গল্পটা এক রাতের। ঢাকা শহরের অন্ধকার জগতের তিনজন মানুষ। মাদক যাদের কেন্দ্রীভূত করে। মুহূর্তে মুহূর্তে গল্পের বাঁক বদল। টানটান উত্তেজনা। এমন গল্পে সদ্য মুক্তি পেয়েছে ওয়েব ফিল্ম ‘মাইনকার চিপায়’। প্রশংসা কুড়াচ্ছে দর্শকের। বিশেষ করে এর কাহিনী, সংলাপ ও তিন চরিত্রে আফরান নিশো, শ্যামল মাওলা ও শরিফুল রাজের দুর্দান্ত অভিনয়!
ভারতীয় প্লাটফর্ম জি-ফাইভের জন্য নির্মিত এই ওয়েব ফিল্মটি পরিচালনা করেছেন আবরার আতহার। পরিচালকের গল্পে এর চিত্রনাট্য তৈরী করেছেন তরুণ লেখক আয়মান আসিব স্বাধীন। এটি তার প্রথম চিত্রনাট্য। আলোচিত এই ওয়েব ফিল্মটির সঙ্গে যুক্ত হওয়া ও নির্মাণ অভিজ্ঞতা নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে কথা বলেন তিনি:
‘মাইনকার চিপায়’ মুক্তি পেয়েছে। কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
বেশ ভালো। মানে আমরা যেরকম প্রত্যাশা করেছি, ঠিক সেভাবেই রিয়েকশনগুলো ও পাচ্ছি। কারা এসব কন্টেন্ট নিয়ে কথা বলবেন বা বলতে পারেন, তাদেরকে দীর্ঘদিন ধরে আমি ব্যক্তিগতভাবে অবজার্ভ করেছি। যেহেতু তাদের পালসটা বুঝি, ফলে এই কন্টেন্ট দেখে তাদের রিয়েকশান কী হবে এটাও আগে থেকে বুঝতে পেরেছি। প্রচুর মানুষ কাজটার প্রশংসা করেছেন, হাতে গোনা কয়েকজন সমালোচনা করেছেন। তবে সব মিলিয়ে আমরা পুরো টিম দারুণ খুশি।
‘মাইনকার চিপায়’, এমন নাম কেন?
ওয়েব ফিল্মটা কেউ দেখলে বুঝবেন, এরচেয়ে উপযুক্ত নাম আর হতেই পারে না।
এটি কি আপনার প্রথম চিত্রনাট্য?
হ্যাঁ, প্রডিউসড হওয়া এটিই আমার প্রথম চিত্রনাট্য। তবে বেশ কয়েকটা চিত্রনাট্য ইতোমধ্যে আমার লেখা আছে। সামনে সেগুলো প্রডিউস হবে।
‘মাইনকার চিপায়’ কীভাবে যুক্ত হলেন। নির্মাতার সঙ্গে আগে থেকে পরিচয় ছিলো?
না, নির্মাতা আমার পূর্ব পরিচিত নন। হাফ স্টপ ডাউনের রাইটার নাসিফ আমিন, তার মাধ্যমেই আবরারের সঙ্গে আমার পরিচয়। ‘মাইনকার চিপায়’ এর চিত্রনাট্যর জন্য আবরারকে আমার নাম সাজেস্ট করেছিলেন নাসিফ। তো আবরারের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর সে আমাকে এটার গল্প শোনায়। আমাকে সে বলে যে এটার একটা চিত্রনাট্য লাগবে আমার, যে করেই হোক একটু সিনেমাটিক ওয়েতে এটা করে দাও।
নতুন পরিচয়, মতের অমিল হয়নি ডিরেক্টরের সাথে?
একেবারেই না। আবরারের সাথে কথা বলে বুঝলাম, সিনেমা নিয়ে আমাদের ইন্টারেস্ট বা বোঝাপড়া দারুণ। যাদের কাজ দেখে সে অনুপ্রাণিত, আমারও তাদের পছন্দ। কোয়ান্টিন টারান্টিনো থেকে আবরার দারুণ অনুপ্রাণিত, আমিও তাই।
হ্যাঁ, টারান্টিনোর সিনেমায় যে ট্রেডমার্ক ফন্ট থাকে আপনাদের ফিল্মেও সেটা দেখলাম…
এটা নিয়েও একটা দারুণ ব্যাপার আছে। টারান্টিনোর এই ফন্টটা আমার খুব পছন্দ। আমি মনে মনে চাইছিলাম আমাদের ফিল্মেও এই ফন্টটা ব্যবহার করতে, কিন্তু পোস্ট-প্রোডাকশনের সময় এটা বলতে পারি নাই। কিন্তু যখন ক্রেডিট বসানো হয়েছে, তখন দেখি সেই ফন্ট ই! আমিতো অবাক! আবরারকে জিজ্ঞেস করলাম, এই ফন্ট ব্যবহার করবা এটা কবে পরিকল্পনা করেছিলে? সে বলে এটাতো আমার বহু আগে থেকেই প্ল্যান! তো এসব কারণে আমাদের মধ্যে দারুণ বনিবনা হয়েছে, মনমালিন্যর প্রশ্নই আসে না। কোলাবরেশনটাও অনেক দারুণ হয়েছে।
অভিজ্ঞতার কথা বলুন শুনি…
এই প্রজেক্টের সাথে থাকাটা সত্যিই আমার জন্য খুব ভালো কাজ হয়েছে। প্রি-প্রোডাকশন থেকে শুরু করে পোস্ট-প্রোডাকশন পর্যন্ত আমি ছিলাম। কারণ আবরারের কাজের ধরনই এরকম যে, এডিট প্যানেলে বসেও গল্প পাল্টায়! এই প্রক্রিয়াটা খুব দারুণ, এজন্য অবশ্য আমারও তার সাথে থাকতে হয়েছে। যতোটা চমকপ্রদ করা যায়, ততোটাই আমরা চেষ্টা করেছি। এর সাবটাইটেলও কিন্তু আমার করা।
গল্পের মতো সংলাপেও বেশ টানটান উত্তেজনা লক্ষ করা গেছে। বোঝা যাচ্ছে দর্শকও পছন্দ করেছেন। সংলাপ নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হয়েছে কিনা?
আমি পার্সোনালি সংলাপ লিখতে খুব পছন্দ করি। মানে আমার যেকোনো লেখাই শুরু হয় সংলাপ দিয়ে। আমাকে যে কোন গল্প দেয়া হোক না কেন, আমি আগে সংলাপ লিখতে শুরু করবো। যেরকম আমাদের ‘মাইনকার চিপায়’ ফিল্মে মালেক আফসারীর প্রসঙ্গ আছে, আবরার চেয়েছে আমরা যেন সংলাপে পপ কালচারের বেশি রেফারেন্স দেই। তো আমাদের তিন চরিত্র মালেক আফসারীতে কীভাবে যেতে পারে, তো ঐখান থেকেই আমার লেখা শুরু হয় যে তিনটা ক্যারেক্টার কোন গ্যাঞ্জামে পড়লে মালেক আফসারীর কথা তুলবে। তাদের সংলাপের ভেতর দিয়ে আমি সেটা করেছি।
গল্পের চরিত্র শফিক আনসারী নিজের বলে একটা কবিতা আওড়ান, যা মূলত জেমসের গাওয়া ‘দুঃখিনি’ গানের কথা। এই ট্রিক কেন?
আবরার যখন শফিক আনসারী (শ্যামল মাওলা) চরিত্রটিকে কবি হিসেবে দেখাতে চেয়েছে, তখন আমি এই চরিত্রটিকে তার ব্যক্তিত্ব, আচার আচরণেও কবি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছি। এই ফিল্মে তার কথাবার্তা লক্ষ্য করলেও কিন্তু বিষয়টা পরিস্কার। তিনি সংলাপে বলছেন ‘দেখেন, কোথাও একটা তথ্যবিভ্রান্তি হচ্ছে’, সচরাচর কোনো ড্রাগডিলার নিশ্চয় এই ভাষায় কথা বলবে না! আর জেমসের গাওয়া গানকে নিজের কবিতা বলে দেখানোর বিষয়টি আমি বিদেশি একটি সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ইনপুট করেছি। যেখানে পিঙ্ক ফ্লয়েডের ‘হেই ইউ’ গানকে একজন নিজের কবিতা বলে চালিয়ে দেন। মূলত এরমধ্য দিয়ে আমরা একটু ডার্ক কমেডি দেয়ার চেষ্টা করেছি।
কবিদের প্রতি এতো ক্ষোভ কেন?
কোনো ক্ষোভ নাই। এই ফিল্মে কবিকে যেভাবে গালমন্দ শুনতে হয়, বাস্তবে এর শিকার কিন্তু আমি নিজেও! ফিল্মের সংলাপেই আছে, ‘বাংলার বুকে একশো পাঁচ ভাগ পোলাপান কবিতা লেখে’। তো সমাজের এই স্টেরিওটাইপ চরিত্রটি আমাদের সিনেমায় আসে নাই। আমরা শুধু চেয়েছি এই লাইভ চরিত্রটি সিনেমায় তুলে ধরতে।
চিত্রনাট্যকার হিসেবে ক্যারিয়ার এগিয়ে নেয়ার ইচ্ছে আছে নিশ্চয়?
অবশ্যই। চিত্রনাট্যকার হিসেবে শুরুটা করা গেছে, এজন্য আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। এটা আমি চালিয়ে যেতে চাই। গোটা শুটিং ইউনিটে আবরার যার সাথেই আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে, তাকেই সে বলেছে ‘২৪ বছরের একটা ছেলে এরকম দারুণ একটা স্ক্রিনপ্লে লিখে ফেললো’, তো এসব কারণে সত্যিই আমি লাকি। তাছাড়া ক্রিয়েটিভ ইনপুট দেয়ার ক্ষেত্রে এরচেয়ে (স্ক্রিনপ্লে) ভালো ক্ষেত্র আর আছে বলে আমার মনে হয় না।
ছবি: অরণ্য কাশ্যপ