ভারতে একটি হত্যা মামলায় সে দেশের আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে ১০ বছর সাজা খাটার পর এখন বাংলাদেশের কারাগারে বন্দী বাদল ফরাজীর মুক্তির নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার রিটটি উত্থাপন হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন।
এর আগে গত ৮ জুলাই ঢাকার কারাগারে বন্দী বাদল ফরাজীর মুক্তির নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব ও ব্যারিস্টার কাউছার।
সেই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বুধবার রিট খারিজ করে আদেশ দেন। আদেশের সময় হাইকোর্ট বলেন, ভারতের আদালতের রায়ে দেখা যাচ্ছে তারা তাদের দেশের ওই হত্যা মামলায় বাংলাদেশের বাদল ফরাজীকেই সাজা দিয়েছে। তবে আমরা দেখতে পারছি সরকার তার বিষয়ে পজেটিভ। সরকার পদক্ষেপ নিয়ে বাদল ফরাজীকে সেখানকার জেল থেকে এদেশের জেলে নিয়ে এসেছে। এখন তার মুক্তির ব্যাপারে সরকারই হয়ত কোন পদক্ষেপ নেবেন। এক্ষেত্রে সরকারের প্রতি বাদল ফরাজীর মুক্তির জন্য কোন নির্দেশনা দেয়া আমাদের ঠিক হবে না। তাই আমরা রিটটি উত্থাপন হয়নি মর্মে খারিজ করছি।
ঘটনার বিবরণ থেকে যানা যায়, ২০০৮ সালের ৬ মে দিল্লির অমর কলোনিতে এক বৃদ্ধাকে খুনের অভিযোগে বাদল সিং নামে এক ব্যক্তিকে খুঁজছিল সে দেশের পুলিশ। ওই আসামীকে ধরতে তখন সীমান্তে সতর্কতাও জারি করা হয়।
বাগেরহাটের মংলা বন্দর সংলগ্ন ফারুকি রোডের বাসিন্দা আবদুল খালেক ফরাজি ও শেফালি বেগমের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে বাদল ফরাজির ইচ্ছা হয় তাজমহল দেখার৷ সেই ইচ্ছা পূরণের জন্য ২০০৮ সালের ১৩ জুলাই দুপুরে বেনাপোল ইমিগ্রেশন কার্যালয়ে সব প্রক্রিয়া শেষ করে ভারতের হরিদাসপুর সীমান্তে প্রবেশ করে বাদল।
এরপর তাকে আটক করে ভারতের বিএসএফ৷ হিন্দি বা ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে না পারায় বাদল বিএসএফের কর্মকর্তাদের বোঝাতেই পারেননি যে, খুনের অভিযোগ তারা যে বাদলকে খুজছে সে তিনি নন!
পরবর্তীতে দিল্লির অমর কলোনির বৃদ্ধাকে খুনের মামলায় ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট বাদল ফরাজিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় দিল্লির আদালত৷ এরপর দিল্লি হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের সে রায় বহাল রাখে৷ বাদল ফরাজির স্থান হয় দিল্লির তিহার জেলে৷
এরপর বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহায়তায় হাইকোর্টের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন বাদল৷ কিন্তু ভারতের সুপ্রিমকোর্ট বাদল ফরাজির আবেদন খারিজ করে দেয়৷ এর মধ্যেই দিল্লির তিহার জেলে কেটে যায় বাদল ফরাজির বন্দী জিবনের ১০ বছর।
অবশেষে বাংলাদেশে সরকার বন্দি বিনিময় চুক্তির অধীনে গত ৬ জুলাই বাদল ফরাজীকে দেশে ফিরিয়ে আনে। তারপর তাকে নেয়া হয় কেরানিগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। বাদল ফরাজিরা পাঁচ ভাই-বোন৷ তার বাবা বেঁচে নেই।