১২ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হচ্ছে দেশের সব সিনেমা হল। সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে ডেকে এমন ঘোষণাই দিয়েছিলেন হল মালিক সমিতির সংগঠন ‘প্রদর্শক সমিতি’র নেতারা।
দেশের সিনেমা হল টিকিয়ে রাখার জন্য পর্যাপ্ত কনটেন্ট (সিনেমা) নেই। দীর্ঘদিন ধরে লোকসান গুনতে গুনতে হলের মালিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সিনেমা হলগুলোকে বাঁচানোর কিংবা দেশের ছবির উৎপাদন বাড়ানোর এবং উপমহাদেশের ছবি আমদানির বাঁধা-নিষেধ অপসারণে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না পাওয়ায় দেশের হল বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রদর্শক সমিতির নেতাদের।
তাদের এমন সিদ্ধান্ত চলচ্চিত্র অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। হল বন্ধের এমন সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সকলে। এরআগে হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে কথা বলেছেন পরিচালক সমিতির একাধিক নেতা ও সময়ের জনপ্রিয় কয়েকজন নির্মাতা। এবার এই বিষয়ে নিজের মতামত জানালেন চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক।
সিনেমা হল মালিকদের সংগঠনের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে ‘একমত নন’ চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বিকেলে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে ‘পোড়ামন’-খ্যাত এই নায়ক বলেন, হল বন্ধ করলে কি সমস্যার সমাধান হবে? কোনো কিছু বন্ধ বা ভাঙায় সমাধান আসবে না। প্রদর্শক সমিতি হল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে এটা তাদের নিজেদের সিদ্ধান্তে। আগে প্রযোজক ও পরিচালকদের সঙ্গে বসে আলোচনায় এসে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল। কন্টেন নেই বলেই হঠাৎ করে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা আলোচনার মাধ্যমে করলে একটা সুষ্ঠু সমাধান আসতো।
প্রদর্শক সমিতির দাবি, দেশে প্রতি বছরে যে সংখ্যক সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য। মাসে যতগুলো মানসম্মত ছবি হলে প্রদর্শনের জন্য দরকার ততগুলো ছবি নির্মাণ হচ্ছে না। সেজন্য তারা আমদানি ছবির পক্ষে সাফাই গাইছেন।
এ প্রসঙ্গে সাইমন বলেন, ভিনদেশের সংস্কৃতি কেন আমরা টাকা দিয়ে কিনে এদেশে চালাবো? প্রদর্শক সমিতি চাচ্ছে ভারতীয় সিনেমা আসুক। ইতোপূর্বে এদেশে ভারতীয় সিনেমা এসেছে। সেগুলো কি ভালো চলেছে? নিরেট ভারতীয় ছবি দর্শক গ্রহণ করেছে এমন নজির পাইনি।
দেশের অধিংকাংশ সিনেমা হলে পরিবেশ অত্যন্ত নাজুক। সেগুলো আগে সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন সাইমন সাদিক। তার মতে, হলের পরিবেশ ঠিক না হলে মানুষ টাকা খরচ করে নিশ্চয়ই কষ্ট করতে হলে যাবে না। টাকা দিয়ে বিনোদন ও আরাম নিতে মানুষ হলে যাবে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ হল কি দর্শক বান্ধব? ২০১৯ সালে এসে এখনও হলে গেলে ছারপোকা মারতে হয়। এগুলো তো প্রদর্শক সমিতি ঠিক করলে পারে।
প্রযোজক-পরিচালকদের কথা উল্লেখ করে সাইমন বলেন, ছবি নির্মাণে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালেন প্রযোজক। পরিচালকরা নিজেদের মেধা দিয়ে ছবি নির্মাণ করেন। তারা অসংখ্য হিট ছবি উপহার দিয়েছেন। তখন তো ব্যবসা করে লাভ করেছে হল মালিকরা। তাই তাদের সঙ্গে বসেও আলাপে আসা যেত। প্রদর্শক সমিতির একার পক্ষে এই সিদ্ধান্ত নেয়াটা আমি সাপোর্ট করিনা। নতুন অনেক প্রযোজক অনিদির্ষ্টকালের জন্য হল বন্ধের ঘোষণায় বিভ্রান্ত হচ্ছেন। ছবি নির্মাণের কথা ভেবেও পিছিয়ে যাচ্ছেন।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদস্য সাইমন আরও বলেন, শিল্পী সমিতি শিল্পীদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করে। তবে প্রদর্শক সমিতির এই সিদ্ধান্তে শিল্পী সমিতির করণীয় কী আমার ভালো জানা নেই। শিল্পী সমিতি থেকে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কিনা জানি না। সবচেয়ে ভালো হয় সবাই মিলে যদি গোলটেবিল আলোচনায় আসা যায়, তাহলে সমস্যার সমাধান হবে বলে আমি মনে করি। তবে হল বন্ধের ঘোষণা আসার পর থেকে প্রত্যেক শিল্পী ভেতরে ভেতরে সাফার করছে। বসে আলোচনা করে দ্রুত সমাধান প্রত্যাশা করছি।
ছবি: আরিফ আহমেদ