ভয়ঙ্কর এক পরিস্থিতি মোকাবিলা করে জীবনযুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সহায়-সম্বল আর স্বজনহারা রাঙামাটির পাহাড়ের মানুষ। নতুন স্বপ্ন নিয়ে সরকারী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া মানুষগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার। কিছুদিনের মধ্যেই তাদেরকে ছাড়তে হবে আশ্রয়কেন্দ্র। ফিরতে হবে নিজেদের ঠিকানায়। তবে এরই মধ্যে অনাবিল আনন্দের উৎস হয়ে তাদের মাঝে আসে ঈদ উল ফিতর। সেই ঈদের অানন্দে তারা কিছুটা হলেও ভুলেছে পাহাড় ধসের দুঃসহ স্মৃতি। কয়েকদিন অাগেও তাদের চিন্তায় ছিল ঈদে কী খাবেন, কী পরবেন। কিন্তু সরকারের উদ্যোগে আর সেনাবাহিনীর সহায়তায় শেষ পর্যন্ত তাদেরকে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে হয়নি। সে চিত্র উঠে এসেছে চ্যানেল আই অনলাইনের প্রতিবেদনে। ঢাকা থেকে পাঠানো প্রতিবেদক নাসিমুল শুভ দু’দিন ধরে আশ্রয়কেন্দ্রের চিত্র তুলে ধরেছেন। তার প্রতিবেদনগুলো থেকে আমরা জানতে পারি, ঈদের আগের দিন আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মুসলিমদের জন্য এসেছিল শাড়ি ও পাঞ্জাবি। আর একই ছাদের নিচে মাথাগোঁজা পাহাড়িদের জন্য পিনন, লুঙ্গি ও গেঞ্জি। ঈদের দিন সেমাই, পাউরুটি আর জুস দিয়ে শুরু হয় তাদের ঈদ আনন্দ। এরপর দুপুরে আসে পোলাও, মুরগির মাংস, ডিমের কোরমা আর কোমল পানীয়র সঙ্গে ফল। নতুন শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে পরিবার-সন্তানদের নিয়ে দিনটা আনন্দের সঙ্গেই কাটে আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষগুলোর। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদেরকেও সাজানো হয় নতুন সাজে। নতুন জামা আর মায়ের ব্যাগে থাকা ফেসপাউডার, লিপস্টিকে নিজেদের সাজিয়ে নেয় তারা। এ আনন্দ শুধু দুর্গত মানুষদেরই নয়; তাদেরকে যারা নানাভাবে সাহায্য করছে; দুবেলা খাবার তুলে দিচ্ছে, আনন্দের হাসি সেইসব মানুষের মুখেও। বিশেষ করে সেনাবাহিনীর সদস্যদের কথা বলতেই হয়। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাবার বিলির কাজ শেষ করে অন্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে নিয়ে তারাও একসঙ্গে খেতে বসে যান। এমন দৃশ্য অামাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস যোগায়। আমরা বিশ্বাস করি যেকোন জাতীয় দুর্যোগে সবাই মিলে কাজ করলে শত দুঃখের মাঝেও দুর্গত মানুষদের মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব। রাঙামাটির পাহাড় ধসে ৬ সেনাসদস্যসহ ১২০ জন নিহত হওয়ার পর পাহাড়ি-বাঙালি এক হয়ে যেভাবে কাজ করেছে; তা আমাদের নতুন করে দেখিয়েছে সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানুষ আর মানবতা। এ ঈদের দিনে আমরা সেই মানবতার জয়গান গাই।