহভাজন হিসেবে। আমরা বলেছি, যাদের জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে তাদের মধ্যে ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য আমরা বিজ্ঞ আদালতে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে রেকর্ড করিয়েছি। পাশাপাশি যে ৬ জন আসামী জীবিত গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের প্রত্যেকেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। তার প্রেক্ষিতে যাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে, অন্যান্য আলামত বিবেচনায় শুধুমাত্র তাদের বিরুদ্ধেই চার্জশিট প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, নব্য জেএমবি যে সাংগঠনিক হামলাটা চালিয়েছে। সেটার পরিকল্পনা তারা ধাপে ধাপে নিয়েছে ও তার চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটিয়েছে। সেই পার্টে হাসনাত করিমের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ২০১৬’র পয়লা জুলাই রাতভর জিম্মি করে রেখে জঙ্গিরা দুই পুলিশ কর্মকর্তা এবং ৯ ইতালীয়, ৭ জাপানি, এক ভারতীয় এবং এক মার্কিন নাগরিককে হত্যা করে।
জঙ্গি হামলার পরদিন সকালে উদ্ধারকৃত জিম্মিদের মধ্যে রহস্যজনক আচরণের কারণে হাসনাত করিমকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ঘটনার কয়েকদিন পর হাসনাতকে ছেড়ে দেওয়ার কথা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হলেও তাকে আর ছাড়া হয়নি।
একজন কোরিয়ান নাগরিকের গোপনে ধারণ করা ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর হাসনাত করিমের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে। ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষকের নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বলেও অভিযোগ ওঠে।
গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ওই বছরের ৩ আগস্ট তাকে ৫৪ ধারায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়। ৪ আগস্ট প্রথম দফায় হাসনাতের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ১৩ আগস্ট গুলশান হামলার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
২৪ আগস্ট গুলশান হামলা মামলায় গ্রেপ্তার হাসনাত করিমের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। হাসনাত করিম বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন।