Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

শিয়া নেতার শিরশ্ছেদে বিক্ষোভে উত্তাল মধ্যপ্রাচ্য

সৌদি আরবে শিয়া নেতা শেখ নিমর আল-নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় প্রতিবাদের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে ইরান থেকে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কূটনৈতিক নিন্দা জানিয়েছে ইরান, বাহরাইন, লেবাননসহ বেশ কয়েকটি দেশ। শিয়া সম্প্রদায়সহ নিমরের হাজার হাজার তরুণ অনুসারীরা নেমে এসেছে রাস্তায়।

ইরানে বিক্ষুব্ধ জনতা সেদেশে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। পরে দেড়ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে দমকল বাহিনী। তবে সেখানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।  

বিবিসি জানিয়েছে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার নিমরের মৃত্যুদণ্ডের পর যে কোনো ধরনের সমাবেশের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সৌদি। কিন্তু ওই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে খোদ সৌদির রাস্তাতেই নিমরের ছবি নিয়ে বিক্ষোভ করেছে কয়েকশ শিয়া তরুণ।

নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই তার নিজ শহর কাতিফের অধিবাসীরা বিভিন্ন রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। এরপর তারা শোক পালনের ঘোষণা দেয়। কাতিফ শহর এখন শোকের শহরে পরিণত হয়েছে।ধর্মীয়ভাবে আদর্শিক মিল থাকায় নিমরের মৃত্যুদণ্ডে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইরান। নিমরের মৃত্যুর জন্য সৌদি আরবকে চড়া মূল্য দিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। লেবাননের শিয়া কাউন্সিলও নিমরের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছে সৌদি আরবকেই।

লেবাননভিত্তিক সংগঠন হিজবুল্লাহ’র দাবি ‘এটি আসলে রাজনৈতিক হত্যা’। তাদের মতে, শেখ নিমর সমাজের নিপীড়িত মানুষদের অধিকারের দাবিতেই লড়াই করতেন।

আর সেই কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। বাহরাইনেও শুরু হয় জনতা পুলিশ সংঘর্ষ। পরিস্থিতি সামলাতে তাদের কাঁদানে গ্যাসও ছুড়তে হয়েছে।

সৌদি রাজতন্ত্রের আতঙ্ক ছিলেন শেখ নিমর:

শেখ নিমর আল-নিমর সৌদি আরবের শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় এক নেতা। বিশেষ করে শিয়া তরুণদের মধ্যে তার প্রচুর অনুসারি রয়েছে।

আরব বসন্তের পর মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের মতো সৌদি আরবেও বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। শেখ নিমর আল-নিমর এই বিক্ষোভে জোরালো সমর্থন দেন। সৌদি আরবের রাজপরিবারের সবচেয়ে তীব্র সমালোচকদের একজন তিনি।

বিগত দশকগুলোতে তাকে সৌদি সরকার বেশ কয়েকবার গ্রেফতার করে। ২০১২ সালে যখন তাকে গ্রেফতার করা হয়, তখন এর বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ হয়েছিল। সেই বিক্ষোভে তিনজন নিহত হয়। সৌদি আরব অভিযোগ করে যে শেখ নিমর ইরানি মদতপুষ্ট।

তবে ২০০৮ সালে শেখ নিমর মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইকিলীকসের ফাঁস করা তথ্য অনুযায়ী এই সফরের সময় তিনি তীব্র মার্কিন বিরোধী এবং ইরানপন্থী অবস্থান থেকে সরে আসার চেষ্টা করেন।

সৌদি আরবের শিয়ারা বহুদিন ধরেই নানা ধরণের বৈষম্য এবং বঞ্চনার অভিযোগ করে আসছে সৌদি রাজপরিবারের বিরুদ্ধে।

শেখ নিমর যেহেতু এই শিয়াদের অন্যতম নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন, স্বাভাবিকভাবেই সৌদি রাজপরিবার তাকে এক বড় হুমকি হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করে।

বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে যেভাবে ইরানের প্রভাব বলয় বাড়ছে, তা সৌদি আরবকে উদ্বিগ্ন করে তোলে।

ইরান আগেই শেখ নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না করার জন্য সৌদি আরবকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সব আবেদন অগ্রাহ্য করে শেষ পর্যন্ত এই শিয়া নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সৌদি আরব।

Exit mobile version