অনুমোদিত রাইড-শেয়ারিং নীতিমালা অনুযায়ী উবার,পাঠাওয়ের মতো অ্যাপে চলা গাড়িগুলোকে এখন থেকে ২০১০ সালের ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস নীতিমালা মেনে ভাড়া নিতে হবে। নীতিমালা অনুমোদন করায় সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছে উবার। অ্যাপভিত্তিক রাইড-শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত নীতিমালা নিয়ে যাত্রীদেরও তেমন কোন মাথাব্যাথা নেই। যাত্রীদের আপত্তি নতুন নীতিমালায় ভাড়া নির্ধারণ নিয়ে। তবে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) বলছে বেশি ভাড়া গুনতে হবে না।
কারণ ট্যাক্সিক্যাব নীতিমালায় এসি গাড়ির জন্য প্রথম দুই কিলোমিটার ৬০ টাকা এবং নন-এসি গাড়ির জন্য ৫০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া আছে। নির্ধারিত এই ভাড়াকে সর্বোচ্চ ভাড়া জানিয়ে বিআরটিএ জানিয়েছে সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। তাই অ্যাপভিত্তিক রাইড-শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতার স্বার্থে সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণের সুযোগ আছে।
সোমবার মন্ত্রীসভায় রাইড-শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা অনুমোদন পাওয়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে উবার,পাঠাওয়ের নিয়মিত যাত্রীদের অনেকেই ভাড়া বাড়বে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন। বনানীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা মিরপুরের রেজওয়ানা রাশেদ, সপ্তাহে ৫-৬ দিন মহাখালীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া ধানমন্ডির বাসিন্দা ইশরাক রাইডশেয়ারিং অ্যাপের গাড়িতে গন্তব্যে পৌঁছান।
নতুন নীতিমালায় বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে এই আশঙ্কা তুলে ধরে তারা জানান, অ্যাপভিত্তিক সার্ভিসগুলোর সর্বনিম্ন ভাড়া ৪০ টাকা অথচ ২০১০ সালের ট্যাক্সিক্যাব নীতিমালায় সর্বনিম্ন ভাড়া (এসি) ৬০ টাকা এবং নন-এসি ৫০ টাকা।
যাত্রীদের বিভ্রান্তি দূরে করে ট্যাক্সিক্যাব নীতিমালার ভাড়া সংক্রান্ত অনুচ্ছেদের কোথাও সর্বনিম্ন ভাড়া লেখা নেই জানিয়ে উবার,পাঠাওয়ের যাত্রীদের আশ্বস্ত করেছেন বিআরটিএ’র সচিব মুহাম্মদ শওকত আলী।
রাইড-শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর বর্তমান ভাড়া এবং ট্যাক্সিক্যাব নীতিমালায় নির্ধারিত ভাড়া প্রসঙ্গে চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: উবার,পাঠাও এগুলো আগে নীতিমালা ছাড়াই চলেছে। সেজন্য তারা নিজেদের মতো করে ভাড়া নির্ধারণ করেছে। সেটা কম করেছে নাকি বেশি করেছে সেসব নিয়ে আমাদের আইডিয়া নাই। এখন ভাড়া হবে ট্যাক্সিক্যাব নীতিমালা অনুযায়ী। এই নীতিমালায় সর্বোচ্চ ভাড়াসীমা দেয়া আছে, সর্বনিম্ন ভাড়া সীমা দেয়া নাই। সর্বোচ্চ ভাড়ার নিচে কেউ ৩০ টাকা,৪৫ টাকা দিলেও কোন সমস্যা নাই।
তবে নীতিমালা হওয়ার পর রাইড-শেয়ারিং কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন সরকারি ফি দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন: এখন রাইড-শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো আইনের আওতায় এসেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন ট্যাক্স দিতে হবে-ফি দিতে হবে, নবায়ন ফি দিতে হবে, এনলিস্টমেন্ট ফি দিতে হবে। কাজেই খরচও বাড়বে।
এই খরচের ভার শেষপর্যন্ত সাধারণ যাত্রীদেরই বহন করতে হবে এমন শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। সর্বোচ্চ-সর্বনিম্ন ভাড়া নিয়ে অস্বচ্ছ ধারণার পাশাপাশি বাড়তি শঙ্কা যোগ করেছে ওয়েটিং চার্জ প্রসঙ্গ। কারণ যেখানে অ্যাপভিত্তিক কোম্পানিগুলোর প্রতি মিনিট ওয়েটিং চার্জ ৫০ পয়সা থেকে এক টাকা, সেখানে ট্যাক্সিক্যাব নীতিমালায় ৩ টাকা থেকে ৩ টাকা ৭৫ পয়সা।
উবারের সাধুবাদ
তবে সরকারের রাইড-শেয়ারিং নীতিমালাকে সাধুবাদ জানিয়েছে সুপরিচিত রাইড-শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান উবার।
চ্যানেল আই অনলাইনকে পাঠানো এক মেইল বার্তায় উবারের মুখপাত্র বলেন: ঢাকা ও ঢাকা ছাড়িয়ে শহুরে যাতায়াত ব্যবস্থাকে সুবিন্যস্ত করতে সরকারের উদ্দেশ্য এবং দৃষ্টিভঙ্গিকে আমরা স্বাগত জানাই। উবার আরোহীদের আরও উন্নত যাতায়াতের সুযোগ, অংশীদার চালকদের সামনে আরও আর্থিক সম্ভাবনা নিয়ে আসার মাধ্যমে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর ঢাকায় ব্যক্তিগত যানবাহন দিয়ে যাত্রীসেবা দেওয়া শুরু করে মোবাইল অ্যাপভিত্তিক প্রতিষ্ঠান উবার। তার আগে একইভাবে মোটর সাইকেলে যাত্রীসেবা দেওয়া শুরু করে স্যাম। পরে আসে পাঠাও। এসব সেবা দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
বিআরটিএ প্রথমে স্যামকে তাদের কার্যক্রম বন্ধের নোটিশ দেয়। পরে উবারকেও একই ধরনের চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়, বাংলাদেশের আইনে তাদের ওই কার্যক্রম নিষিদ্ধ। এরপর ২৯ নভেম্বর উবার ও স্যাম-এর প্রতিনিধিরা বিআরটিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেন।
মোবাইল অ্যাপভিত্তিক যাত্রীসেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নীতিমালার আওতায় আনতে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খসড়া তৈরি শুরু করে বিআরটিএ।
বিআরটিএ-এর এনফোর্সমেন্ট বিভাগের পরিচালককে প্রধান করে একটি কমিটি এই খসড়া নীতিমালা তৈরি করে। গত ২১ জুন এটি বিআরটিএ থেকে সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সোমবার তা সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পেল।