কখনও ইউরোপের নেতাদের দুর্বল বলে আলোচনায় আসা আবার কখন মেক্সিকানদের রেপিস্ট এমনকি পুরো আফ্রিকা মহাদেশকে অবঞ্চিত বলে আলোচনায় এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও আসন্ন দেশটির জাতীয় নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরও যে দেশটিতে বিভিন্ন কমিউনিটি থেকে তিনি সমর্থন পাচ্ছেন না বিষয়টি এমন নয়।
বিশেষ করে সাউথ-ইস্ট এশিয়ানের মধ্যে যাদের চীন বিরোধী দীর্ঘ দিনের মানসিকতা রয়েছে সেসব কমিউনিটির সমর্থন পাচ্ছেন ট্রাম্প।
বিবিসির সাউথ এশিয়া বিষয়ক প্রতিনিধি আন্ড্রেয়াস ইলমার এর একটি নিবন্ধন সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকটি যুক্তিযুক্ত কারণ দেখিয়ে বলা হয়েছে, কেন এ সকল কমিউনিটির মানুষেরা ট্রাম্পকে সমর্থন দিবেন।
হংকং
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে ট্রাম্পের বিকল্প দেখছেন না যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত হংকংয়ের প্রবাসীরা। তাদের একটি বদ্ধমূল ধারণা সিসিপি’র বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যে মধ্যে ট্রাম্প সব থেকে যোগ্য ব্যক্তি।
নতুন একটি সুরক্ষা আইন পাসকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি উত্তাল হয়ে ওঠে হংকং। যেখানে হংকংয়ের গণতন্ত্রকামীদের বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ আইনের বিরুদ্ধে যারাই রাস্তায় নেমেছে চীন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর দমনপীড়ন নীতি অনুসরণ করে। আন্তর্জাতিক মহল ট্রাম্প চীনা পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে।
হংকংয়ের একজন গণতন্ত্রপন্থী নেতা এরিকা ইউয়েন সম্প্রতি বিবিসিকে জানিয়েছেন, চারবছর আগে যখন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করলো তখন আমি ভেবেছিলাম যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ পাগল হয়ে গেছে। সে সময়টাতে আমি ডেমোক্রেট সমর্থক ছিলাম। কিন্তু এখন আমি ট্রাম্পকে সমর্থন করি।
ব্যবসায়ী এ গণতন্ত্রপন্থী নারী এরিকা বলছেন, আমরা এমন একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট চাই যিনি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতে সক্ষম। সে বিবেচনায় আমরা ট্রাম্পকে সমর্থন দিচ্ছে।
তাইওয়ান
তাইওয়ানের বিষয়টিকে ইলমার ব্যাখ্যা করেছেন এমনভাবে- তারা এমন একজন বড় ভাই চাইছেন যার ওপর তারা নির্ভর করতে পারে।
তাইওয়ানের জনগণ মনে করে চীন তাদের ঘাড়ের ওপর চেপে বসেছে, হরণ করেছে স্বাধীনতা। সম্প্রতি সময়ে তাইওয়ানের ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠেছে। আর চীন মনে করে তাইওয়ান আলাদা কোন দেশ নয়, চীনের অবিচ্ছিন্ন একটি ভূখণ্ড। ১৯৪০ সালে তাইওয়ান ইস্যুকে গৃহযুদ্ধ সংগঠিত হয়। কিন্তু বর্তমানে চীন ঘোষণা দিয়ে রেখেছে চীন জোর করে হলেও এ দ্বীপ অঞ্চলে দখল নিজেদের আওতায় রাখবে।
এরমাঝে তাইওয়ানের ওপর চীনের বাণিজ্য শুল্ক আরোপ এবং বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা চীনা বিরোধী মনোভাব আরও প্রকোট করেছে।
ভিক্টর লিন তাইওয়ানের একজন ই-কমার্স উদ্যোক্তা, তিনি বিবিসিকে বলছেন: ডোনাল্ড ট্রাম্পের পদক্ষেপগুলো আমাদের জন্য ভালো, আমরা তার ওপর আস্থা রাখতে পারি। বিশেষ করে সামরিক এবং বাণিজ্যিক দিক থেকে ট্রাম্প আমাদের আস্থা অর্জন করেছেন। ট্রাম্প অনেকটা আমাদের সেই বড় ভাইয়ের মতো যার ওপর আমরা আস্থা রাখতে পারি।
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের বিদেশনীতিতে তাইওয়ান সম্প্রতি সময়ে বেশ গুরুত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। শেষ কয়েক মাসে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বড় বাণিজ্যিক চুক্তিও সাক্ষর হয়েছে।
ভিয়েতনাম
সাউথ ইস্ট এশিয়ায় চীনা হুমকির মুখে রয়েছে যে কয়েকটি দেশ তার মধ্যে অন্যতম ভিয়েতনাম। গত ৫০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ই ভিয়েতনামের মাটিতে যুদ্ধ করেছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের বিশ্বাসের জায়গা অর্জন করতে পেরেছে।
বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ভ্লগার লিনহ এনগুইনের মতে ভিয়েতনামে ট্রাম্পের সমর্থকরা দু’টি ধারায় বিভক্ত। যাদের একটি অংশ ট্রাম্পের বিভিন্ন সময়ের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এবং গ্লামারে কারণে পছন্দ করে।
আর একটি অংশ যারা ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক। যারা মনে করছে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে ট্রাম্প একমাত্র বিকল্প যিনি তাদের (সিসিপি) আগ্রাসী বৈদেশিক নীতির পথে বাধা হতে পারেন।
জাপান
জাপানের নাগরিকদের একটি অংশ তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ট্রাম্পকে অপরিহার্য মনে করে। জাপান দীর্ঘ সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষিত মিত্র এবং বাণিজ্যিক অংশিদার। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর তাদের এ বিশ্বাসের জায়গায় চির ধরে। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরপরই বহুপাক্ষিক ট্রান্স-প্যাসিফিক বাণিজ্যিক চুক্তি বাতিল করেন এবং দেশটিতে থাকা মার্কিন সেনাদের জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করতে বাধ্য করেন।
জাপানের একজন জনপ্রিয় ইউটিউবার ইয়োকো ইশি তার এক মন্তব্যে বিবিসি’ক বলেছেন: ট্রাম্প আমাদের মিত্র এবং সব বিবেচনা ছাড়িয়ে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ট্রাম্পের কোন বিকল্প নেই।
এসব বিবেচনায় আন্ড্রেয়াস ইলমার তার প্রতিবেদনে এসকল কমিউনিটির ভোট ট্রাম্পের ঝুলিতে যাওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন।