কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার একমত হয়েছে। মিয়ানমার সফররত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে বৈঠকে দেশটির প্রতিনিধিদল এই সম্মতির কথা জানান।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মঙ্গলবার বিকেলে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। আর মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন ইউনিয়ন মিনিস্টার(স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) লে. জেনারেল কিয়াও শি।
এর আগে দুই দেশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব জনাব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে কফি আনানের সুপারিশ বাস্তবায়নসহ মায়ানমার নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়া, সন্ত্রাস প্রতিরোধ, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, মানব পাচার বন্ধকরণ, শান্তিপূর্ণ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, সীমান্তে মাদক পাচার বন্ধকরণসহ দুইটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরীত হয়।
বৈঠকে বংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে আহ্বান জানান। তিনি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর লক্ষ্যে দ্রুত একটি চুক্তি সম্পাদন এবং জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের উপর জোর দেন।
বিস্তারীত আলোচনা শেষে কয়েকটি বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। রাখাইন রাজ্য থেকে বিতারিত মিয়ানমারের জনগণকে তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আগামী নভেম্বর -২০১৭ মাসের মধ্যে দু’ দেশের সমন্বয়ে কর্মপরিধি নির্ধারণসহ (TOR) একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। মিয়ানমার নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়াসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে এ জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ সিদ্ধান্ত নেবে।
এছাড়াও বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে অব্যাহত অনুপ্রবেশ বন্ধ এবং রাখাইন রাজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে মিয়ানমার সম্মত হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে প্রত্যাবাসীত নাগরিকদের খুব শিগগিরই তাদের নিজ দেশে টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য কফি আনানের সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। সন্ত্রাস দমনে একটি সমঝোতা স্মারক সম্পাদনের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ এবং মাদক উৎপাদন ও চোরাচালানের বিরুদ্ধে সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
এদিকে বুধবার মিয়ানমারের নেত্রী অংসান সু চি’র সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল। ওই বেঠকের পর রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের মনোভাব আরও পরিষ্কার হওয়া যাবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
মিয়ানমার সফরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলে আছেন আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, স্বরাষ্ট্রসচিব (জননিরাপত্তা বিভাগ) মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সচিব (সুরক্ষা সেবা বিভাগ) ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) শামছুর রহমান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব হারুনুর রশীদ বিশ্বাস, উপসচিব আবু হেনা মোস্তফা জামান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস্ ও ইন্টেলিজেন্স) ডিআইজি সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন আহমেদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু।