বঙ্গবন্ধু বিপিএলে লিগ পর্বের ম্যাচ যত শেষ দিকে, পয়েন্ট টেবিলে তত হিসেব-নিকেশ। জয়-পরাজয়ের খেরোখাতার সমাধান টানা অনেকটা বাকি থাকলেও ফরচুন বরিশাল ইতোমধ্যে নিশ্চিত করেছে সেরা চার। সিলেট সানরাইজার্সকে ৪ উইকেটে হারিয়ে কোয়ালিফাইয়ের পথে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সও এগোল আরেক ধাপ।
বুধবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দিনের দ্বিতীয় খেলায় দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা লড়েছিল তলানির দল সিলেটের বিপক্ষে। ১৭০ রানের লক্ষ্য শেষ ১২ বলে ২২ রানের সমীকরণে দাড়ায়। কুমিল্লার সুনিল নারাইন অঙ্কটা চুকিয়ে ফেলেন ১ বল বাকি থাকতেই। ১২ বলে তিন চার এক ছক্কায় ক্যারিবিয়ান স্পিন অলরাউন্ডার অপরাজিত থাকেন ২৪ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: সিলেট সানরাইজার্স (১৬৯/৫), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স (১৭৩/৬); ম্যাচ সেরা: মাহমুদুল হাসান জয় (৫০ বলে ৬৫ রান) (কুমিল্লা)
টেবিলের শেষ চারে যাওয়ার পথ দুই ম্যাচ হাতে রেখে অনেকটা নিশ্চিত করেছে কুমিল্লা। তালিকায় দুইয়ে থাকা দলটি ৮ ম্যাচে সংগ্রহ করেছে ১১ পয়েন্ট। কোয়ালিফাই করে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে সাকিবের ফরচুন বরিশাল। তিনে ৯ পয়েন্ট নিয়ে ঢাকা। চার ও পাঁচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে যথাক্রমে খুলনা ও চট্টগ্রাম।
কলিন ইনগ্রামের ব্যাটে বড় সংগ্রহ পাওয়ার দিনে সিলেটের বোলাররা লড়াইটা ধরে রেখেছিল শেষ পর্যন্ত। শেষের দিকে ওভারপ্রতি ১২ রানের অধিক প্রয়োজনে দাবি মেটাতে কিছুটা হলেও নাকাল হয়েছিল কুমিল্লা। অন্যতম ফেবারিট দলটির জয় পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল শেষ বলের আগ পর্যন্ত।
১৭০ রানের লক্ষ্যে শুরুতেই হোঁচট খায় কুমিল্লা। ১১ রানের মাথায় ৭ রান করে ফেরেন লিটন দাশ। প্রোটিয়া অভিজ্ঞ ব্যাটার ফাফ ডু প্লেসিও হন ব্যর্থ। ৫ বলে ২ রান করে ফেরেন নাজমুল ইসলামের ঘুর্ণিতে।
২২ রানে ২ উইকেট হারানো দলকে বড় জুটি গড়ে পথ দেখান মঈন আলী ও মাহমুদুল হাসান জয়। ৩৫ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৪৬ রানে ফেরে ইংলিশ অলরাউন্ডার মঈন। ৮ বলে ১৬ রান করেন অধিনায়ক ইমরুল কায়েস।
অপরপাশে ৬৫ রানের ইনিংসে দলকে জয়ের পথ দেখান জয়। ফেরার আগে ৫০ বলে ইনিংস সাজান সাত চার আর দুই ছক্কায়।
শেষ দিকে, ওভারপ্রতি ১২ রানের বেশি প্রয়োজন হলে হাত খুলে মারেন ছয়ে নামা সুনিল নারাইন। ক্যারিবিয়ান ১২ বলে ২৪ রান করে দলের জয় নিশ্চিত করেন। ৪ বলে ৬ রানে অপরাজিত থাকেন আবু হায়দার।
নিজের কোঠার শেষ ওভার ভালো না হলেও ৪ ওভারে একটি উইকেট নিয়েছেন স্বাধীন। তাসকিনের বদলি পেসার খরচ করেছেন ২৯ রান, যার ৫০ শতাংশই ১৯তম ওভারে। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন নাজমুল ইসলাম এবং আলাউদ্দিন বাবু।
এর আগে, টস হেরে ব্যাটিংয়ে শতরান ছাড়ানো জুটি গড়েন সিলেটের দুই ওপেনার এনামুল-ইনগ্রাম। প্রথম ছয় ওভারে ৫০ রান করা দল শতরান ছুঁয়ে ফেলে ১০.৫ ওভারেই। বড় স্কোর গড়ার দিনে টেবিলের তলানীর দলটি প্রথম ধাক্কা খায় যখন দলীয় স্কোর ১০৫ রান।
ব্যক্তিগত ৪৬ রানে মোস্তাফিজের শিকার হন ওপেনার এনামুল হক। ৩৩ বলের ইনিংসে উইকেটরক্ষক ব্যাটার হাঁকান তিনটি ছক্কা ও চারটি চার। গত ম্যাচে একাদশে জায়গা না পাওয়া সিমন্স ব্যাট করেন তিন নম্বরে। পরিস্থিতির দাবি মেটাতে পারেননি। ১৩ বলে ১৬ রান করে ফেরেন ক্যারিবিয়ান হার্ডহিটার।
অধিনায়ক বোপারা এদিনও ব্যর্থ হন। বিপিএলে বল টেম্পারিং কাণ্ডে বিতর্কিত এই ইংলিশম্যানের ব্যাট থেকে আসে ১ রান। অন্যপাশ আগলে রানের চাকা সচল রাখেন ইনগ্রাম। রান তোলার শুরুর গতি মাঝের দিকে স্লথ হয়ে আসলেও বড় স্কোর গড়তে ভূমিকা রাখেন তিনি। নয়টি চার ও তিনটি ছক্কায় প্রোটিয়া ব্যাটার করেন ৮৯ রান। একদিন আগে সাকিবের বরিশালের বিপক্ষে তার ব্যাট থেকে এসেছিল ৯০ রান।
ছক্কা হাঁকাতে পারদর্শী আলাউদ্দিন বাবুকে নামানো হয় একটু উপরে। ঠিকঠাক মান রাখতে না পারলেও ফেরার আগে করেছেন ৮ বলে ১০ রান। ১ বলে ১ রানে অপরাজিত ছিলেন দলটির সাবেক অধিনায়ক মোসাদ্দেক।
ব্যাটারদের দিনে কুমিল্লার বোলাররা দারুণ ফিনিশিং টেনেছেন। ৪ ওভারে ২৩ রান খরচায় তিন উইকেট তুলেছেন মোস্তাফিজ। টাইগার পেসারের শিকার হয়েছেন কলিন ইনগ্রাম, বাবু ও এনামুল হক। একটি করে উইকেট তুলেছেন নারিন ও তানভির ইসলাম।