বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছেন কানাডার ফেডারেল আদালত। বিএনপির সদস্য হওয়ার কারণে মোহাম্মদ জুয়েল হোসেন গাজী নামে একজন বাংলাদেশী নাগরিকের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ করে দেয়ার বিরুদ্ধে করা জুডিশিয়াল রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করতে গিয়ে রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত এমন অভিমত দেন। ফেডারেল আদালতের বিচারক হেনরি এস ব্রাউন ওই রায়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির পরিচালিত লাগাতার হরতাল এবং হরতালকে কেন্দ্র করে পরিচালিত সন্ত্রাসী তৎপরতা সম্পর্কে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। এমনকি সন্ত্রাসী সংগঠনের কর্মী হওয়ায় জুয়েল হোসেন গাজীকে কানাডায় প্রবেশের অনুপযুক্ত ঘোষণা করেন ওই আদালত। কানাডার আদালতের এ রায়ে বিএনপিবিরোধী পক্ষ খুশি হলেও এতে আন্তর্জাতিকভাবে প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আমরা মনে করি। বিএনপি কয়েকবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল এবং কর্মী-সমর্থকের দিক থেকে দলটি এখনও বাংলাদেশের শীর্ষ দুইয়ের একটি দল। আমরা মনে করি, নিজেদের কর্মকাণ্ডের জন্য বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান একটি দল সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত হলে এর খারাপ প্রভাব শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ওপর পড়বে। সারাবিশ্বের মানুষ বাংলাদেশের বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করবে। জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দু:খজনক বিষয়। এই ঘটনা থেকে দেশের মূলধারার সব প্রধান রাজনৈতিক দলের শিক্ষা নেয়া উচিৎ বলে আমরা মনে করি। মূলধারার রাজনীতিতে থাকতে হলে প্রত্যেকটি দলের রাজনৈতিক কর্মসূচী, দাবি আদায়ের পন্থাসহ নিজেদের সব কর্মকাণ্ড ভেবেচিন্তে ঠিক করতে হবে। বিরোধী পক্ষের যৌক্তিক দাবি সরকারের না মানা, দাবি আদায়ের জন্য হরতাল-অবরোধের নামে নৈরাজ্য, মানুষ হত্যার নামে সন্ত্রাসী মানসিকতা ও কার্যকলাপ থেকে সব রাজনৈতিক দলকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা মনে করি, সরকারের কাছে জনগণের পক্ষ থেকে বিরোধী দলের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা রাজনৈতিক সংস্কৃতিরই অংশবিশেষ। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বিএনপি সেই কাজটি কখনোই সঠিকভাবে করতে পারেনি। দাবি মানতে বাধ্য করতে গিয়ে তারা নির্লজ্জভাবে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে দাঁড়ানোর পাশাপাশি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সময় এবং নির্বাচনের পরে সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও, সাধারণ মানুষ হত্যাসহ বিভিন্ন সহিংস ঘটনা ঘটিয়েছে। দেশের স্বার্থে এ ধরণের বিকৃত রাজনৈতিক মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসার জন্য দেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য খুবই প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। নয়তো তাদের জন্য বহির্বিশ্বে এভাবেই বাংলাদেশকে চরম মাশুল দিতে হবে, যা কখনোই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে আমাদের কাম্য হতে পারে না।