প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন: রাস্তা তৈরির সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে পানির চলাচল কোনভাবেই যেন ব্যাহত না হয়। প্রয়োজনে পর্যাপ্ত সংখ্যক ব্রিজ বা কালভার্টের ব্যবস্থা করতে হবে। সুবিধা অনুযায়ী ক্ষেত্রবিশেষ রাস্তা ঘুরিয়ে করতে হবে। কারণ বিল, হাওড়-বাওর এগুলো বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
মঙ্গলবারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন। সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম।
একনেক সভায় ৫ হাজার ১৮৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা খরচে নতুন ১টি ও সংশোধিত দুটিসহ ৩টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকার দেবে ২ হাজার ৮৫৫ কোটি আট লাখ, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৬৩ কোটি ৮৫ লাখ এবং বিদেশি ঋণ ২ হাজার ২৭০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, রাস্তা তৈরির সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে পানির চলাচল কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়। প্রয়োজনে পর্যাপ্ত সংখ্যক ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে রাস্তা এদিক-ওদিক করতে হবে। বিশেষ করে বিল, হাওড়-বাওর এগুলো বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারণ এগুলো ভূগর্ভস্থ পানির স্তর রক্ষা করে বিভিন্নভাবে পানি সরবরাহ করে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতেই তিনি এই নির্দেশনা দিয়েছেন।
আসাদুল ইসলাম বলেন, সিটি কর্পোরেশন বা স্থানীয় সরকারের যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, সেগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ট্রাফিক অবকাঠামো উন্নয়নসহ সড়ক নিরাপত্তা’ নামের একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে খরচ হবে ৩১৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। এই প্রকল্পে ৬৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন করার প্রস্তাব ছিল।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশনের যে প্রকল্প সেখানে পুরো টাকাই সরকারের তহবিল থেকে দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’
সংশোধিত দুটিই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের। সেগুলো হলো ‘সোনাপুর (নোয়াখালী)-সোনাগাজী (ফেনী)-জোয়ারগঞ্জ (চট্টগ্রাম) সড়ক উন্নয়ন (দ্বিতীয় সংশোধন) প্রকল্প।
প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল ১৭২ কোটি ৬৫ লাখ, প্রথম সংশোধনীতে হয় ১৮৫ কোটি ৯৬ লাখ এবং দ্বিতীয় সংশোধনে ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াল ২৯৩ কোটি ৫ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলে এখন তা বাড়িয়ে করা হলো ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত।
আর ‘সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২: এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্পে মূল খরচ ছিল ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা, প্রথম সংশোধনীতে ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বেড়ে হলো ১৬ হাজার ৬৬২ বোটি ৩৮ লাখ টাকা।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হলো ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা ইতিহাস হওয়ার মতো একটি বিষয় যে, তিনটা দেশের প্রথম রাস্তা। প্রধানমন্ত্রী প্রথমবার যখন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, সেই সময় এটার ডিজাইন করা এবং সেসময় শুরু করা। এটি বাংলাদেশের একমাত্র রাস্তা যেখানে ধীরগতির যানবাহনের একটা সাইড লেন আছে।
সচিব বলেন, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সময় লাগে, এর মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে সচিব বা কর্মকর্তারা বদলি হয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, যাতে এই বদলির কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো গ্যাপ (বিরতি) না হয়। তার জন্য যারা থাকবেন এবং যারা নতুন আসবেন, তাদেরকে প্রকল্পের বিষয়ে অবহিত করতে হবে। যাতে কোনো গ্যাপ তৈরি না হয়।