Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সেই ভিডিও হঠাৎ কেন আলোচনায়

‘ছাত্রলীগের আঙিনায় বামদের ঠাঁই নাই’, ‘রোকেয়া হলের মাটি ছাত্রলীগের ঘাটি’, ‘একটা একটা শিবির ধর, ধরে ধরে জবাই কর’ এ ধরনের আরও কিছু ছন্দ মিলিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের দেয়া একটি স্লোগান সম্প্রতি ঘুরে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ইতিবাচক নয়, বরং হলের গেস্টরুমে স্ক্রিপ্ট লিপে এভাবে স্লোগান প্রশিক্ষণের সমালোচনা করেই ভিডিওটি শেয়ার করছেন।

রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি বি.এম লিপি আক্তার এ বিষয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলছেন: এই ভিডিওটি ৮ থেকে ১০ মাস বা তারও আগের ঘটনা। গত ৬ থেকে ৮ মাস ধরে হলে এ ধরনের কোন কর্মসূচি হয়নি। এটি বেশ কয়েক মাস আগে যখন ৭টি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করাসহ বেশকিছু বিষয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে বামদলগুলোর মুখোমুখি অবস্থান ছিল সেই সময়ের ঘটনা।

‘ভিডিওটি ২০১৭ সালের এবং আমরাই এটি ইউটিউবে আপলোড দিয়েছিলাম। নতুন করে এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া মানে নির্বাচনের আগে এক ধরনের উস্কানি।’

তিনি বলেন: সেসময় বামদলের নেতাকর্মীরা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যানারে ছাত্রলীগের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল। সেই প্রেক্ষাপটে আমাদের এই কর্মসূচি ছিল।

বি.এম লিপি আক্তার

হলের গেস্টরুমে এ ধরনের কর্মসূচি করা কতোটা যৌক্তিক? চ্যানেল আই অনলাইনের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন: আমরা ছোট ছোট কার্যক্রম হলের রুমেই করি। এখানে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় হলের গেস্টরুম বেছে নেয়া হয়।

এই কর্মসূচির সময় হল প্রশাসনের কোন অনুমতি নেয়া হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে লিপি বলেন: হলের ভেতরে এ ধরনের কোন কর্মসূচির জন্য অনুমতির প্রয়োজন নেই। হলের গেস্টরুম সবার জন্য উন্মুক্ত।

সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিওর বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ঘটনাটি কোন সময়ের আমি ঠিক জানি না। আমি দু’মাস আগে এটি পেয়েছি।

পুরনো ভিডিও কোন উদ্দেশ্যে ফেসবুকে শেয়ার দিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন: হলের ভেতরে এ ধরনের কর্মসূচি কখনোই কাম্য নয়। এটি একটি উস্কানিমূলক কর্মসূচি। রাজনৈতিক স্লোগান হবে রাজপথে। হলের ভেতর এ ধরনের কর্মসূচি প্রত্যাশিত নয়, তাও আবার অন্য দলের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়ে।

তিনি বলেন: ছাত্রলীগ সবসময় সহাবস্থানের কথা বলে থাকে, কিন্তু স্লোগানে তারা যে ধরনের শব্দ ব্যবহার করেছে তা সহাবস্থানের কথা বলে না। এ ধরনের শব্দের ব্যবহার কোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি হতে পারে না।

‘কোনো উস্কানিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই ভিডিও শেয়ার দেয়া হয়নি। ছাত্রলীগ যে ধরনের শব্দ ব্যবহার করেছে, সেই বক্তব্যের আপত্তি জানিয়ে আমি ভিডিওটি শেয়ার করেছি, অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়।’

এই কার্যক্রমের প্রতিবাদ জানিয়ে আপনাদের কোনো কর্মসূচি আছে কিনা জনাতে চাইলে ফয়েজ বলেন: আমরা নভেম্বরের শেষ দিকে হলে হলে ছাত্ররাজনীতির সংস্কৃতি নিয়ে কর্মসূচি পালন করবো।

ফয়েজ উল্লাহ

তার মতে: হলে সব দলের সহাবস্থান থাকবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু ছাত্রলীগের এ ধরনের কাজ ছাত্র রাজনীতিকে খারাপ জায়গায় নিয়ে যাবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি বেনজির বলেন: ভিডিওটি কোন সময়ের আমি ঠিক জানি না। তবে আমি যতটুকু জানি এটি রোকেয়া হলে ৭ মার্চ ভবন উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী আসার আগের সময়কার।

তিনি বলেন: হলে এখন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের একচেটিয়া অবস্থান। হলের গেস্টরুম যেখানে রাত ৭-৮টার দিকে বন্ধ হয়ে যায়, সেখানে অনেক রাতে ছাত্রলীগের এ ধরনের কর্মসূচি কখনোই কাম্য নায়। আর তারা স্লোগানে তারা যে ধরনের শব্দ ব্যবহার করেছে তা অন্য দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করবে।

বেনজির বলেন: আগে যেখানে যাকে তাকে শিবির তকমা (ট্যাগ) দিয়ে হল থেকে বের করে দেয়া হতো, এখন সেখানে বাম ট্যাগ দিয়ে কাউকে যে বের করে দেয়া হবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এই ট্যাগিংয়ের রাজনীতি কখনোই কাম্য হতে পারে না।

আপনারা এর কোন প্রতিবাদ করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন: আমরা এখনও কোন পদক্ষেপ হাতে নেইনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা হবে। 

রোকেয়া হলের প্রধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জিনাত হুদার সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন: এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা খবর। আমার হলে যেখানে কোন গেস্টরুমই নেই, সেখানে ছাত্রীদের এ ধরনের কর্মসূচি করার কোন সুযোগ নেই।

তিনি বলেন: আপনারা আগের একটা বিষয় নিয়ে এখন কথা বলছেন কেন? প্রধানমন্ত্রী হলে আসার আগে এবং আসার দিন হলে এ ধরনের কোনো কর্মসূচি হয়নি। ছাত্র-ছাত্রীদের যত স্লোগান-কর্মসূচি হয়েছে সব হলের বাইরে। সেসময় কয়েক দিন আমি এবং হলের হাউজ টিউটরগণ হলের প্রতিটি তলায় খোঁজ নিয়েছি যেন কেউ কোনো ধরনের হিংসাত্মক কার্যক্রম চালাতে না পারে।

Exit mobile version