Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

রাশিয়ার আসল মতলবটা কি?

মাত্র দুই মাস আগে নিজেদের আকাশসীমা লঙ্ঘনের কারণে রাশিয়ার একটি যুদ্ধবিমানকে ভূ-পাতিত করে তুরস্ক। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছেন, ফের তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে রুশ যুদ্ধবিমান। এখন তাই অনেকেরই প্রশ্ন, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে রুশদের আসল মতলব কি?

দুই মাসের ব্যবধানে গত শুক্রবার রাশিয়ার এসইউ-৩৪ যুদ্ধবিমান দ্বিতীয়বারের মতো ‍তুরস্কের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে বলে দাবি করেছে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত নভেম্বরে বিমান ভূ-পাতিত করার পর রুশ-তুর্কি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক চরম সীমায় পৌঁছে।

তুরস্কের আকাশসীমা লঙ্ঘনের দাবিকে ‘ভিত্তিহীন প্রোপাগান্ডা’ বলে অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া। কিন্তু কেন রাশিয়া আবার তুরস্ককে উত্তেজিত করার চেষ্টা করলো?

রাশিয়া এন্ড ইউরোশিয়া প্রোগ্রাম অ্যাট দ্য সেন্টার ফর স্ট্যাজিস্টিক অ্যান্ডইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো ‘ক্রিস্টিয়ান সাইন্স’কে বলেন, ‘রাশিয়া সম্ভবত ‍তুরস্ককে এটা দেখাতে চাইছে যে, আগের ঘটনাগুলো থেকে তারা এখনো বিরত নয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘রাশিয়ার বিশ্বাস তুরস্ক হয়তো বিমান ভূ-পাতিত করার মতো ঝুঁকি আবারও নিতে পারে। আর এ ব্যাপারে ন্যাটো অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া না দেখাতে তুরস্ককে চাপ প্রয়োগ করবে।’

নভেম্বরের বিমান ভূ-পাতিতের ঘটনা শেষ পর্যন্ত অনেক দূর পর্যন্ত গড়িয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটোজোটের দেশগুলো যারা বিশ্ব অর্থনীতি এবং নদী-আকাশ পথে অস্ত্রের বেশিরভাগ প্রতিনিধিত্ব করে; তাদের সঙ্গে রাশিয়া মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায়।

কিন্তু সব ন্যাটো দেশগুলো, বিশেষ করে তুরস্ক সম্ভবত তার আকাশসীমায় আক্রমণের আশঙ্কায় ভুগছে এবং এটি রাশিয়ান সামরিক কৌশল দ্বারা তাদেরকে ধীরে ধীরে ঘিরে  ফেলা হচ্ছে বলে অনুভব করছে। এই কদিন আগেও ইউক্রেন সংকটের সময় ক্রেমলিন-আঙ্কারা একে-অপরে ‘কৌশলগত অংশীদার’ ছিল। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের কথা উল্লেখকরে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোগানের ভূয়সী প্রশংসা করতেন।

তাহলে ভবিষ্যতে কী হবে? ম্যানকফ বলেন, ‘আঙ্কারা রাশিয়া সঙ্গে অনুমোদিত সম্পর্ক একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজেই কঠিন করে তুলেছে।’ তাই হয়তো নবনিযুক্ত তুর্কি চীফ অফ স্টাফ হুলুসিআকর বলেছেন, তার দেশ ভয়ানক আগুনের একটি বৃত্তের ভেতরে রয়েছে।’

আর তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়টিকে তুলে ধরেছেন ইস্তাম্বুলের কাদির হাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের এ প্রফেসর। কিন্তু হুলুসিআকরের কথা প্রতিধ্বনি করে রুশ প্রফেসর ম্যানকফ বলেন, এই মুখোমুখি অবস্থানের আগে রুশ-তুর্কি সম্পর্ক বেশ উষ্মই ছিলো। কিন্তু সিরিয়া যুদ্ধই রুশ-তুর্কি সম্পর্কের দাবার পাশা উল্টে দিয়েছে। দুদেশ সিরিয়ায় দুটি পক্ষকে সমর্থন করে। সিরিয়া সরকারকে সমর্থন করে রাশিয়া। আর বিদ্রোহীদের পক্ষ (যুক্তরাষ্ট্রসহন্যাটোও বিদ্রোহীদের পক্ষে) তুরস্ক।

এই অবস্থায় রুশ মিসাইল তাক করে তুরস্কের মিসাইলখাড়া করার পরই তাদের সম্পর্কে উত্তেজনা আরো বাড়ে। বিমান ভূ-পাতিত করার পর রাশিয়া তুরস্কের দিকে সেনা না পাঠিয়ে বরং তুর্কি ওপর অর্থনৈতিকভাবে শাস্তি চাপিয়েছে। এর মধ্যে অবশ্য সিরিয়ার রুশদের প্রক্সিযুদ্ধের হিসেব-নিকেশও রয়েছে।

তুরস্ক ইস্যুকে বড় করে দেখানোকেও একটি কৌশল হিসেবে নিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেন ইস্যু শান্ত হওয়ার পর দেশের জনগণের সমর্থনের জন্য ক্রেমলিনকে আরো একটি বিদেশী শত্রু চিহ্নিত করা জরুরি হয়ে উঠেছিলো।

গত ডিসেম্বরে প্রফেসর ম্যানকফ রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের থিংকট্যাকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছিলেন, রুশ নীতি বাস্তবায়ন করতে হলে তুরস্কে সরকার পরিবর্তন দরকার।সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে কোনো সরকার পরিবর্তন হয় না। কিন্তু এরদোগান ক্ষমতা থেকে যাওয়া না পর্যন্ত রুশ-তুর্কি সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাদের সম্পর্ক এখন রুশ-মার্কিন উপমা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

পুতিন ক্ষমতায় থাকলে রুশ-মার্কিন কথিত সম্পর্ক নূন্যতম স্বাভাবিক হওয়াও সম্ভব হবে না। তবে ইতিহাস বলছে, রাশিয়া যখনই এগিয়েছে তখনই ভুগেছে তুরস্ক। শত শত বছর ধরে রাশিয়ার উন্নতির ‘ব্যাপকভাবে ভুক্তভোগী’ হয়েছে তুরস্ক। আজ রাশিয়ান পুনরুত্থানে আবারো হুমকির সম্মুখীন তারা।

Exit mobile version