ক্রিমিয়া উপদ্বীপে রাশিয়ার গুলিতে ইউক্রেনের যুদ্ধজাহাজসহ নৌবাহিনীর ৩টি জাহাজ দখল ও ২৩ নাবিককে আহত করার ঘটনায় ইউক্রেনের বেশ কিছু অঞ্চলে সামরিক আইন জারি করেছে দেশটির পার্লামেন্ট।
রুশ সীমান্তবর্তী এলাকা এবং সামরিক লক্ষ্যবস্তু হিসেবে চিহ্নিত অঞ্চলে বুধবার থেকে শুরু এই সামরিক শাসন থাকবে পুরো একমাস, অর্থাৎ ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
রোববার ক্রিমিয়া উপদ্বীপে ইউক্রেনের ৩টি যুদ্ধজাহাজে গুলি করে নিজেদের দখলে নেয় রাশিয়া। এ ঘটনায় দুই দেশই একে অপরকে দায়ী করে।
রুশ সেনাদের দাবি, তাদের জলসীমায় ইউক্রেনের এই নৌ-যানগুলো প্রবেশ করলে তাদের ওপর গুলি চালায় রাশিয়ার নৌ-বাহিনী। পরে দু’টি যুদ্ধজাহাজ এবং একটি টাগবোট জব্দ করা হয়।
রুশ বাহিনী কার্শ প্রণালীতে অবস্থিত সেতুর নিচে একটি ট্যাংকার আড়াআড়িভাবে বসিয়ে পথ বন্ধ করে রেখেছিল। সেটা থেকেই ইউক্রেনীয় গানবোট ও টাগবোটের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল।
এই কার্শ প্রণালীই আজভ সাগরে যাওয়ার একমাত্র পথ। সমঝোতার ভিত্তিতে রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়েই এটি ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে।
তবে ইউক্রেনীয় নৌ-বাহিনী দাবি করছে, জাহাজ দু’টি ইউক্রেনের ওডিসা বন্দর থেকে মেরিপুল বন্দরে স্থানান্তর করা হচ্ছিল আর বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে রাশিয়াকে আগেই জানানো হয়েছিল।
ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদের বৈঠকে দেশটির প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেংকো রাশিয়ার এই কাজকে ‘অপ্ররোচিত এবং পাগলামি’ বলে উল্লেখ করে সামরিক শাসন জারির ব্যাপারে সোমবার দেশটির পার্লামেন্ট সদস্যদের জরুরি ভোট আয়োজন করেন।
ওই ভোটাভুটিতে ইউক্রেনের পার্লামেন্টে সামরিক শাসন জারির জন্য ২৭৬ জন এমপি পক্ষে এবং ৩০ জন এমপি বিপক্ষে ভোট দেন। এর মধ্য দিয়ে সরকার যে কোনো ধরনের র্যালি আয়োজন সীমাবদ্ধ করেছে এবং গণমাধ্যমের ওপর নজরদারি আরোপ করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
কয়েকজন এমপির আশঙ্কা, সামরিক শাসন জারির ধারাবাহিকতায় প্রেসিডেন্ট ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচন স্থগিত করে দিতে পারেন।
তবে এই দাবি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন পোরোশেংকো।
অন্যদিকে এ ইস্যুতে জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে আন্ডার সেক্রেটারি রোজমেরি অ্যান ডিকার্লো রাশিয়ার আচরণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দ্বন্দ্ব এড়াতে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় মিনস্ক সমঝোতা মেনে চলতে রাশিয়াকে আহ্বান জানান তিনি।
জাহাজ আটকের ঘটনাকে রাশিয়ার ‘দায়িত্বহীন আচরনের আরেকটি নজির’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘে মার্কিন প্রতিনিধি নিকি হেলি।