সরকার সুন্দরবন এলাকায় একটি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্প নিয়ে সারাদেশে পক্ষে বিপক্ষে অনেক মানুষ। বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধীরা ঢাকায় অর্ধদিবস হরতাল পালন করেছেন। রাজনৈতিক কারণেই দেশে হরতালের মতো বিষয় এখন আর স্বতস্ফূর্ত নয়, হরতালের পরিণতিও তাই হয়েছে। তবু আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশী হামলার ঘটনা ঘটেছে। হরতালের কারণে অন্য কোনো প্রভাব পড়েনি জনজীবনে। এই সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে উন্নয়নের কথা আছে, সরকার তারই ধারাবাহিকতায় ভারতের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে সুন্দরবনের কাছে রামপালে একটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে চায়। পরিবেশবাদী ও দেশের বাম রাজনীতিকরা এই প্রকল্পের বিরোধিতা করছে। তাদের যুক্তি এই প্রকল্পের কারণে সুন্দরবন ধ্বংস হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে। কিন্তু সরকার বলছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সুন্দরবনের কোন ক্ষতি হবে না। আমাদের প্রশ্ন, সরকার কি এই বিষয়টি জনগণকে বোঝাতে পেরেছে? যদি পেরে খাতে তবে কেন এই আন্দোলন, হরতাল? সারা পৃথিবীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ৪১ ভাগ পূরণ করছে। জার্মানি, জাপান, তাইওয়ানের মতো উন্নত দেশগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে শহরের মাঝে, বনাঞ্চল ঘেরা নদীর তীরে কয়লা থেকে নিয়মিত বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। বাংলাদেশের রামপালে সুন্দরবন ও আশেপাশের পরিবেশের কথা মাথায় রেখে, একই উপায়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ ও সংরক্ষণ করা হবে বলে সরকারের দাবি। কিন্তু সরকার এই বিষয়টা খুব ভালো ভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। প্রাকৃতিক দুর্যেোগের কারণে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার সুন্দরবন বিশ্ব হেরিটেজের একটি অংশ। এই সরকারও জলবায়ু নিয়ে বেশ সচেতন। তবে কেন সুন্দরবনের ক্ষতি হতে পারে এমন সিদ্ধান্ত সরকার নেবে? নিশ্চয় সরকারের কাছে অনেক যুক্তি আছে। কিন্তু সরকার তার অবস্থান পরিষ্কার করতে পারেনি বলে মনে হচ্ছে। সরকার যদি এই প্রকল্পের পক্ষে তার অবস্থান সুস্পষ্ট করতে পারত তাহলে হরতালের মতো কর্মসূচি দেখতে হতো না। হরতালের কার্যকর কোন প্রভাব দেখা না গেলেও দেশের সচেতন জনগোষ্ঠির একাংশ এই হরতালে সমর্থন দিয়েছে। এমন অবস্থায় সরকারকে এমন ব্যাখ্যা দিতে হবে যাতে জনগণ আশ্বস্ত হয় যে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প সুন্দরবনের কোন ক্ষতি করবে না। জনগনের কাছে আরো সরকারকে স্বচ্ছ হতে হবে। সরকার কীসের ভিত্তিতে তা করবে আর আন্দোলনকারীরা কীভাবে তা খণ্ডন করবে তা খুব বড় প্রশ্ন।