চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

রাজধানীতে বায়ু দূষণ বেড়েছে ১৭ শতাংশ

২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ঢাকা শহরে বায়ু দূষণ ১৭ শতাংশ বেড়েছে। সংবেদনশীল এলাকায় গড় মান ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে।

সবচেয়ে বেশি দূষিত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে-নিউমার্কেটের মেইন গেট ও তেজগাঁও শিল্প এলাকা।সবচেয়ে কম দূষিত এলাকাগুলো হচ্ছে- আগারগাঁও শিশু হাসপাতাল, পল্লবীর ডি ব্লক।

আজ শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‌‘ঢাকা শহরের ৭০টি স্থানে বায়ু দূষণের মাত্রার পরিমাপ’ শীর্ষক স্টামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) বৈজ্ঞানিক ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংগঠনটির পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।

সংবাদ সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।

বায়ু দূষণের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, প্রাকৃতিক কারণগুলাের মধ্যে আবহাওয়াজনিত ও ভৌগলিক কারণ উল্লেখযােগ্য। মানবসৃষ্ট কারণগুলাের মধ্যে নগর পরিকল্পনায় ঘাটতি, আইনের দুর্বলতা, আইন প্রয়ােগের সীমাবদ্ধতা অন্যতম কারণ। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণকাজের জন্য ৩০ শতাংশ, ইটভাটা ও শিল্প কারখানায় ২৯ শতাংশ, যানবাহনের কালাে ধোঁয়ায় ১৫ শতাংশ, আন্তঃদেশীয় বায়ু দূষণে ১০ শতাংশ এবং গৃহস্থালী ও রান্নার চুলা থেকে নির্গত ধোয়া থেকে ৯ শতাংশ বায়ু দূষণ হয়ে থাকে।

গবেষণা ফলাফলের তথ্যমতে, ২০২০ সালে ভূমি ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে ঢাকা শহরের ৭০টি স্থানের বায়ুর মান হিসেবে ঢাকা শহরের ১০টি সংবেদনশীল, ২০টি আবাসিক, ১৫টি বাণিজ্যিক, ২০টি মিশ্র ও ৫টি শিল্প এলাকার বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করা হয়। সামগ্রিকভাবে দেখা যায় যে, ২০২০ সালে ঢাকা শহরের ৭০টি স্থানের গড় বস্তুকণা, ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৩৩৫.৪ মাইক্রোগ্রাম। যা বস্তুকণা ২.৫ এর আদর্শ মানের চেয়ে প্রায় ৫.২ গুণ বেশি। বস্তু কণার জন্য পরিবেশ অধিদফতরের নির্ধারিত জাতীয় আদর্শ বায়ুমান (দৈনিক) প্রতি ঘনমিটারে ৬৫ মাইক্রোগ্রাম।

আরও বলা হয়, ২০১৯ এর তুলনায় ২০২০ সালে ঢাকা শহরের ৭০টি স্থানের মধ্যে মিশ্র এলাকার নিউমার্কেট মেইন গেটের সামনে প্রায় ২০২ শতাংশ, বাণিজ্যিক এলাকার এলিফেন্ট রােড সুবাস্তু আর্কেডের সামনে ৮৩.১ শতাংশ ও বাংলা মােটর ভিআইপি রােডে ৭৮.৩ শতাংশ বায়ু দূষণ (বায়ুর গড় মান) বৃদ্ধি পেয়েছে।

অপরদিকে সংবেদনশীল এলাকার বাংলাদেশ সচিবালয়ের সামনে ৩১.৯ শতাংশ, মিশ্র এলাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে ২৯.৫ শতাংশ এবং আবাসিক এলাকার তাঁতীবাজার, কোতােয়ালি, পুরান ঢাকায় ২৯.১ শতাংশ বায়ু দূষণ হ্রাস পেয়েছে। শতাংশের ভিত্তিতে পর্যালােচনা করলে দেখা যায়, মিশ্র এলাকার বায়ু দূষণ ২০১৯ এর তুলনায় ২০২০ সালে প্রায় ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

অপরপক্ষে সংবেদনশীল এলাকায় গড় মান ২০১৯ এর তুলনায় ২০২০ সালে দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ঢাকার বাতাসে অতি সূক্ষ্ম বস্তু কণার (২.৫) পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। এটি সাধারণ জীবাশ্ম জ্বালানি বা যানবাহন, শিল্পকারখানা ও বর্জ্য পোড়ানো থেকে সৃষ্টি হয়। তবে নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলাবালি রাস্তার গাড়ির চাকার সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে অতি ক্ষুদ্র ধূলিকণায় রূপান্তরিত হতে পারে।

বায়ু দূষণ রোধে সরকারের কাছে সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনটি ভাগে বেশকিছু সুপারিশ জানানো হয়। সুপারিশগুলো হচ্ছে–

স্বল্পমেয়াদী পদক্ষেপ
ব্যক্তিগতভাবে সুরক্ষার জন্য উন্নত মাস্ক ব্যবহার করা। শিশু, অসুস্থ ও গর্ভবতী নারীদের সাবধানতা অবলম্বন করে চলা। শুষ্ক মৌসুমে সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা ও পরিবেশ অধিদফতরের সমন্বয়ে ঢাকা শহরে প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরপর পানি ছিটানাের ব্যবস্থা করা। নির্মাণকাজের সময় নির্মাণস্থান ঘেরাও দিয়ে রাখতে হবে ও নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে নেওয়া। রাস্তায় ধুলা সংগ্রহের জন্য সারকশন ট্রাকের ব্যবহার করা। অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করা। ব্যক্তিগত গাড়ি ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, প্রয়ােজনে নম্বর প্লেট অনুযায়ী জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে গাড়ি চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া এবং বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে সবার আগে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করা।

মধ্যমেয়াদী পদক্ষেপ
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রচুর গাছ লাগাতে হবে এবং ছাদ বাগান করার জন্য সকলকে উৎসাহিত করতে হবে। ঢাকার আশেপাশের জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে। আলাদা সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করতে হবে। আগুনে পােড়ানাে ইটের বিকল্প হিসেবে সেন্ড বক্সের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হবে। সিটি গভর্নেন্সের প্রচলনের মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কাজের সমন্বয় করতে হবে এবং সেবা সংস্থার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্বল্প সময়ে শেষ করতে হবে।

দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ
নির্মল বায়ু আইন-২০১৯ যতদ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণ ও সচেতনতা তৈরির জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নিয়মিত বায়ু পর্যবেক্ষণ স্টেশনের (ক্যামস) ব্যাপ্তি বাড়িয়ে ঢাকা শহরের সব এলাকাকে এর আওতাধীন করতে হবে। এছাড়াও বায়ু দূষণের পূর্বাভাস দেওয়ার প্রচলন করতে হবে। সর্বোপরি সচেতনতা তৈরির জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে বায়ু দূষণ সম্পর্কে আরও বেশি তথ্যনির্ভর অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশের বায়ু দূষণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। লােকবল সঙ্কট নিরসনে প্রত্যেক উপজেলায় একজন পরিবেশ কর্মকর্তা নিয়ােগ দিতে হবে এবং এটি নিশ্চিত করার জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক বিসিএসে পরিবেশ ক্যাডার অন্তর্ভুক্ত করা।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী, বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস ও স্থপতি ইকবাল হাবিব এবং বাপার বায়ু, শব্দ ও দৃষ্টি দূষণ কমিটির সহ-আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল।