Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

‘এই ছবি করছি হিরো হওয়ার জন্য নয়, হিরো তো আগেই হয়ে গেছি’

ইরানের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় ক্যারিয়ারের সপ্তম চলচ্চিত্র ‘দিন দ্য ডে’ নিয়ে হাজির হচ্ছেন চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল। ইরান ও আফগানিস্তানের সীমান্তে ১৪ দিনে প্রথম লট শেষ করে চলতি মাসের দ্বিতীয়দিন থেকে ঢাকার অদূরে শুটিং করছেন ‘খোঁজ দ্য সার্চ’, ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’, ‘মোস্ট ওয়েলকাম’-ছবিগুলো করে জনপ্রিয়তা পাওয়া এ নায়ক। মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) রুপগঞ্জের গোবিন্দপুর এলাকায় এ ছবির শুটিংয়ের তুমুল ব্যস্ততার ফাঁকেও টানা ৯ বার সিআইপি (কর্মাসিয়াল ইম্পরট্যান্ট পারসন) নির্বাচিত হওয়া আলোচিত নায়ক, প্রযোজক অনন্ত জলিল কথা বলেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে…

এই চলচ্চিত্রের নাম ‘দ্বীন দ্য ডে’, নাকি ‘দিন দ্য ডে’?
‘দ্বীন’ হলে ইসলামী অনেককিছু মিন করে। তেমন কিছু না। এ চলচ্চিত্রের নাম ‘দিন দ্য ডে’। মানে সকাল-দুপুর-বিকেল সমস্তটা মিলিয়ে যা হয় তাই ‘দিন’। ইংরেজি টাইলেট ‘দ্য ডে’।

‘দিন দ্য ডে’ চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপট কী নিয়ে?
আফগানিস্থানে ড্রাগসের উৎপাদন, পৃথিবীব্যাপী সেখান থেকে কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে এটা দেখানো হবে। সেখানকার আফিম, হিরোইন, মারিজুয়ানা, গাজা, কোকেন, তৈরির ফ্যাক্টরিতে কারা উৎপাদন করে, কীভাবে নদীপথ, আকাশপথে সাপ্লাই দেয়া হয়, এসব কীভাবে ধ্বংস করা যায়। এগুলো তুলে ধরা হবে ‘দিন দ্য ডে’ চলচ্চিত্রে। একেবারে রিয়েল লোকেশন থেকে এসব শুটিং করা হচ্ছে। বাস্তব চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছি। ইরানিদের বিশেষত্বই হলো তারা রিয়েল লোকেশন বা রিয়েলিস্টিক কাজ ছাড়া করে না। অনেক বড়মাপের চলচ্চিত্র হতে যাচ্ছে ‘দিন দ্য ডে’। এজন্য খুব খাটতে হচ্ছে। ম্যাক্সিমাম ৬০ দিন শুটিং করলেই চলচ্চিত্রের কাজ শেষ হয়। কিন্তু এই চলচ্চিত্রের জন্য ১০০ দিন ক্যামেরা চালু রাখতে হবে। এরপর পোস্ট প্রোডাকশনের আয়োজন অনেক বড়। ইরানে শুটিংয়ের সময় সেখানকার সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বাহিনী আমাদের সাহায্য করবে। এমনকি সে দেশের সামরিক যন্ত্রপাতিও ব্যবহার হবে। চেষ্টা করবো নিজেই হেলিকপ্টার চালিয়ে কয়েকটি দৃশ্যের কাজ করা।

এ ধরণের প্রেক্ষপটের চলচ্চিত্র বাংলাদেশের দর্শক গ্রহণ করবে বলে বিশ্বাস করেন?
৪ বছর পর যেহেতু আবার চলচ্চিত্রে কামব্যাক করেছি, তাই দর্শকদের নতুন কিছু দিতে চেয়েছি। আগের মতো কাজ করতে চাইনি। নয়মাস ধরে ভেবেচিন্তে এ ছবি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দেশে এর আগে এমন ‘সিরিয়াস ইস্যু’ নিয়ে চলচ্চিত্র হয়নি। নতুন কিছু হলেই দর্শক সেটা দেখবে। আমার আগের ছবিগুলো তার প্রমাণ। এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মানুষ অনেক শিক্ষামূলক মেসেজ পাবেন। ড্রাগস মানুষের মৃত্যু ডেকে আনে, ধ্বংস ডেকে আনে এগুলো একেবারে রিয়েলভাবে মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হবে।

অ্যান্টি ড্রাগস ক্যাম্পেইনের এমন প্রেক্ষাপট কেন বেছে নিলেন?
উদাহরণ দেই- আমার ছেলে বড় হচ্ছে। ও বড় হলে জানতে পারবে তার বাবা কোন ক্যাম্পেইনে কাজ করেছে। দেশের প্রতিটি বাবা-মা, ইয়াং জেনারেশনের কাছে এই ড্রাগস বিরোধী মেসেজটা থাকবে। তখন তারাই বলবে, দেখো অনন্ত জলিল দেশের এতবড় ব্যবসায়ী তারপরেও সে এতো কষ্ট করে তোমাদের জন্যই এই চলচ্চিত্রে রেখে গেছে। একজন না একজন এই কাজটা কোনো না কোনো দিন করতেন। আমি দায়বদ্ধতা থেকে এটা বেছে নিয়েছি। কিছু মানুষের মনে যদি দাগ কাটতে পারে তবে আমার সাকসেস। আমি রানিং ৯ বার সিআইপি। এই কাজ করছি হিরো হওয়ার জন্য না। হিরো তো আগেই হয়ে গেছি। এটা করছি দেশের আগামীর প্রজন্মের কথা ভেবে। কলেজ, ভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষিত মানুষদের কাছে অনন্ত জলিল এখন আইকন। আর্মিদের বিভিন্ন ট্রেনিং, প্রোগামগুলোতে আমাকে ডাকে। সেখানে যাওয়া খুব সম্মানের। এই জিনিসটা এমনিতেই আসেনি। আমি শো-অফ করার জন্য ছবি করিনা। মানুষকে মেসেজ দেয়ার জন্য করি।

এ চলচ্চিত্র একটি মিশন নিয়ে। এখানে আপনার নায়িকা বর্ষা। তার সঙ্গে রোম্যান্টিক কিংবা মসলাদার কিছু নেই?
ইরানের চলচ্চিত্রে স্ত্রীর চরিত্রটা যদি বাস্তবে স্ত্রী হয় তবে শুধু তার হাত ধরতে পারবে এই নিয়ম। ইরানের ছবিতে নারীদের স্পর্শ করা নিষেধ। যেহেতু বর্ষা বাস্তবে আমার স্ত্রী ছবিতে তার সঙ্গে একটা গানে আমাকে কিছুটা ক্লোজ দেখা যাবে। ইরানের শিল্পী সিরাজির গাওয়া একটা গানে হবে সেটি। রোম্যান্টিক বলতে এতটুকুই! রোম্যান্টিক যতটুকু আমরা বাংলাদেশে দেখাবো ওইটুকু তুর্কিতে শুটিং করবো।

আগের চলচ্চিত্রগুলোতে আপনাকে বিভিন্ন চরিত্রে দেখা গেছে। ‘দিন দ্য ডে’-তে আপনার চরিত্র কেমন?
এখানে আমি পুলিশের স্পেশাল ফোর্স ‘সোয়াত’ টিমের অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করছি। গল্প সাজানো হয়েছে, আমাকে মিশনে দেশের বাইরে যেতে হবে। আরো অনেককিছুই আছে। এর বেশি এখন বললে চমক নষ্ট হয়ে যাবে।

আফগানিস্তানে শুটিং করতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন শুনেছি!
২ দিন ভালোই কাজ করেছি। ৩য় দিন সে এক ভয়াভহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলাম। এখনও আমার বুকে ব্যথা। শুটিংয়ের জায়গাটা শতভাগ পাথর বেষ্টিত দুর্গম। সেখানে উটের পিঠ থেকে পড়ে গিয়েছিলাম। সেজন্য প্যারাসুট দিয়ে জ্যাম করা কয়েকটা রিস্কের দৃশ্য তখন করা হয়নি, পরে করে নেব। সাড়ে চারটা বাংলাদেশ জোড়া দিলে ওই এলাকার সমান হবে। এতো বড় জায়গায় মানুষের বাস নেই, শুধু মরুভূমি আর মরুভূমি। খাওয়ার পানি শেষ হয়ে গেলে আশপাশে পানিরও কোনো ব্যবস্থা নেই। খুব সাহস নিয়ে সেখানে কাজ করতে হয়েছে।

এতো সাহস এবং ঝুঁকি নিয়ে কেন কাজ করছেন?
ডামি দিয়ে কাজ করার পক্ষে আমি নই। মরুভূমিতে যখন উটের পিঠে চড়ার দৃশ্য ছিল, তখন ডামি দিলেও চলতো। কিন্তু আমি তা করিনি। ফলত দুর্ঘটনায় পড়েছি। পরিচালকের কাছে শুনেছি ঝুকিপূর্ণ দৃশ্যে আমি থাকা নেসেসারি কিনা! তিনি বলেছিলেন, নাহ! তবে আমি থাকলে নাকি রিয়েলিটি বেশি হবে। শুধুমাত্র রিয়েলিটি আনার জন্যই আমি ঝুঁকি নিচ্ছি। দেখে যেন মনে না হয় এটা অভিনয়।

ইরানি নির্মাতা মুর্তজা অতাশ জমজম আছেন এ চলচ্চিত্রে। তাকে যুক্ত করালেন কীভাবে?
প্রথমে ধানমন্ডিতে ইরানি কালচারাল সেন্টারে প্রথমে এটা নিয়ে মিটিং করি। তারা খুব আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। তারপর ইরানি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনিও অ্যাপ্রিসিয়েট করেন। তখন মনে হয়েছিল ইরান যেতে পারলে হয়তো কিছু করতে পারবো! বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত সেখানকার মেয়র, মন্ত্রণালয় এবং ওই দেশের মুভি নির্মাণ সংস্থা ‘ফারাবি’র সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেন। ওই সংস্থা মর্তুজা’র (যিনি ‘দিন-দ্য ডে’ পরিচালনা করছেন) সঙ্গে যোগাযোগ করে। মর্তুজা ইরানি অনেক সুপারহিট চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত। পরে মর্তুজা বাংলাদেশে আসেন। সাতমাস ধরে এদেশের সংস্কৃতি নিয়ে মর্তুজা স্টাডি করেন। এরমধ্যে আমি তিনবার গিয়েছি ইরানে। এরমধ্যে আরো অনেক ঘটনা রয়েছে…!

চলচ্চিত্রের প্রবীণ অনেক শিল্পী বলে থাকেন, দেশিয় চলচ্চিত্র এখন মৃত প্রায়। চারদিকে নকল গল্পের ছড়াছড়ি, নানা সমস্যার জর্জরিত। এমনকি চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ভালো ব্যবস্থা নেই। এমন সংকটকালে এতো বড় আয়োজনের বাস্তবধর্মী ছবি করার সাহস আপনার মধ্যে এলো কীভাবে?

আমার প্রথম ছবি ‘খোঁজ দ্য সার্চ’ (২০১০) নিয়ে যখন আসি, তখন আমাদের চলচ্চিত্রের
এখনাকার চেয়ে অনেক ক্রাইসিস ছিল। যখন ছবি বানাচ্ছিলাম তখন সবাই বলতো, প্রদর্শন করবেন কোথায়? যথেষ্ট সিনেমা হল নাকি বাংলাদেশ নেই! তখনও টুকটাক অশ্লীল ছবি ছিল! সবাই জানে আমার ‘খোঁজ দ্য সার্চ’ মুক্তির পর এদেশে ছবির নতুন মার্কেট তৈরি হয়েছিল। অশ্লীল ছবিও চলে গেল। এরপর একে একে ছয়টি ছবি নির্মাণ করলাম, কি পরিমাণ ব্যবসা হলো এটা বলার অপেক্ষা রাখি না। তারপর আমি চারবছর গ্যাপ দিলাম। এরমধ্যে এ দেশের চলচ্চিত্রের দু-একটা গান দেখেছি, অবাক হয়েছি। ন্যাকেড পোশাক পরিয়ে আবার দর্শককে মেরে ফেলা হলো। স্কুলের বাচ্চাও বলে, অসম্ভবকে সম্ভব করাই অনন্তর কাজ! দেখি আবার ‘দিন দ্য দে’র মাধ্যমে ছবির দর্শকদের ফিরিয়ে আনার অসম্ভব কাজটা সম্ভব করতে পারি কিনা!

তার মানে এখন থেকে নিয়মিত আপনাকে চলচ্চিত্রে দেখা যাবে?
চারবছর তো দূরে ছিলাম। সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে আবার ভালো ভালো কাজ দিয়ে চলচ্চিত্র জগতকে সমৃদ্ধ করি। এ বছরেই আরো একটা বড় কাজের ঘোষণা দেব। যেটা জেনে সবাই প্রশংসা করবেন। সরকারি পর্যায় থেকে সবমহলের কাছে সমাদৃত হবে কাজটি। এখন এর বেশি কিছুই বলতে পারবো না। তবে এতটুকু বলতে পারি, কাজটি আলোড়ন ফেলে দেবে।

আপনার প্রযোজনায় নতুন কিংবা বাইরে নায়ক-নায়িকা দেখা যাবে?
আমি দুজন নতুন শিল্পী নিয়েছি ‘দিন দ্য ডে’ চলচ্চিত্রে। তারা আমার উদ্যোগে ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ প্রতিযোগিতার ভিলেন বিভাগে বিজয়ী। তাদের নাম সজীব ও নিক্সন। এরমধ্যে নিক্সন বাংলাদেশের প্রধান ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করছে। নিক্সনের উচ্চতা ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি। সত্যিকারের ভিলেন মনে হবে তাকে। ধাপে ধাপে আরো অনেক কিছু দেখা যাবে।

নিজের প্রযোজনার বাইরে কাজ করবেন কিনা!
আগেই বলেছি আগামীতে বড় একটা কাজ করতে যাচ্ছি যেটা বাইরের প্রডাকশনের। আমি ঠিক করেছি, আগামীতে দু-একটা ফুল ফরম্যাটে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র করবো। এর বেশি আর কিছু জানতে চাইবেন না প্লিজ…!

শেষ প্রশ্ন। ‘দ্য স্পাই’ এবং ‘সৈনিক’ নামে দুটো চলচ্চিত্র করবেন শোনা গিয়েছিল…
হাহাহা! ওকে, ওকে… সৈনিক! কিছুদিন পরেই জানতে পারবেন একটা ধামকা আছে। পুরোপুরি বাণিজ্যিক ইন্তেজামে। এর বেশি এখন আর কিছু বলার মতো নেই।

ছবি: নাহিয়ান ইমন

Exit mobile version