রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থা এখন স্থিতিশীল। জাতীয় নির্বাচনের পর সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সাথে নিয়ন্ত্রণ করছে রাজনৈতিক পরিবেশ। মূলত আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র ক্ষমতা রয়েছে সংসদের ভেতরে এবং বাইরে।
দেশের মানুষের কাছে রাজনৈতিক দল বলতে একসময় ছিল শুধু আওয়ামী লীগ আর বিএনপি। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে বিএনপি তার অবস্থান ক্রমশ হারাতে থাকে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে। বেগম জিয়া কারাগারে। তারেক জিয়া দেশ ছাড়া। দলের বাকী নেতানেত্রীরা ব্যর্থ হয়েছে রাজনীতির মাঠে থাকতে মামলা হামলা ও রাজনৈতিক অদূরদর্শীতার কারণে।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত সময়ে জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসাবে সংসদে ছিল নামমাত্র। বর্তমানে দলের চেয়ারম্যান এরশাদের মৃত্যুর পর দলের নেতৃত্ব নিয়ে চলছে টানাপোড়ন। এমন পরিপ্রেক্ষিতে জনগণ মনে করে দেশে এখন রাজনৈতিক দল বলতে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো দল নেই ।
বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ’সহ অন্যান্য দলগুলো নিজেদের দলীয় কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ অনেকটা।তাছাড়া জনগণের জন্য রাজনীতির মাঠে নামার মত শক্তি তাদের নেই। সে কারণে সরকারি দলের বাইরে অন্য দলগুলোর রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে মানুষের তেমন মাথা ব্যাথা নেই। কারণ তারা জানে সরকারের কাজের সমালোচনা করার মত বিরোধী শক্তি হিসাবে কেউ নেই। বরং আওয়ামী লীগের সাধারণ সর্মথকরাই নিজের দলের নেতানেত্রীদের সফলতা ব্যর্থতা নিয়ে সোচ্চার হয় এখন। যার প্রতিফলন দেখা যায় গণমাধ্যমসহ নানা সামাজিক মাধ্যমে।
তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বর্তমান বাংলাদেশে বারবার যে বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে তা হলো- সামাজিক অস্থিরতা। রাজনৈতিক স্থবিরতায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সামাজিক অস্থিরতা। জনজীবনে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে নানা কারণে। সে কারণগুলো এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করে যে, মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ।
আর এসব সমস্যা আকারে প্রকারে যেমনই হোক; তার সমাধানের জন্য দ্বারস্থ হতে হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। তিনি ছাড়া সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী পরিষদ, সাংসদ বা স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কেউ সুষ্ঠুভাবে সমাধান দিতে পারে না ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর সমস্যার। এ যাবতকালে কেবল শেখ হাসিনার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত ও দূরদর্শিতার কারণেই দেশের জনগণ বেশ কিছু হানাহানি, ধ্বংসাত্মক ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পেয়েছে।
যেখানে সরকার দেশ ও মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নে বদ্ধপরিকর; সেখানে জনজীবনে নিরাপত্তাহীনতার শংকা কোন ভালো লক্ষণ নয়।
সামাজিক এ অস্থিরতা যদি বাড়তে থাকে, তবে তা আওয়ামী সরকারের জন্য আগামীতে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াবে। রাজনৈতিকভাবে কেউ স্বীকার করুক আর নাই করুক এটাই সত্য।
সুতরাং সাময়িকভাবে কোনো সমস্যার সমাধান দেবার পাশাপাশি তা সমূলে নির্মূলের ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। তা না হলে কোনো না কোনো ভাবে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা থাকে শতভাগ।
দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের সাথে সাথে জনগণের মানবিক নৈতিক তথা আত্মিক উন্নয়ন দরকার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, দেশের মানুষের মধ্যে আত্মিক উন্নয়ন তেমনভাবে পরিলক্ষিত হয় না। বরং সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে বাড়ছে বে আইনী ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড। অমানবিক আর পাশবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে প্রতিদিন কোনো নারী, পুরুষ কিংবা শিশু।
মানুষ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত হলেই যে বিবেক বোধ জ্ঞানসম্পন্ন হয় তা কিন্তু নয়৷ যার জলন্ত উদাহরণ হলো সোনাগাজীর নুসরাত আর ছেলেধরার নামে মানুষ হত্যার ঘটনা। সমাজের অনেক শিক্ষিত মানুষ ধর্ষণের মত নারকীয় ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে ঘরের বাইরে নারী অনিরাপদ৷
যদিও মশার বিস্তার কমাতে এ বিষয়টি যে সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সে সাথে ময়লা আর্বজনা পরিস্কারে ও যে তেমনভাবে কাজ করে না সে দায় স্বীকার না করলেও এটাই সত্যি। কারণ এ বিষয়গুলো নিয়ে এলাকার জনগণ নানা সময়ে অভিযোগ করে আসছে বেশ ক’বছর ধরে।
স্বভাবজাতভাবে এই অঞ্চলে অন্যের দোষ খুঁজতে মানুষ যেমন ভালোবাসে তেমনি চিলে কান নিয়ে গেছে বলে দৌঁড়াতে থাকে। যার কারণে নানা সময়ে নানা হুজুগে অস্থির হয়ে যায় সমাজের মানুষ। এতে করে যে দেশের সামগ্রিক অবস্থা বিপন্ন হতে পারে তা চিন্তা করে না।
সুতরাং সমসাময়িক কালের সামাজিক অস্থিরতা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে সরকারের বিপক্ষে যে কেউ মানুষকে আরো উস্কে দিতে পারে; তা ভাবতে হবে আওয়ামী সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সকলকে। সে সাথে ভুলে গেলে চলবে না সামাজিক অস্থিরতার কারণে মানুষের মনে সরকারের প্রতি আস্থার অভাব দেখা দিতে পারে।
আর এতে করে সরকারের সকল সফলতা ম্লান হয়ে যাবে। অতএব সরকারের প্রতিটি সেক্টরকে সবার আগে আশ্বস্ত করতে হবে জনগণের সুস্থ ও সুনিশ্চিত জীবন।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)