সাবেক বাঁহাতি স্পিনার রামচাঁদ গোয়ালা মারা গেছেন। শুক্রবার ভোরে ময়মনসিংহের ব্রাহ্মপল্লির নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বরেণ্য এ ক্রিকেটার। গত বছর স্ট্রোকের পর থেকে নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
তিনি পরিচিত সবার প্রিয় ‘গোয়ালাদা’ বলে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে বাঁহাতি স্পিনের রাজত্বের শুরুটা তাকে দিয়েই। আবাহনীতে একটানা ১৫ মৌসুম খেলেছেন। মোহামেডান, ভিক্টোরিয়া, টাউন ক্লাব, শান্তিনগরেও খেলেছেন তিনি। ৫৩ বছর বয়সে খেলা ছেড়েছেন ঢাকা লিগে মাঠ দাপিয়ে!
খেলা ছেড়ে কোচিংয়েও যুক্ত হয়েছিলেন রামচাঁদ। লাল-সবুজের জাতীয় দল তারকা, বর্তমান টি-টুয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তারই ছাত্র।
মৃত্যুঞ্জয় স্কুলে পড়ার সময় ১৪ বছর বয়সে ক্রিকেটে ছাপ রাখতে শুরু রামচাঁদের। ঢাকায় ভিক্টোরিয়ার হয়ে খেলা শুরুর পর আলোচনায় আসতে থাকেন। পরে হয়ে যান ‘আবাহনীর গোয়ালা’। শেষ মোহামেডানে।
৫৩ বছর বয়স পর্যন্ত ঢাকা লিগে খেলার কীর্তি দেশের ক্রিকেটে আর নেই। গোয়ালা যেমন রকিবুল হাসান, শফিকুল হক হীরাদের প্রজন্মে খেলেছেন, খেলেছেন গাজী আশরাফ হোসেন, জাহাঙ্গীর শাহ বাদশাদের প্রজন্মের সঙ্গেও, শেষে আকরাম খান, আমিনুল ইসলাম বুলবুলদের প্রজন্মেও ছাপ রেখে গেছেন।
রামচাঁদের বাবা ছিলেন ময়মনসিংহের সহকারী পোস্টমাস্টার। বাবার ইচ্ছাতেই ক্রিকেটে ঝোঁক। মিশন স্কুলের ছাত্র রামচাঁদ সেসময় সুযোগ পেলেই ছুটতেন সার্কিট হাউস মাঠে। শুরুতে করতেন বাঁহাতি পেস বোলিং। পরে হয়ে যান বাঁহাতি স্পিনার! কৈশোরের কোচ ফখরুদ্দিন আহমেদের পরামর্শে স্পিন শুরু করেন। ১৯৬২ ঢাকা লিগে যখন ভিক্টোরিয়ার জার্সিতে অভিষেক, স্পিনার হিসেবেই যাত্রা।
ঢাকায় তো খেলেছেনই, কলকাতায় গিয়েও অনেক আনঅফিসিয়াল ম্যাচে খেলেছেন তিনি। ইডেনে ১৯৮৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিপক্ষে ম্যাচে খেলেছেন। যে ম্যাচে অরুণ লাল রামচাঁদকে খেলতে হিমশিম খাচ্ছিলেন বলে নিজেই জানিয়েছিলেন ক্যারিয়ার গল্পে।
ঢাকা লিগের আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে রামচাঁদ একবার এমন ঝড় তুলেছিলেন, দেশের ক্রিকেটে তা আজও আলোচনার রসদ যোগায়। সেই ম্যাচে মোহামেডানের হয়ে খেলেছিলেন শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি অর্জুনা রানাতুঙ্গা ও অরবিন্দ ডি সিলভা। বাঁহাতি স্পিনের টার্নে দুজনকে তো পরাস্ত করেছিলেনই, ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়ে আবাহনীকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।
সেসময় আবাহনীতে যোগ দেয়ার পেছনেও দারুণ একটা গল্প আছে রামচাঁদের। একবার বিশ্ববিদ্যালয় দল নিয়ে ময়মনসিংহে গেছেন শেখ কামাল। ম্যাচে ময়মনসিংহের হয়ে ৬ উইকেট নিয়ে কামালকে চমকে দেন রামচাঁদ। মাঠেই শেখ কামাল তাকে পরের মৌসুমে আবাহনীতে খেলার কথা বলে আসেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার সঙ্গে বুলেটে কামালেরও বুক ঝাঁঝরা করে দেয় দেশি ঘাতকরা।