Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

সাংবাদিকতায় নারী নেতৃত্ব

সাংবাদিকতা

বাংলাদেশের গণমাধ্যমে কতজন নারী সাংবাদিক কর্মরত আছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান জানা নেই। তবে, এ পেশায় নারীর অংশগ্রহণ এখন চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে টেলিভিশন সাংবাদিকতায় নারীদের অংশগ্রহণ ও তাদের সফল পদচারণা রিপোর্টিং থেকে শুরু করে নিউজরুম সর্বত্র বিরাজমান। অন্যদিকে নারী সাংবাদিক বৃদ্ধির পাশাপাশি সাংবাদিক নেতৃত্বেও নারীদের অংশগ্রহণ দারুণভাবে দৃশ্যমান।

রওশন ঝুনু

আজ থেকে বছর পাঁচেক আগেও নারী সাংবাদিকরা নেতৃত্বের গুটিকয়েক পদে সীমাবদ্ধ ছিলেন। নারী বিষয়ক সম্পাদক ও কার্যকরী সদস্য পদে নির্বাচন করতেন অথবা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতেন।

এর বাইরে হাতে গোনা দুই একজন ছিলেন যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে পুরুষ সহকর্মীদের সাথে নির্বাচন করে জয়ী হতেন ও সফলভাবে দায়িত্ত্ব পালন করেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ফরিদা ইয়াসমিন (বর্তমানে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক), মাহমুদা চৌধুরী, পারভীন সুলতানা ঝুমা, গুলশান আরা বেগম (প্রয়াত), রোজী ফেরদৌস, শাহনাজ বেগমসহ হাতে গোনা আরো কয়েকজন ছিলেন।

উনাদেরই পদ অনুসরণ করে ও অনুপ্রেরণাতে আজ অনেক নারী সাংবাদিক ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচন করছেন।

এ বছর ডিইউজে নির্বাচনে মোট ১৬ জন নারী সাংবাদিক অংশ নিয়েছেন। তারা হলেন, প্যানেলের বাইরে সেবিকা রানী ও রওশন ঝুনু সাধারণ সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী।

জাফর ওয়াজেদ-খায়রুজ্জামান কামাল প্যানেলে দপ্তর সম্পাদক সাজেদা হক, জনকল্যাণে ফারহানা মিলি, নির্বাহী পরিষদ সদস্য শাহনাজ পারভীন এলিস ও জাহিদা পারভেজ ছন্দা।

আবু জাফর সূর্য-সাজ্জাদ তপু প্যানেলে যুগ্ম সম্পাদক শামীমা দোলা, নির্বাহী পরিষদ সদস্য হিসেবে হালিমা আক্তার লাবণ্য, শাকিলা পারভীন ও রারজানা সুলতানা ।

শামীমা দোলা

কুদ্দুস আফ্রাদ-সোহেল হায়দার চৌধুরী প্যানেলে কোষাধ্যক্ষ উম্মুল ওয়ারা সুইটি, জনকল্যাণে সেলিনা শিউলী।

আতাউর রহমান- এম এ কুদ্দুস প্যানেলে সহ-সভাপতি মঞ্জশ্রী বিশ্বাস, জনকল্যাণে সোহেলী চৌধুরী, সদস্য পদে পলি খান, লুপা তালুকদার।

এই নেতারা শুধু নারী সাংবাদিকদের নেতা হবেন না, তারা নারী পুরুষ সকল সাংবাদিক সহকর্মীদের নেতা হবেন। যারা নতুনদের অনুপ্রেরণাসহ তাদের অধিকার আদায়ে ইতিবাচক অবদান রাখবেন।

নারীদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ আমাদেরকে আশার আলো দেখায় কারণ এই পেশায় বিভিন্ন পেশাদার জটিলতার পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক নানা ধরণের সমস্যা নারী সাংবাদিকদেরকে মোকাবেলা করতে হয়।

ফারহানা মিলি

অনেক ক্ষেত্রেই, নারীরা সেই সব সমস্যা মোকাবেলা না করতে পেরে পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হোন। এইসব সমস্যা দলীয়ভাবে সমাধানের জন্য নারী নেতৃত্ব অনস্বীকার্য।

একজন নারী নেতা যেভাবে সাংবাদিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে কথা বলবেন, ততটা আন্তরিকভাবে একজন পুরুষ নেতা করবেন না। সন্তানের জন্য ‘ডে কেয়ার সেন্টারের’ অবশ্যকতা যতটা গুরুত্ব পাবে একজন নারী সাংবাদিকের কাছে, ততটা পুরুষ সাংবাদিক নেতার কাছে আশা করার মতো সময় এখনো আমাদের দেশে হয়নি।

পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যাগুলো বেশিরভাগ নারীদেরকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে। অনেকেই পেশায় টিকে থাকতে পারে না। অন্যদিকে, অফিসের নানাবিধ সমস্যাও আছে। আছে বেতন বৈষম্য, আছে গুরুত্বপূর্ণ বিটে কাজ না দেয়ার অভিযোগ, আছে পদোন্নতিতে অবহেলাসহ নানান সমস্যা। ঘরে-বাইরে সর্বত্র এই রকম হাজারো সমস্যা মোকাবেলা করতে গিয়ে অনেক নারী সাংবাদিকের প্রয়োজন অভিজ্ঞ ও পেশায় বয়োজ্যেষ্ঠদের উপদেশ ও পাশে থাকার আশ্বাস। যা একজন নারী সাংবাদিককে অনেকদূর যেতে সহযোগিতা করবে। এই পেশায় ‘ফেলো ফিলিংসটা’ সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন।

সাজেদা হক

যদিও এখন নারী সাংবাদিকদের জন্য প্রেক্ষাপট অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আজ ফেসবুকে প্রায় সব নারী সাংবাদিককে একে অপরের সাথে খুব বন্ধুত্ত্বপূর্ণ ভাবেই পাশাপাশি কাজ ও সময় কাটাতে দেখা যায়। এই বন্ধুত্ব ও পাশে থাকার জন্য সংগঠনের কোনো বিকল্প নেই। সেই পুরোনো প্রবাদ কিন্তু এখনো যার মূল্য তুলনাহীন ‘দশের লাঠি একের বোঝা।’

তাই, সংগঠিত ও সাংগঠনিকভাবে নারী সাংবাদিকদের এগিয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই। সাংবাদিকদের মূলধারার সংগঠন যেমন- জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সহ সকল সংগঠনের প্রতিটি কমিটিতে নারী সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ আরো বাড়াতে হবে।

তাই, নিজেদের সংগঠিত হতে হবে ও পেশাগত বিভিন্ন সংগঠনগুলোতে নারী সাংবাদিকদের এগিয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই।

সেবিকা রানী

সাংবাদিকদের মূলধারার সংগঠন যেমন, জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ সকল সংগঠনের প্রতিটি কমিটিতে নারী সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ আরো বাড়াতে হবে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন আপা একজন সফল সাংবাদিক নেতা। তিনি যেমন একজন নারী সাংবাদিকের পাশে দাঁড়ান তেমনি একজন পুরুষ সাংবাদিকের পাশেও দাঁড়ান। তারপরও, ফরিদা আপার কাছে একজন নারী সাংবাদিক যেভাবে পেশাগত সমস্যা থেকে শুরু করে পারিবারিক-আর্থিক সমস্যা মন খুলে বলতে পারেন, তেমন করে কি একজন পুরুষ নেতার সাথে বলতে পারেন?

একটা সময় ছিলো যখন একজন নারী সাংবাদিক আরেকজন নারী সাংবাদিকের সাথে কথা বলতেন অথবা মিশতেন মেপে মেপে। কেও কেও ছিলেন যারা ভালো পত্রিকা অথবা টিভিতে কাজ করলে ছোট পত্রিকার নারী সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতেন না। এখন সেইসব নীচতা আমাদের সাংবাদিকদের মধ্যে আর কাজ করে না, যা আমাদের জন্য অনেক বড় সুখবর।

শাকিলা পারভীন

সাংবাদিকদের বেশ কিছু সংগঠন আছে যারা পারস্পারিক সম্পর্ক উন্নয়নসহ পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন।

একটা সময় ছিল যখন কিছু বেসরকারি সংস্থা, যেমন বাংলাদেশ সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট জার্নালিজম এন্ড কমিউনিকেশন, নিউজ নেটওর্য়াক নেতৃত্বে নারী সাংবাদিক অথবা গণমাধ্যমে নারী সাংবাদিকদের অবস্থান নিয়ে কাজ করতেন ও যারা সেই সব প্রজেক্টে অংশ নিতেন তাদের মধ্যেই নেতৃত্বের বিষয়টা থাকত।

এখন ফরিদা ইয়াসমিন আপা নেতৃত্বের যেই দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন তাতে আমাদের অনেক নারীরাই নেতৃত্বে এগিয়ে আসছেন। যা অদূর ভবিষতে আরও জোরালো হবে।

ধন্যবাদ, আমাদের সব মশাল বাহক নেতাদের যারা আমাদেরকে এই পথ দেখিয়েছেন।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

Exit mobile version