প্রতারণায় অভিযুক্ত রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে ডিএমপির গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক র্যাবে (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
বুধবার বিকাল ৩ টার দিকে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় র্যাব হেডকোয়ার্টারে নানান প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
আল মামুন বলেন, প্রতারণার অভিযোগে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার সাহেদসহ প্রতিষ্ঠানে ১৭ জনের বিরুদ্ধে র্যাব বাদি হয়ে যে মামলাটি দায়ের করেছিল, সেটি ডিএমপির গোয়েন্দা ডিবি পুলিশের তদন্ত করছে। আমরা গ্রেপ্তার সাহেদকে সেখানেই হস্তান্তর করে দিবো।
তিনি বলেন, ‘রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের উত্তরায় আরেকটি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা মূল্যের জালনোট উদ্ধার করে র্যাব।
এছাড়াও সাহেদ বালু ব্যবসায়ী, পাথর ব্যবসায়ী ও রিকশা চালকদের ভুয়া লাইসেন্স দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। এছাড়াও সাহেদ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সুকৌশলে ছবি তুলে বিভিন্ন প্রতারণার কাজে ব্যবহার করতো।’
“বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোডের ৬২ নম্বর বাসায় গ্রেপ্তার সাহেদ করিমের ও রিজেন্টের এমডি মাসুদ পারভেজ গাজীকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে এই জালনোট উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার সাহেদ নিজেকে সুশীল ও ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করলেও প্রকৃতি পক্ষে চতুর, ধুরন্দর লোক। সাহেদ এমএলএম কোম্পানির নামে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে৷ তার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় অনেক মামলা রয়েছে। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখছি তার বিরুদ্ধে অর্ধশত মামলা থাকার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো যাচাই বাছাই করে দেখছি।”
আল মামুন আরও বলেন, সম্প্রতি গ্রেপ্তার সাহেদ রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার নামে প্রতারণার কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
গ্রেপ্তার সাহেদ পলাতক ছিলেন ৯ দিন এসময় তিনি কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জাববে র্যাব ডিজি বলেন, সাহেদের বিরুদ্ধে যে পরিমাণ প্রতারণার মামলা রয়েছে। তা দিয়ে বোঝা যায় সে কি ধরণের প্রতারক। সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থান পরিবর্তন করেছে। আমরাও তাকে ফলো করেছি। ফলো করতে পেরেছি বলেই আমরা আজ সফল হয়েছি।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার এড়াতে সাহেদ বিভিন্ন সময় ঢাকা ছেড়েছে, এবং আবার ঢাকায় এসেছে। এক্ষেত্রে সে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি, পাবলিক পরিবহন এমনকি ট্রাকে করেও বিভিন্ন স্থানে গিয়েছে। সে একেক সময় একেক ধরণের যানবাহন ব্যবহার করেছে। সর্বশেষ সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকায় নৌকা দিয়ে পার হওয়ার সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার নামে প্রতারণা এবং ‘করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা এবং বাড়িতে থাকা রোগীদের করোনার নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগে সম্প্রতি র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের প্রথমে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর সড়কে অবস্থিত রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। সেখান থেকে ৮ জনকে আটকের পর র্যাবের দলটি মিরপুরে রিজেন্টের অন্য শাখায় অভিযান পরিচালনা করে।
সেসময় র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ‘করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা এবং বাড়িতে থাকা রোগীদের করোনার নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট প্রদান করত রিজেন্ট হাসপাতাল।’
‘‘এছাড়াও সরকার থেকে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ টেস্ট করার অনুমতি নিয়ে রিপোর্টপ্রতি সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকার করে আদায় করত তারা। এভাবে জনগণের সাথে প্রতারণা করে মোট তিন কোটি টাকার হাতিয়েছে রিজেন্ট। এই সমস্ত অপরাধ ও টাকার নিয়ন্ত্রণ চেয়ারম্যান সাহেব (রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ) নিজে করতেন অফিসে বসে।’’
সারোয়ার আলম আরও বলেন, ‘রিজেন্টের প্রধান কার্যালয় থেকেই এই অপকর্মগুলো হতো বিধায় এটি সিলগালা করা হয়েছে। পাশাপাশি রোগীদের স্থানান্তর করে হাসপাতাল দুটিও সিলগালা করা হয়েছে।’
এ ঘটনায় গত ৭ জুলাই রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদসহ ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। মামলায় আটককৃত ৮ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সাহেদসহ ৯ জনকে পলাতক আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।