সোলিহাত তার তিন বন্ধুকে নিয়ে একবারে তৈরি হয়ে ইন্দোনেশিয়ার বানতেন প্রদেশে সমুদ্র সৈকতে এসে দাঁড়িয়েছেন পারফেক্ট একটা সেলফি তোলার জন্য।
সবার পরনে ঝকমকে পোশাক। দলের একজন তো আঙ্গুল দিয়ে শান্তির প্রতীক ‘ভি’ চিহ্নও দেখিয়ে দিলেন।
সেলফিটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এর পটভূমি, যার জন্য ছবিটি অনেক বেশি লাইক-রিয়্যাকশন পাবে। কারণ সেই পটভূমিতে আছে এক ধ্বংসস্তুপ, শনিবার রাতের সুনামির আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া যানবাহনসহ অন্যান্য সরঞ্জামের ধ্বংসাবশেষ, যা ঢেউ ভাসিয়ে এনে রেখে গেছে।
যে সুনামিতে প্রায় ৫শ’ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় ১৫শ’ মানুষ। নিখোঁজ দেড়শ’র বেশি। যে কোনো সময় আঘাত করতে পারে আরেক দফা সুনামি।
সোলিহাতরা যেখানে সেলফি তুলতে দাঁড়িয়েছিলেন সেখানে আসলে কিছু দূরে অবস্থিত বিশাল একটি খামারবাড়ি থেকে ভাসিয়ে আনা ট্রাক্টরসহ নানারকম চাষাবাদের যান ও অন্যান্য সরঞ্জাম দুমড়েমুচড়ে স্তুপ হয়ে পড়ে আছে। সুনামির শক্তিশালী জোড়া ঢেউয়ের তোড়ে আজ তাদের এই হাল।
তার আবার ঠিক পেছনেই রয়েছে সুন্দা প্রণালি, যেখানে সৃষ্টি শনিবারের সুনামির।
আর এজন্যই জায়গাটিতে ভিড় জমাচ্ছে মেয়েদের ওই দলটির মতোই বিপুল সংখ্যক লাইকপ্রেমী সেলফি শিকারীরা। অনেকেই বহু ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে এই এলাকায় আসছে শুধু ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে সেলফি তুলে অনলাইনে দ্রুত শেয়ার দেয়ার আশায়।
৪০ বছর বয়সী সোলিহাত জানান, তিনি এবং তার বন্ধুরা ইন্দোনেশিয়ার কিলেগন শহর থেকে দু’ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে ঘটনাস্থলে এসেছেন। তারা কিলেগনের নারীদের একটি ইসলামিক গ্রুপের সদস্য হিসেবে সুনামিতে বাস্তুহারা মানুষদের পোশাক বিতরণ করতে এসেছিলেন।
‘এই সেলফিটা ফেসবুকে পোস্ট করব প্রমাণ হিসেবে যে আমরা আসলেই এখানে এসেছিলাম এবং ত্রাণ দিয়েও গেছি,’ ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানকে বলেন তিনি।
এসব পরিস্থিতিতে সেলফি তোলাকে অনেকেই সঙ্কীর্ণতা মনে করলেও এর প্রতিবাদ করে সোলিহাত বলেন, ধ্বংসে ভরা পটভূমি ছবিকে অনেক বেশি গভীরতা দেয়।
‘মানুষ যখন ছবিতে বিনাশ দেখবে তখন উপলব্ধি করবে তারা এরচেয়ে কত ভালো আছে। ধ্বংস-বিধ্বস্ততার ছবি অনেক বেশি লাইক পায়। হয়তো এর কারণ এসব ছবি মানুষকে নিজের অবস্থা নিয়ে আরও কৃতজ্ঞ হতে সাহায্য করে,’ বলেন তিনি।
কিন্তু এমন একটি দুর্যোগের পর যে পানিতে হয়তো লুকিয়ে আছে অসংখ্য লাশ, সেই পানির সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলা কতটা উচিত – এমন প্রশ্নের জবাবে সোলিহাত বলেন, এটা নির্ভর করে মানুষের উদ্দেশ্যের ওপর। ‘আপনি যদি শুধু বড়াই করার জন্য সেলফি তোলেন, তবে তা না করাই উচিত। কিন্তু যদি আপনি কষ্ট শেয়ার করার জন্য তোলেন তাহলে ঠিক আছে।’
তবে সুনামির পর থেকে যতজন সেলফি শিকারী সৈকতে এসেছে, তাদের বেশিরভাগের আচরণেই মনে হয়নি তারা কোনো দুঃখ শেয়ার করতে এসেছে।
যেমন, ১৮ বছর বয়সী ভ্যালেন্তিনা আনাস্তাসিয়া ছুটির দিনে তিন ঘণ্টা জার্নি করে বানতেনে এসেছেন বিধ্বস্ত এলাকা ও ভুক্তভোগীদের দেখতে। হাসতে হাসতে জানিয়েছেন অসংখ্য ছবি তুলেছেন তিনি, যেগুলো ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা হবে।
অনেককে আধঘণ্টা থেকে একঘণ্টা শুধু সেলফি তোলার উপযুক্ত জায়গা খুঁজে বেড়াতে দেখা গেছে।
স্থানীয় ভুক্তভোগী এবং উদ্ধারকারীরাও বিষয়টিতে খুব বিরক্ত এবং হতাশ বলে জানিয়েছেন গার্ডিয়ানের কাছে।