দুই বছর মেয়াদে নতুন কমিটি পেয়েছে শিল্পী সমিতি। সাধারণত নির্বাচনের সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই নবনির্বাচিতদের শপথ পাঠ করিয়ে ক্ষমতা বুঝিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন। বিগত দিনে এমনটাই দেখা গেছে। কিন্তু এবার ‘একটু বেশি সময়’ লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা হারুন।
সোমবার দুপুরে চ্যানেল আই অনলাইনকে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। বলেন, ফল ঘোষণার পর সাধারণ সম্পাদক পদটি নিয়ে যেহেতু পরাজিত প্রার্থী নানা অভিযোগ তুলেছেন, এ কারণে শপথ অনুষ্ঠানটি এবার একটু বিলম্বিত হতে পারে।
পীরজাদা বলেন, নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে নবনির্বাচিতদের শপথ অনুষ্ঠান নিয়ে কথা হয়েছে। এখনও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। পরাজিত সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী যেহেতু এই পদে পুনরায় নির্বাচন চেয়ে নানা অভিযোগ এনেছেন, তাই বিষয়টি নির্বাচন কমিশন পর্যবেক্ষণ করছে।
কথা প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, প্রার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন শপথ অনুষ্ঠান বিলম্বিত করছে, বিষয়টি এমন নয়। বরং আমরা সুষ্ঠুভাবে যেরকম নির্বাচন পরিচালনা করেছি, ঠিক সেভাবে সুস্থ সুন্দর পরিবেশে নতুন কমিটির হাতে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিতেই অবস্থা একটু পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা আশা করছি, এরমধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে, সত্য উন্মোচিত হবে। আর তারপরেই আমরা সবাইকে নিয়ে শপথ অনুষ্ঠানটি করতে চাই।
তিনি আরো বলেন, ‘যতদূর জেনেছি, পরাজিত সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নিপুণ আদালতের দারস্থ হবেন। আমরাও চাই, বিষয়টির দ্রুত সুরাহা হোক। কারণ শিল্পী সমিতির এই নির্বাচনে কারচুপির কোনো অবকাশই ছিলো না।’
গেল ২৮ জানুয়ারি উৎসবমুখর পরিবেশে হয়েছে শিল্পী সমিতির নির্বাচন। যেখানে শিল্পীদের ভোটে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের একটি থেকে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন ও অন্যটি থেকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন জায়েদ খান। সম্পাদকীয় ও কার্যনির্বাহী কোনো পদ নিয়ে জটিলতা না হলেও ফল ঘোষণার পর থেকে ‘সাধারণ সম্পাদক’ পদটি নিয়ে শুরু হয় জটিলতা।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনা চেয়ে আপিল করেন নিপুণ। তার করা আপিলেও জয়ী হন জায়েদ খান। এর পরদিন বিকেলে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা হারুনকে নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে নির্বাচনে জায়েদ পাশ করেছেন’- অভিযোগ তুলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিপুণ ‘আবারও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন চেয়েছেন’!
সংবাদ সম্মেলনে নিপুণ বলেন, ‘শুধুমাত্র সাধারণ সম্পাদক পদটিতে আবার নির্বাচন চাই। প্রয়োজনে আমি এ বিষয় নিয়ে আদালতে যাব। তবে আমি এর শেষ দেখে ছাড়বো।’
শুধু তাই নয়, সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা হারুনের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ এনে নিপুণ বলেন, নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা হারুন ভোটের দিন সকালে আমার কাছে ২টা চুমু চেয়েছিলেন। সেখানে আমার প্যানেলের জেসমিন ছিল। নির্বাচন কমিশনারের এমন অসৌজন্যমূলক আচরণ অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। তাকে সিনেমা নাটকে কোনোদিন না নেওয়া উচিত সেই দাবি জানাই।
তবে এদিন সন্ধ্যায় নিপুণের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন পীরজাদা। চ্যানেল আই অনলাইনকে এ বিষয়ে তিনি জানান, ‘চুমু’ প্রসঙ্গটি নিয়ে নিপুণ যা বললেন, একজন শিল্পীর এমন অভিযোগে আমি মর্মাহত। নির্বাচনের দিন শিল্পী, গণমাধ্যমকর্মীতে পূর্ণ ছিলো এফডিসি; তার এ অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যে।
সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় নির্বাচন দাবির প্রেক্ষিতে পীরজাদা বলেন, এটা সম্ভব নয়। ভোট গণনা নিয়ে আপিল করেছিলেন, তার প্রেক্ষিতে পুনরায় ভোট গণনা করে আপিল বোর্ড। সেসময় তিনিও উপস্থিত ছিলেন। এখন যদি তিনি পুনরায় ভোট দাবি করেন, সেটার এখতিয়ার গঠনতন্ত্র অনুসারে আমাদের নেই। তিনি আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন চাইলে।