আবরার ফাহাদ নামের ছেলেটার বাবা ঢাকা মেডিকেলের মর্গে মৃত ছেলের দেহের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, আমি আওয়ামী লীগ করি, আমার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগ করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই৷ কিন্তু কেনো তাকে এই কথা বলতে হল? তবে কি ছেলের খুনের বিচার চাইতে গেলে বাবাকে আওয়ামী লীগ হতে হবে? আওয়ামী লীগ না হলে কি এর বিচার চাওয়া যাবে না? ছেলেটার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগ করা সত্ত্বেও তাকে এভাবে মেরে ফেলা হল কেন? তবে কি প্রশ্ন সেটাই? সংগত কারণেই আরও প্রশ্ন জাগে আওয়ামী লীগ না করলে তবে তাকে মেরে ফেলা যাবে? কিংবা আওয়ামী লীগ পরিবার না হলে পরিবারটি কি এ খুনের বিচারও পেতে পারে না? এদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের পরিবার জামায়াত-শিবির বলে দাবি করেছেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম তানভীর আরাফাত৷ এখন কথা হচ্ছে আবরারের খুনের বিচার৷ তার পরিবার জামায়াত শিবির এই কথার উল্লেখ কি জরুরী ছিল?
আবরারের পরিবার জামায়াত শিবির যদি হয়েও থাকে পুলিশ প্রশাসনে কি জামায়াত শিবির পরিবারের কেউ নেই? আবরারকে কেন হত্যা করা হলো? সে কি কোন দোষ করেছিল?সংবাদপত্রে বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া আসামি অনিক সরকার ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত এই তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক দুই দফায় ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে শতাধিকবার আবরারকে আঘাত করেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেছেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আবরার নিস্তেজ হয়ে না পড়ে ততক্ষণ পর্যন্ত ধাপে ধাপে আমিসহ অন্যরা তাকে পিটিয়েছি৷ বন্ধু হয়ে বন্ধুর উপর কেন এই নির্মমতা? মেধাবী হয়ে আরেক মেধাবীর উপর কেন এই নির্মমতা? এই নির্মমতার খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে কারাগারের আসামিরাও৷ বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি মো. অনিক সরকার কারাগারে কয়েদি ও হাজতিদের তোপের মুখে পড়ে মারধরের শিকার হয়েছে৷ অনিকের এমন অপকর্মে ক্ষুব্ধ বাবাও ছেলের বিচার চেয়েছেন৷ অনিক সরকারের বাবা আনোয়ার হোসেন ব্যক্ত করেছেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া৷
বুয়েটে যারা ভর্তির সুযোগ পায় তারা নিশ্চয়ই মেধাবী৷ কিন্তু মেধাবী হলেই কি মানবিক হয়?মনুষ্যত্ববিহীন মেধার কি কোন মূল্য আছে? শিক্ষাঙ্গণগুলোই হওয়ার কথা মানবিকতা ও মনুষ্যত্ব বিকাশের উৎসভূমি৷ কিন্তু বাস্তবে হয়ে উঠছে তার উল্টোটা৷ বুয়েটের মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা হয়ে উঠছে খুনী৷ কী মূল্য আছে এসব মেধার? ভারতের রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম বলেন: মেধাবী হয়ে গর্ব করার কিছুই নেই। শয়তানও কিন্তু মেধাবী হয়। মানুষ্যত্ব ও সততা না থাকলে সে মেধা ঘৃণিত।এই মেধাবীর নামে বর্বর শয়তান হয়ে ওঠা অনিক, অমিত কিসের জোরে এমন বেপরোয়া হয়ে উঠল? সেটা নিশ্চয়ই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন হওয়ার জোরে নয় কি? আওয়ামী লীগ না হয়ে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে কি তারা এমন সাহস পেতো? এই নির্মম হত্যাকাণ্ড আজ দেশ-বিদেশে নিন্দিত৷ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় সর্বত্রই চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সেই আবরার ফাহাদকে হত্যার বিষয়টি নিয়ে বিস্মিত হয়েছেন ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তনুশ্রী রায়।
আবরার হত্যার প্রতিবাদ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তনুশ্রী রায় একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তার সেই স্ট্যাটাসটি সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয়ে যায়।
শুনলাম ভারত-বাংলাদেশের চুক্তি নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়ায় একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। স্ট্যাটাসটা আমি পড়লাম, নিজের দেশের স্বার্থ নিয়ে লেখার জন্য কিভাবে নিজের দেশেরই লোক একটা ছেলেকে এভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ফেলে এটা আমার কাছে আশ্চর্য লাগছে। সামান্য ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে মানুষ খুন করে ফেলা হচ্ছে বাংলাদেশে। কিভাবে এমন একটা দেশে মানুষ বাস করে৷ কেন ক্ষমতার উত্তাপে বিশ্বের কাছে আমাদের বর্বর হিসাবে তুলে ধরলো এই বর্বরেরা? এখন প্রশ্ন উঠছে কিভাবে এমন একটা দেশে মানুষ বাস করে? এটা কি আমাদের জন্য চরম লজ্জার নয়? এমনটি কেন হতে দিল আওয়ামী লীগ দলটি? আর মানুষ সবাইকেও আওয়ামী লীগ হয়ে যেতে হবে? আর আওয়ামী লীগেরও কি উচিত সকলকে আওয়ামী লীগ বানানো? কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত কী উদ্দেশ্য নিয়ে বলছেন যে আবরারের পরিবার জামাত শিবির? এখন যিনি এমন কথা বলছেন বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় থাকলে কি তা বলতেন?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)