সাংবাদিক বান্ধব নয় এমন কোনো আইন হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সাইবার অপরাধ দমন করতে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ৫৭ ধারা সংযুক্ত করা হলেও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এর অপব্যবহার হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
এই ধারাকে তাই আরও স্পষ্ট করে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে মত প্রকাশের কথা বলা হয়েছে। এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন হলে তা সঙ্গে সঙ্গেই বাতিল হতে বাধ্য। নতুন আইনে স্বচ্ছ সাংবাদিকতা ব্যাহত হবে না।’
রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
নতুন আইনের আগে ৫৭ ধারার অপব্যবহার রোধ করতে নির্দেশনা দেয়া আছে জানিয়ে তিনি বলেন,‘ ৫৭ ধারায় মামলা হলেই সাংবাদিককে হয়রানি না করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখন কেউ ইচ্ছে হলেই থানায় গিয়ে সাংবাদিকের নামে ৫৭ ধারায় মামলা দিতে পারবে না।’
৫৭ ধারা নিয়ে অস্পষ্টতা সৃষ্টি আছে বলে মনে করেন তিনি। তাই এই ধারাটি আরও স্বচ্ছ করে মামলার সাজার মেয়াদে সংশোধন এনে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি আইন প্রণয়নের পর প্রযুক্তির অগ্রসরতায় বিস্তৃতি পেতে থাকা সাইবার অপরাধ মোকাবেলায় আলাদাভাবে আইন না করে ৫৭ ধারা যুক্ত করা হয়। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে এই ধারাটির অপব্যবহার করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘৫৭ ধারায় সব অপরাধের সাজা ছিলো ৭ বছর। তাই আমি মনে করি এই ধারা আইসিটি অ্যাক্টের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে খাপ খায় না।’
সাইবার অপরাধ দমনে সময়োপযোগী আইন প্রণয়নের প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। সাইবার অপরাধ হচ্ছে। অনেকেই এই অপরাধের শিকার হচ্ছে, এমনকি আত্মহত্যাও করছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ১৯ এবং ২০ ধারায় এই বিষয়টি মোকাবেলা করা হবে। ৫৭ ধারার মতো অস্পষ্টতা এখানে থাকবে না। অপরাধ সম্পর্কে এবং এসবের সাজা সম্পর্কে স্পষ্ট বলা থাকবে। আইনটি দেখলেই আপনারা বুঝবেন যে এর মধ্যে সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে সাংঘর্ষিক কিছু থাকবে না।’
২০০৬ সালে বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকদের মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব করার মানসে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (ওঈঞ) আইনের ৫৭ ধারা প্রণয়ন করে। এরপর প্রণীত তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে সংশোধন আনা হয় ২০১৩ সালে।
আইনটি প্রণয়নের পর অপপ্রয়োগ তেমন একটা না থাকলেও সংশোধনী আনার পর থেকেই শুরু হয় হয়রানি। গত ৫ বছরে পুরো দেশজুড়ে এই আইনে ৭‘শ ৪০ টি মামলা হয়। যার ৬০ শতাংশ ৫৭ ধারায়। এর শিকার সবচেয়ে বেশি সংবাদকর্মী, ব্লগার ও ফেসবুক অ্যাক্টিভিস্টরা। আইন সংশোধনীর পর ২০১৩ সালে মাত্র ৩টি মামলা দায়ের হলেও পরবর্তী বছরগুলোতে জ্যামেতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে মামলার সংখ্যা। এর মধ্যে ২০১৪ সালে ৩৩টি, ২০১৫ সালে ১৫২, ২০১৬ সালে ২’শ ৩৩টি এবং এ বছরের মাত্র ছয় মাসে মামলা দায়ের হয়েছে ৩’শ ১৯টি।
৫৭ ধারা প্রণয়নের পর থেকে দেশ-বিদেশে বহু বিতর্ক, সমালোচনা হয়েছে। সমালোচনার মুখে বহুল আলোচিত তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারা বাতিল হতে হচ্ছে।