সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার আত্মজীবনী প্রকাশের পেছনে কারা রয়েছে তা খুঁজে বের করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে জানি, কিন্তু আপনাদের বলবো না। বরং আপনাদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে জানতে চাই এবং আমি চাই এই বই প্রকাশের পেছনে কারা রয়েছে তা আপনারা খুঁজে বের করবেন।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে তার অংশগ্রহণ সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিচারপতি সিনহার লেখা আত্মজীবনী সম্প্রতি আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। এতে সাবেক প্রধান বিচারপতি তার পদত্যাগের বিভিন্ন কারণ তুলে ধরেছেন। ‘এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ শীর্ষক এই বইয়ের কপিরাইট হচ্ছে ললিতমোহন- ধনাবাতি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের নামে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে এই বইয়ের প্রকাশনা উৎসবের কথা রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি কতবার বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে আনা হয় তা সাংবাদিকদের খুঁজে বের করতে হবে। এই বই প্রকাশনায় কারা অর্থ দিয়েছে এবং আপনাদের মতো কোন সংবাদপত্রের সাংবাদিক এর সঙ্গে জড়িত কিনা এবং কী পরিমাণ অর্থ দিয়েছে তা অনুগ্রহ করে উন্মোচন করুন। কোন বড় আইনজীবী এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি সংশোধন করে দিয়েছেন কিনা অথবা কোন সংবাদপত্র অথবা এর মালিক এর পৃষ্ঠপোষক কিনা তা আপনারা খুঁজে বের করুন।
যুক্তরাষ্ট্রে সিনহার ভাইয়ের নামে একটি বাড়ি ক্রয় সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে বাড়ি কেনা কঠিন কিছু নয়। বিপুল দামের কারণে বাংলাদেশে কেনা কঠিন। অর্থ জমা করলে যুক্তরাষ্ট্রে যেকোন ব্যক্তি বাড়ি কিনতে পারেন। কে এবং কিভাবে এই বাড়ি ক্রয় করেছে সে ব্যাপারে আমার কাছে কোন তথ্য নেই। আপনারা খুঁজে বের করুন এবং তথ্য দিন। যদি কোন ব্যক্তি এ ব্যাপারে দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনের সময় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সরকার গঠন করা হতে পারে। আমি বিরোধী দলীয় নেত্রীর (রওশন এরশাদ) সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছি। তারা যদি চান আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সকল রাজনৈতিক দল যদি চায় তাহলে আমরা তাদের প্রতিনিধি নিয়ে সরকার গঠন করতে পারি। তারা ক্ষমতাসীন অথবা বিরোধী দল কিনা সেটা কোন বিষয় না। তবে নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে এখানে কোন সংজ্ঞা নেই।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী সাইবার অপরাধ এখন একটি আলোচ্য বিষয়। সকল দেশ এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে এই আইন প্রণয়ন করেছি, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নয়। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পর সাইবার অপরাধ এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাংবাদিকদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা সবসময় আইনের শুধু একদিক দেখেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদেও সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সবাই এ ব্যাপারে শঙ্কিত। কারণ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কার্যক্রমকে সাইবারের মাধ্যমে উস্কে দেয়া হয়। শিশু থেকে তরুণ পর্যন্ত সবাই যখন ভুল পথে চলে যাচ্ছে অথবা মানসিক ভারসাম্যতা হারিয়ে ফেলছে, তখন বিভিন্ন সামাজিক ও ডিজিটাল মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য কিনা? যদি কোন সাংবাদিক সুষ্ঠু সাংবাদিকতার চর্চা করেন তাহলে তিনি কেন শঙ্কিত হবেন?