সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন এবং দোষীদের বিচারের সম্মুখীন করতে না পারলে র্যাবের সফলতা কিছুটা হলেও ম্লান হবে বলে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট।
এই হত্যা মামলাটি বাতিল চেয়ে আসামী তানভীর রহমানের করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে দেয়া আদেশে এ কথা বলেছেন উচ্চ আদালত।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ আগামী ৪ মার্চের মধ্যে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা আদালতকে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন।
সেই সঙ্গে এ মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক মো. তানভীর রহমানের সম্পৃক্ততার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এবং তানভীর রহমানকে নিম্ন আদালতে স্বশরীরে হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে আইনজীবীর মাধ্যমে তাকে হাজিরা দিতে বলা হয়। এবং এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৪ মার্চ দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আজ হাইকোর্ট তার আদেশে বলেন: ‘দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হলেও তদন্তের মাধ্যমে মামলার রহস্য উদ্ঘাটিত না হওয়া এবং অপরাধীদের চিহ্নিত, গ্রেপ্তার এবং বিচারের সম্মুখীন না করতে পারা নিঃসন্দেহে দুঃখ ও হতাশার বিষয়। প্রযুক্তিনির্ভর অভিজাত ও চৌকস বাহিনী হিশেবে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান র্যাব দেশের জঙ্গি, সন্ত্রাস, মাদক, বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার, ভেজাল প্রতিরোধসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অনন্য সফলতা কিছুটা হলেও ম্লান হবে, যদি এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও দোষীদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করে বিচারের সম্মুখীন করতে না পারে।’
হাইকোর্ট তার আদেশে আরো বলেন: ‘আদালত প্রত্যাশা করছে যে, র্যাব অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে হত্যা রহস্য উন্মোচন ও প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করে বিচারে সোপর্দ করতে সক্ষম হবে। বিশেষায়িত এই বাহিনী ব্যর্থতার দায়ভার বহন করুক এটা কারোরই কাম্য নয়।’
আজ আদালতে তানভীরের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সরওয়ার হোসেন বাপ্পী।
এর আগে সাগর-রুনি হত্যায় সন্দেহভাজন হিসেবে অভিযোগ ওঠা তানভীর রহমান নামের এক ব্যক্তির মামলা বাতিল চেয়ে করা আবেদনের শুনানির পর এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন হাইকোর্ট। সে অনুযায়ী গত ১১ নভেম্বর হাইকোর্টে হাজির হন এ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শফিকুল আলম।
আদালতে এ কর্মকর্তা বলেন: ‘তদন্ত চলছে। চারটি ডিএনএর নমুনা এফবিআইয়ের সনদপ্রাপ্ত একটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে দুটি নমুনা আসামিদের সঙ্গে মেলেনি। বাকি দুটি নমুনা প্রকাশিত হয়নি। যে কারণে নমুনা পুনরায় এফবিআইয়ের সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। এরপর আদালত ১৪ নভেম্বর এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন। সে ধারাবাহিকতায় আজ আদেশ দেন হাইকোর্ট।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাড়িতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়। সাগর মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডের সময় বাসায় ছিল তাঁদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ। এই হত্যাকাণ্ডের পর সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
এ মামলায় মোট আটজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা হলেন রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মো. সাইদ, মিন্টু, কামরুল হাসান ওরফে অরুণ, সাগর-রুনির ভাড়া বাসার নিরাপত্তা প্রহরী এনামুল, পলাশ রুদ্র পাল এবং নিহত দম্পতির বন্ধু তানভীর রহমান। এদের মধ্যে প্রথম পাঁচজনই মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র হত্যার ঘটনায় র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তার হন। প্রথম পাঁচজন ও নিরাপত্তারক্ষী এনামুল এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
এদিকে এ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ৬৯ বারের মত পিছিয়ে আগামী ৩০ ডিসেম্বর নতুন দিন ধার্য করেছেন ঢাকার সিএমএম আদালত।