দয়ালু ও দয়াবান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ঘোষণা করেন-“নিশ্চয় আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য ধর্ম একমাত্র ইসলাম”(আলে ইমরান-১৯)। আর এ ইসলাম ধর্মের যতগুলো পালনীয় ও করণীয় বিষয়ে তাগিদ প্রদান করা হয়েছে, সকল বিষয়ের পেছনে গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক কারণ সংরক্ষিত রয়েছে।
ধৈর্য, যা মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মানব চরিত্রের উত্তম গুণাবলির অন্যতম হলো ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা। “ধৈর্য” এর আরবি প্রতিশব্দ হলো “সবর”। ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা পাশাপাশি গোত্রীয় শব্দ। পবিত্র কুরআনুল কারিমে ও হাদিসে রাসুলে এ বিষয়ে অগণিত বর্ণনা পাওয়া যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-“আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষা করবো। আপনি ধৈর্যশীলদের শুভ সংবাদ দিন” (বাকারাহ- ১৫৫)। আল্লাহ তা‘আলা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তাঁর নিকট প্রার্থনা করার জন্য অন্যত্র ইরশাদ করেন, “হে মুমিনগণ, তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন” (বাকারা ১৫৩)। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন-“আল্লাহ তা‘আলা ধৈর্যের চেয়ে উৎকৃষ্ট এবং ব্যাপকতর দান কাউকে দেননি” (সুনান আবু দাঊদ)।
আমরা যদি ইসলামের ইতিহাসকে একটু গভীরভাবে খেয়াল করি ও নবী-রাসুলগণের জীবন চরিত্র লক্ষ্য করি, তাহলে চমৎকার ও সুন্দর সুন্দর ‘‘ধৈর্য’’ বিষয়ে উদাহরণ পেয়ে যাবো। হযরত নূহ আলাইহিস সালাম, যিনি প্রায় ৯০০ বছর উম্মতদের আল্লাহর পথে দাওয়াত প্রদান করেছিলেন, কিন্তু কেবল ৭০-৮২জন ঈমান গ্রহণ করেছিল। হযরত হুদ আলাইহিস সালাম, যাকে সামুদ জাতির নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদ প্রচারের কারণে আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। হযরত সালেহ আলাইহিস সালাম, যাকে সামুদ সম্প্রদায়ের নিকট পাঠানো হয়েছিল। হযরত মুসা আলাইহিস সালাম একমাত্র সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করার জন্য ঘোষণা করায় ফেরাউন কর্তৃক নানাহ লাঞ্ছনার মুখোমুখী হয়েছিলেন। মূলতঃ সকল নবী ও রাসুলগণের জীবনে “ধৈর্য” অনুশীলন স্পষ্ট হয়।
মাহে রমজান, যা কুরআন নাজিলের মাস, ইবাদত-বন্দেগীর মাস। এ মাসের মোটা দাগের একটি ইবাদতের নাম হলো “সিয়াম সাধনা”। যা ফরজ করা হয়েছে। আর সিয়াম সাধনা ও ধৈর্য অনুশীলনের মধ্যে একটি চমৎকার সম্পর্ক বিদ্যমান। এ প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “রমযান ধৈর্য অনুশীলনের মাস। আর ধৈর্য্য প্রতিদান জান্নাত” (মিশকাতুল মাসাবীহ : কিতাবুস সওম)।
ধৈর্যের ফজিলত উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-“আল্লাহর জমিন প্রশস্ত, ধৈর্যশীলদের অপরিমিত প্রতিদান প্রদান করা হবে”(আল জুমার- ১০)। অন্য আয়াতে আল্লাহ পাক পুরষ্কারের ঘোষণা দেন এভাবে, “যারা ধৈর্যধারণ করে নিশ্চই আমি তাদেরকে তাদের কর্মাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার দান করব” (নাহ্ল- ৯৬)। একজন মুমিনের বড় চাওয়া হলো আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া। ধৈর্যশীদের আল্লাহ স্বয়ং ভালোবেসে থাকেন। ইরশাদ হচ্ছে- “আল্লাহ তা‘আলা ধৈর্যশীলদের ভালবাসেন” (আল ইমরান-১৪৬)।
রমজান আমাদেরকে মাসব্যাপী ধৈর্য্যের অনুশীলন করায়। আমাদেরকে ধৈর্যের শিক্ষা দিয়ে থাকে। ধৈর্যধারণ করার ফলাফল কতটা সুমিষ্ট, মধুর সেটাও রমজান আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। পুরো বছরের জীবন-যাপনে কীভাবে ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিতে হবে সেটা রমজান আমাদেরকে হাতে-কলমে শিক্ষা দিয়ে থাকে।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে পবিত্র রমযান মাসে ধৈর্যের সফল অনুশীলন শেষে পুরো বছরে ধৈর্যশীলতার উৎকৃষ্ট পরিচয় দেওয়ার তৌফিক দান করুন, আমিন।