বৃহস্পতিবারের কর্মযজ্ঞ শেষে যখন সাধারণ মানুষ ছুটির আমেজ নিয়ে ফিরছিল, তখন এলো এক ভয়াবহ দুঃসংবাদ। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের খবর।
শেরেবাংলা নগরের এই হাসপাতালটিতে আগুন লাগার পর সেখানে থাকা ১২শ’র মতো রোগীর সবাইকে সরিয়ে নিতে হয়; এর মধ্যে আইসিইউতে থাকা মুমূর্ষু ১০ জন রোগীও ছিলেন। কিন্তু এই রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে আগুন লাগার কারণে মহা বিপর্যয় ঘটতে পারতো। কারণ, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের কারো সাহায্য ছাড়া নড়ার ক্ষমতা থাকে না।
এই অবস্থায় তাদের কী দুর্গতি হয়েছে তা সহজেই অনুমান করা যায়। আগুন লাগা নিয়েও ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য ওঠে এসেছে বিভিন্ন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার কথায়। হাসপাতালের পরিচালক তৃতীয় তলার শিশু ওয়ার্ড থেকে আগুনের সূত্রপাতের কথা বললেও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান বলেছেন: ‘আগুন প্রথমে লেগেছিল নিচ তলার স্টোর রুমে। সেখান থেকে তা উপরে ছড়িয়ে পড়ে।’
শুক্রবার মন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানিয়েছেন তদন্তের পর পুরো বিষয় সম্পর্কে জানা যাবে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। অচিরেই এই পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের অবসান ঘটবে বলে আমরা আশা করি।
তবে আশার কথা হচ্ছে, সাধারণ জনগণসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ যেভাবে এখানে এগিয়ে এসেছেন তা আমাদের সাহস যোগায়। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ডাক্তাররা অসম সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। তারা নিজের প্রাণ তুচ্ছ করে বাঁচিয়েছেন শত মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ। চিকিৎসকদের এই প্রাণ রক্ষা কর্মসূচি নৈমিত্তিক। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের হট্টগোলের মধ্যে সবাই যেখানে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে সেখানে ডাক্তারদের এই ভূমিকা প্রশংসনীয়।
মানুষের সেবা দেয়ার এসব প্রতিষ্ঠানে অগ্নিঝুঁকি কমিয়ে আনা ও যথাসময়ে নিয়ন্ত্রণে আনা সর্বপ্রথম কাজ। যা এই হাসপাতালের অগ্নি নিয়ন্ত্রণ করে দেখিয়েছে উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ব্যাপক প্রাণহানীর আশংকা থাকলেও এই রকম কিছু ঘটার আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন: ‘এটা আমাদের জন্য একটা শিক্ষা। দেশের সব হাসপাতালের অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকায়নের পাশাপাশি বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলো পরীক্ষা করা হবে। আমাদের অনেক হাসপাতাল পুরানো হয়ে গেছে। আমাদের ফায়ার ফাইটিং যে সিস্টেম আছে সেগুলোর আরও আধুনিকায়ন প্রয়োজন এবং বাংলাদেশের সকল হাসপাতালে বৈদ্যুতিক যে তার বা যন্ত্রপাতি আছে, সেগুলোকে চেক করা দরকার।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ কথায় আমরা আশ্বস্ত হতে চাই। মন্ত্রীর এ ঘোষণা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এসব স্থাপনায় আরও নিরাপদ পরিবেশ তৈরির জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।