‘এল ক্লাসিকো’কে যদি বিশ্বের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ দ্বৈরথের পাশাপাশি সবচেয়ে অনিশ্চিত ফুটবল লড়াইও বলা হয়, খুব একটা ভুল বলা হবে না। রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা যখন মুখোমুখি হয় তখন কেউই নিজেদের ফেভারিট ভাবতে পারে না! গত কয়েকটি ক্লাসিকোতে সেটি আরও বেশি করে প্রমাণ হয়েছে।
গত মৌসুমের শেষ এল ক্লাসিকোতেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে ঘরের মাঠে হার দেখেছে রিয়াল। মৌসুম দুয়েক আগে ন্যু ক্যাম্পে লস ব্লাঙ্কোসদের কাছে হেরেছিল বার্সাও। লড়াইটা এত হাড্ডাহাড্ডি হয় যে, শেষ বাঁশি বাজার আগে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলে না।
দুয়ারে কড়া নাড়ছে ফুটবলপ্রেমীদের রোমাঞ্চে ভাসানো আরেকটি ক্লাসিকো। স্প্যানিশ সুপার কাপের প্রথম লেগে বাংলাদেশ সময় রোববার রাত ২টায় মুখোমুখি হচ্ছে বার্সা-রিয়াল। যাতে স্পষ্ট ফেভারিট না হলেও রিয়াল খানিকটা এগিয়ে থেকেই মাঠে নামবে।
ফুটবল বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে উঠে আসা এমন ৫টি কারণ দেখে নেয়া যাক, যাতে ন্যু ক্যাম্পে খানিকটা এগিয়ে থেকেই নামবে রিয়াল-
রোনালদোর ফেরা
কর ফাঁকির মামলায় স্পেন ছাড়তে চেয়েছিলেন। পরের মৌসুমে রিয়ালের জার্সি গায়ে মাঠে নামা নিয়েও ছিল সংশয়। সব জল্পনা-কল্পনা দূর করে আবারও লস ব্লাঙ্কোস শিবিরেই ফিরেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। বার্সার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে নতুন মৌসুম শুরু করবেন সিআর সেভেন। তাকে ছাড়া প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতির সবকটি ম্যাচে হেরেছে জিদানের দল। রোনালদোর ফেরার গুরুত্ব লুকিয়ে এখানেই। গত মৌসুমের শেষভাগে যে ঝলক দেখিয়েছিলেন, তার ছিটেফোঁটাও যদি মেসিদের বিপক্ষে দেখাতে পারেন কপালে দুঃখ আছে বার্সার। তবে লম্বা একটা বিরতির পর আবারও মাঠে ফিরে রোনালদো গত মৌসুমের ফর্মটা টেনে আনতে পারবেন কিনা সেটা নিয়েও একটা ‘কিন্তু’ থেকেই যাচ্ছে!
নেইমার নামের আপদ না থাকা
গত কয়েকটি ক্লাসিকোতে সবচেয়ে ধারাবাহিকদের একজন নেইমার। এই মৌসুমে ন্যু ক্যাম্পে নেই তিনি। ব্রাজিলিয়ান তারকার না থাকায় বেশ খুশি রিয়াল ডিফেন্ডাররাও। কারণটা হয়ত বলে দেয়ার প্রয়োজন পড়ছে না। রিয়াল অধিনায়ক সার্জিও রামোস নিজেই তো বলেছেন, ‘আমি খুশি, নেইমার নামের এক বিশাল আপদকে আর সামলাতে হবে না।’ নেইমারের শোকে একরকম শোকার্ত অবস্থায়ই মেসি-সুয়ারেজদের ড্রেসিংরুম। এ নিয়ে একটু খোঁচাও দিয়েছেন জিদান। বলেছেন, বার্সায় অন্য যে কেউই আসুক, যত ভালই খেলুক কিন্তু নেইমার হতে পারবে না। কথাটার প্রমাণ হয়ত রোববার রাতেই প্রমাণ করে দিতে পারে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা।
আছেন এক জিদান
চরম দুঃসময়ে কাণ্ডারি হয়ে রিয়ালের হাল ধরেছিলেন জিনেদিন জিদান। দায়িত্ব পেয়েই দলের চেহারা আমূল বদলে ফেলেছেন ফরাসী কিংবদন্তি। একমাত্র কোচ হিসেবে জিতেছেন টানা দুই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা। চার বছরের হাহাকার ঘুচিয়ে রিয়ালকে এনে দিয়েছেন লা লিগাও। কদিন আগে ম্যানইউকে হারিয়ে উয়েফা সুপার কাপের শিরোপাও জিতেছেন। শক্ত হাতে সামলাচ্ছেন রোনালদোদের ড্রেসিংরুম। ফরাসী কিংবদন্তির কোচিং জ্ঞান আর কৌশলটা নিশ্চিতভাবেই রিয়ালের জন্য বাড়তি পাওয়া।
বার্সার রক্ষণ যখন বেহুলার বাসরঘর
কাতালানদের আক্রমণ শক্তি নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু রক্ষণ নিয়ে সমালোচনা করা যায় বিস্তর। পিকে, হাভিয়ের মাশ্চেরানোরা যেন দিন দিন বুড়িয়ে যাচ্ছেন! গত মৌসুমে প্রচুর গোল পেয়েছে বার্সা। গোল খেয়েছেও বেশ ভাল পরিমাণে। দানি আলভেজের অভাব পূরণ করতে দলে টানা হয়েছে নেলসন সেমেদোওকে। এই রাইটব্যাক কতটা প্রস্তুত তার একটা পরীক্ষা নিতে প্রস্তুত রিয়াল। পরীক্ষাটা আসলে গত দুই মৌসুম ধরে ধুঁকতে থাকা পুরো বার্সা রক্ষণেরই।
রিয়ালের শিরোপা ক্ষুধা
মৌসুম শুরুর আগেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হারিয়ে উয়েফা সুপার কাপ জিতেছে রিয়াল। গত মৌসুমের ধারটা যে একটুও কমেনি সেটাই সামনে এসেছে এতে। আরেকটি সুপার কাপ জেতার হাতছানি যখন, জিদান দলকে এগিয়ে রাখছে শিরোপা ক্ষুধার বিষয়টি। শিষ্যদের ভেতর শিরোপা ক্ষুধা যেভাবে ঢুকিয়ে দিয়েছেন জিজু, তাতে যে দলই সামনে পড়ছে, স্রেফ উড়ে যাচ্ছে। বার্সাকেও সেটির আরেক ঝলক দেখাতে ঝাঁপিয়েই পড়বে ব্লাঙ্কোসরা।