Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

ষোড়শ সংশোধনী: রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত চিঠি দিয়ে জানাবে সরকার

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ হিসেবে ‘রিভিউ’ (রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন) এর সিদ্ধান্ত আ্যাটর্নি জেনারেলকে চিঠি দিয়ে জানানো হবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এখনো ৭৯৯ পৃষ্ঠার রায়টির নিবিড় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

রোববার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে নবনিযুক্ত সহকারী জজদের ৩৬তম বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

গত বুধবার জাতীয় সংসদে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নিতে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়।

কণ্ঠভোটে প্রস্তাবটি পাস হওয়ার আগে এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংবিধান সংশোধনের কোন এখতিয়ার আদালতের নাই। আইনের ব্যাত্যয় হলে তারা শুধু আইনের ব্যাখ্যা দিতে পারেন।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্যরা রায়ের অসঙ্গতি তুলে ধরার পাশাপাশি প্রধান বিচারপতির সাম্প্রতিক সময়ে দেয়া কিছু বক্তব্যের সমালোচনা করেন।

সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য নোটিশ দিয়েছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মইন উদ্দিন খান বাদল।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ওইদিন জাতীয় সংসদে আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন: যে যুক্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল; তা গ্রহণযোগ্য নয়। এ রায় আবেগতাড়িত ও বিদ্বেষপ্রসূত। সুতরাং আমরা আইনি প্রক্রিয়া চাই। আমরা এই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদ বলেন: ‘আমি বিস্মিত হই, এই দেশে এই আদালতে আওয়ামী লীগের কোন বন্ধু পাওয়া গেল না! আমরা এই জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ষোড়শ সংশোধনী পাস করেছিলাম। যার লক্ষ্য ছিল ৭২-এর সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে ফিরিয়ে আনা। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট একটি রায় দিয়েছে, যে রায়ের আগে তারা আদালতের বন্ধু (এমিকাস কিউরি) হিসেবে কয়েকজনকে নিযুক্ত করেছে। জাতির কাছে প্রশ্ন রাখি: আদালতের বন্ধু এরা কারা?’

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য স্বপ্রণোদিত হয়ে এই রায় ও পর্যবেক্ষণ বাতিল করা উচিৎ।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়। ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট করেন।

ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এরপর হাইকোর্টের দেয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। গত ৮ মে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের উপর শুনানি শুরু হয়।

গত ৩ জুলাই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে রায় ঘোষণা করেন। আপিল খারিজের ওই রায়ের ফলে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ই বহাল থাকে।

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ১ অগাস্ট ৭৯৯ পৃষ্ঠার রায় প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত রায় অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের সুপারিশ করার ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে ফিরে যায়।

এছাড়া রায়ের পর্যবেক্ষণে, গণতন্ত্র, রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, সুশাসন, দুর্নীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে।

Exit mobile version