সবকিছু যথানিয়মেই চলছে। কেউ এসেছে, কেউ আসি আসি করছে। হয়ত রাত পোহালেই যোগ দেবে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল টুর্নামেন্টের জন্য কিশোরীদের ক্যাম্পে। এই দেরিতে আসাদের জন্য কোন নিয়মভাঙার শাস্তি বরাদ্দ থাকছে না। যারা এসেছে, তারাও যে মন বসাতে পারছে না অনুশীলনে। আসা না আসা দুপক্ষই তাই মিলে যাচ্ছে একটি জায়গায়। জায়গাটা সাবিনা ইয়াসমিনের। অকালপ্রয়াত সতীর্থের জন্য মন কাঁদছে সকলের।
তিনদিনের জ্বরে ভুগে গত মঙ্গলবার না ফেরার দেশে চলে গেছে কলসিন্দুরের কিশোরী ফুটবলার সাবিনা ইয়াসমিন। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল টুর্নামেন্টের ক্যাম্পে যোগ দেয়ার কথা ছিল তার। আর কখনোই যোগ দেবে না সাবিনা।
ছোট থেকেই একইসঙ্গে বেড়ে ওঠা প্রিয় বন্ধুকে শেষবিদায় দিতে ক্যাম্পে যোগ দেয়নি সানজিদা, মার্জিয়া, তহুরারাও। বুধবার ফুলেল শ্রদ্ধায় চিরবিদায় জানানো হয় কলসিন্দুরের কৃতি সন্তানকে।
কলসিন্দুরের মেয়েরা শুক্রবার ক্যাম্পে যোগ দেবে বলে চ্যানেল আই অনলাইনকে জানালেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। অন্য জেলা থেকে যারা এসেছে, তারাও মানসিকভাবে শোকগ্রস্ত। তাই প্রথমদিনে বাকী মেয়েদের কেবল দুদফা হাল্কা অনুশীলন করিয়েছেন ছোটন।
‘কলসিন্দুরের মেয়েরা শুক্রবার থেকে অনুশীলন করবে। বাকি যারা এসেছে তারাও মানসিকভাবে শোকগ্রস্ত। কটাদিন সময় তো লাগবেই। ওরা একসঙ্গে একটা পরিবারের মত থাকত।’
সেই পরিবারে এখন একজন সদস্য কম। তাতে থেমে থাকলেও চলবে না। সাবিনাকে হারানোর শোককে তাই শক্তিতে রূপান্তর করার প্রত্যয়ই ঝরল কোচ ছোটনের কণ্ঠে, ‘আমরা শোককে শক্তিতে রূপান্তর করব। সাবিনার জন্য কিছু একটা পরিকল্পনা আছে আমাদের।’
কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন। ২০১৫ এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ গার্লস রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলে জয়ী বাংলাদেশ দলের অন্যতম গর্বিত সদস্য ছিলেন। থাইল্যান্ডে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের দলে না থাকলেও সম্প্রতি সাফের দলে ডাক পেয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র তিনদিনের জ্বরই তাকে কেড়ে নিয়ে গেল প্রিয় খেলা, বন্ধু, দল থেকে বহু দূরে।
জীবন নদীর ওপার থেকে নীরবেই হয়ত প্রিয় দেশ, দল, সতীর্থদের সমর্থন যুগিয়ে যাবেন সাবিনা। মার্জিয়া, সানজিদাদের হৃদয়ের মত থেকে যাবেন লাখো ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়েও। এই ফুটবলের জন্যই তো তিনি সাবিনা। ফুটবল যখন থাকছে, তখন না থেকেও থাকবেন সাবিনাও।