Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বার্নিকাটের বক্তব্য

মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী;
সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, অংশীদারগণ, গণমাধ্যমের সদস্যগণ, ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রমহোদয়গণঃ আসসালামু আলাইকুম, নমস্কার এবং শুভ সন্ধ্যা।  আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই।

পরিচিতিমূলক বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ক্যাথরিনকে ধন্যবাদ।

আজকের এই সন্ধ্যার আলোকসজ্জা দেখে আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন, এ বছরের আমাদের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের বিষয় হল “মহা নদী।”  আমাদের উভয় দেশেই রয়েছে বিশ্বের বিশাল কিছু নদী।  এই নদীগুলো যুগের পর যুগ ধরে টিকে রয়েছে এবং রেখেছে আমেরিকান ও বাংলাদেশিদের অনুপ্রাণিত করেছে।  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর “যমুনার শাশ্বত সংগীত” উদযাপন করেছেন।  তিনি পদ্মাকে স্মরণ করেছেন এভাবে, “বাংলার আলোকিত আকাশ, এই দখিনা বাতাস, নদীর এই স্রোত, এই সঠিক সম্রাজ্ঞীসম অলসতা, দিগন্ত বিস্তৃত অবকাশ এবং সবুজ পৃথিবী থেকে নীলাকাশ -– এসবই যেন ক্ষুধার্ত এবং তৃষ্ণার্তের জন্য খাদ্য এবং পানীয়র মতো।”  এই দুটি নদী এবং মেঘনা মিলে তৈরী হয়েছে পরাক্রমশালী ত্রয়ী যা দেশটিকে দিয়েছে সৌন্দর্য্যএবং কৃষিকে করেছে প্রাচুর্যশালী।

এদিকে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রায় সমসাময়িক মার্ক টোয়েন মিসিসিপি নদীর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেছেন।  এই নদীর উপকূলে গড়ে ওঠা শহরগুলোকে টোয়েন বর্ণনা করেছেন “শান্ত, পরিচ্ছন্ন, সুগঠিত ও দৃষ্টিনন্দন এবং চিত্তাকর্ষক” হিসেবে।  তিনি বলেছেন, “মিসিসিপি উপত্যকা স্বপ্নের দেশের মতো স্বর্গীয়, শান্তিদায়ক… যেখানে চিন্তিত হওয়ার কোন অবকাশ নেই।”

যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ যে ইতিহাস এবং সংস্কৃতির অংশীদার আমাদের জীবনে নদীর ভূমিকা তার একটি অংশ মাত্র।  আজকে আমরা মিলিত হয়েছি আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য।  এটি এমন একটি মূহূর্ত যখন বিখ্যাত চিন্তাবিদগণ ফিলাডেলফিয়াতে মুক্তমত এবং ভিন্ন মত, বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকারী একটি জাতির স্বপ্নবীজ বুনেছিলেন।  আমি বলতে চাই এই বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ উভয় দেশের জন্যই প্রযোজ্য।  এবং আমি একটি কথা যোগ না করে পারছি না যে এই দুটি ভূখণ্ডই একসময় ব্রিটিশ শাসিত ছিল… আপনাকে দেখে ভালো লাগছে হাই কমিশনার ব্লেইক!…  একটি ঐতিহ্য যা আমাদের বিচার ব্যবস্থা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে।  যদিও কিছু কারণে আমাদের দুই দেশের মধ্যে বাংলাদেশই কেবল ক্রিকেট নিয়ে গভীর আগ্রহ এবং মেধা ধারণ করে চলেছে!

আমাদের দুই দেশের প্রতিষ্ঠাতাগণ –- লক্ষ্য  করুন আমি “প্রতিষ্ঠাতা পিতাগণ”বলিনি, কেননা আমাদের জাতির জন্মলগ্নে নারীরাও সমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন –- বুঝতে পেরেছিলেন যে বৈচিত্র্য এবং ভিন্নমতের মধ্যেও শক্তি রয়েছে।

পেনসিলভানিয়ার খ্রিষ্ট ধর্মীয় কোয়েকারগণ যারা ম্যাসাচুসেটসে চার্চ অব ইংল্যান্ডের সংস্কার দাবি করেছিলেন — যাদেরকে আমরা তীর্থযাত্রী বলি — তাঁরা অন্যান্য ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারীদের মতো আমেরিকায় আগমন করেছিলেন।  তাঁরা শুধু বাণিজ্যিক ও বৈষয়িক উন্নতিই চাননি, তাঁরা সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ — বিবেকের স্বাধীনতা — চেয়েছিলেন।  এই স্বাধীনতা নিজ নিজ ধর্ম চর্চার স্বাধীনতা।  এই স্বাধীনতা পড়া, বলা বা লেখার স্বাধীনতা এমনকী নতুন চিন্তার সঙ্গে সমাজ অথবা সরকারের প্রতিষ্ঠিত দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধ হওয়া সত্ত্বেও। এ ধরনের স্বাধীনতা পরবর্তী পর্যায়ে দাস প্রথার বিলোপে অবদান রেখেছে, যেখানে আমাদের প্রথম পর্যায়ের বসতি স্থাপনকারীগণও ভূমিকা রেখেছেন এবং নেটিভ আমেরিকানদের প্রতি মনোভাব পরিবর্তনেও সাহায্য করেছে, যারা বসতি স্থাপনকারীদের আগেই এ দেশে বাস করত।

প্রথম বসতি স্থাপনকারীদের ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক বিশ্বাসের পার্থক্য ছিল — কখনো এই বিশ্বাস ইউরোপে তাদের মধ্যে সহিংসতায় রূপ নেয় — তারা এই পার্থক্য সত্ত্বেও দূরদর্শিতা দেখাতে পেরেছিল এবং চিহ্নিত করতে পেরেছিল কি তাদেরকে একাত্ম করতে পারবে;  সবার সুবিধার জন্য একটি দৃঢ়মত স্বাধীনতা, বিশ্বাস এবং সহিষ্ণুতার সহাবস্থান।

প্রতিনিয়ত নতুনরা যুক্তরাষ্ট্রে আসতে থাকায় একটি চলমান স্বাভাবিক উত্তেজনা বিরাজ করে দেশটিতে।  বিশেষ করে, বর্তমান সময়ে তা দৃশ্যমান কারণ আমরা এখন জনতাত্ত্বিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি কারণ বিশ শতকের অর্থনৈতিক মডেল ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে।  এই প্রক্রিয়া সহজ নয় এবং এটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কিছু সময় বেদনাদায়ক ও হতে পারে।

সৌভাগ্যবশত, আমাদেরকে পথ দেখানোর জন্য আমাদের সামনে আমাদের প্রতিষ্ঠাতাদের আদর্শ আছে, যারা দেখতে পেয়েছিলেন পরিবর্তনকে স্বাগত  জানানোর  প্রয়োজনীয়তা।  আমাদের ইতিহাস জুড়ে আমাদের সবচেয়ে কঠিন দিকগুলো মোকাবেলা করার জন্য আমেরিকানদের ইচ্ছাশক্তি আমাদের শক্তি জুগিয়েছে।  
বাংলাদেশের জনগণের মধ্যেও এইরকম প্রতিষ্ঠিত আদর্শ থেকে সহিষ্ণুতা জন্ম নিয়েছে।  এই দেশের শক্তি এসেছে বিভিন্ন সংস্কৃতি, ধর্ম, মতামত এবং নিজেদের বৈচিত্রময়তা থেকে। বাংলাদেশও এইরকম আদর্শের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে এ আদর্শ ধারণ করে এবং এখনও তা ধারণ করে চলেছে যেহেতু তাকেও নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

যেহেতু আমরা চরমপন্থা থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রচন্ড হুমকির মুখোমুখি যা   থেকে আমাদের অবশ্যই একুশ শতকের মধ্যেই বেরিয়ে আসতে হবে, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায়  সফলতা পেতে একসাথে কাজ করতে হবে,  আলাদা ভাবে নয়।

১৭৮৯ সালে, জর্জ ওয়াশিংটন একটি চিঠি লিখেছিলেন মরোক্কোর সুলতান মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহকে যার দেশ প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল সদ্য স্বাধীন হওয়া যুক্তরাষ্ট্রকে।  তার বর্ণণার কিছু অংশ, বাংলাদেশের মত একটি দেশের সাথে মিলে যারা স্বাধীনতা জাতি হিসেবে তাদের  অস্তিত্বের যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন লিখেছিলেন, “আমাদের সীমানার মধ্যে স্বর্ণ অথবা রূপার কোন খনি নেই এবং নতুন এই দেশটি দীর্ঘ যুদ্ধ পরবর্তী ধংসস্তুপ ও সময়ের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে ও কৃষি অথবা ব্যবসার মাধ্যমে এখনো সমৃদ্ধ হওয়ার সময় করতে পারেনি।  কিন্তু আমাদের মাটি প্রাচুর্যে ভরা এবং আমাদের জনগণ পরিশ্রমী এবং যা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে  নিজেদের প্রশংসা করতে যে আমরা সময়ের সাথে সাথে আমাদের বন্ধুদের জন্য কাজে আসবো।”

এটা পরিষ্কার যে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র একে অপরকে প্রচুর সাহায্য করছে এবং করে যাবে, আমাদের নিজেদের জনগণ ও বিশ্বের সাধারণ কল্যাণের জন্য উপায় খুঁজে বের করতে  একসাথে কাজ করতে আগ্রহী।
ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে আমাদের অনুষ্ঠানে আসার জন্য এবং শুভ স্বাধীনতা দিবস।

Exit mobile version