রোববার ফুটবল বিশ্বের চোখ থাকবে উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডে। যেখানে ম্যানচেস্টার ডার্বিতে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষে থাকা দুদল, ম্যানচেস্টার সিটি ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ম্যাচে অপ্রতিরোধ্য সিটির সামনে সুযোগ নিজেদের আরও এগিয়ে নেয়ার, আর ঘরের মাঠে ইউনাইটেডের সামনে সিটির সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধান কমানোর হাতছানি।
লিগ লিডার সিটি তাদের ১৪তম জয়ের জন্য ছুটবে এবং যদি সফল হয় তাহলে ম্যানইউর চেয়ে ১১ পয়েন্টে এগিয়ে যাবে। তবে ইউনাইটেড চাইছে ঘরের মাঠে তাদের পুরনো রেকর্ড (টানা ৪১ জয়) নতুন করে লিখতে। ম্যানচেস্টার ডার্বিতে পুরনো দুই ক্লাবের সঙ্গে যুদ্ধ হবে যুযুধান দুই ‘শত্রু’ কোচেরও। দুজন ভিন্ন স্টাইলের কোচ হলেও ফুটবল শৈলীতে নিজ নিজ যশ-খ্যাতি বাড়ানোর চেষ্টা করবেন, যার একজন পেপ গার্দিওলা ও অন্যজন হোসে মরিনহো।
২০১৬তে ম্যানসিটিতে আসার পর থেকেই চেষ্টা করে নিজের বিখ্যাত ‘দর্শনশাস্ত্র’ (বল দখলে রেখে পাসিং ফুটবল) দলের ভেতরে ধীরে ধীরে প্রবেশে করাতে পেরেছেন গার্দিওলা। বিপরীতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বস মরিনহো অনেক বেশি প্রায়োগিক এবং সেটা করে বিজয়ীও হয়েছেন।
দুজনের প্রতিদ্বন্দ্বীতা শুরু ২০১০ সালে। রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার ডাগআউটের সেই প্রতিদ্বন্দ্বীতাটা চলেছিল দুই বছর। জমেছিলও বেশ। স্পেন থেকে সরাসরি পুরনো ঘর ইংল্যান্ডে যান মরিনহোর। আর জার্মানি ঘুরে ইপিএলে পাড়ি জমান গার্দিওলা।
১৭ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে ২৫ শিরোপা জিতেছেন মরিনহো। এরমধ্যে দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগও রয়েছে। তবে বার্সায় মাত্র ৭ বছরেই ২১টি ট্রফি জেতেন গার্দিওলা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও তার শিরোপা সংখ্যা মরিনহোর সমান। পরিসংখ্যানও দুই কোচের ধুন্ধুমার লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছে।
সিটির থেকে আট পয়েন্ট পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও ইউনাইটেড বস হোসে মরিনহো মনে করেন এখনই লিগ শিরোপাজয়ী দলকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার সময় আসেনি।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে হাই-ভোল্টেজ ম্যাচটিতে ইউনাইটেড কখনই চাইবে না ঘরের মাঠের সমর্থকদের হতাশ করতে। কারণ লিগের এ পর্যায়ে এসে সিটির থেকে আরও পিছিয়ে পড়ার অর্থই হচ্ছে শিরোপা থেকে আরও দুরে সরে যেতে থাকা।
তারপরও মাঠের লড়াইয়ে অপ্রতিরোধ্য সিটিজেনদের টপকে শিরোপা লড়াইয়ে এগিয়ে যাওয়া কতটা সম্ভব হবে সেই প্রশ্নের জবাবে মরিনহো অনেকটা আত্মবিশ্বাসের সাথেই বলেছেন, ‘আমরাও চ্যাম্পিয়ন হতে পারি, অথবা অন্য কোন দলও হতে পারে। গত দুই বছরের তুলনায় এবার আমরা নিঃসন্দেহে অনেক ভাল খেলছি। কিন্তু সিটিও ভাল দল।’
গত মৌসুমে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ম্যাচের মাধ্যমে মরিনহো ও সিটি বস গার্দিওলার ম্যানচেস্টার ডার্বিতে অভিষেক হয়েছিল। ম্যাচটিতে অবশ্য স্বাগতিক দল ২-১ গোলে পরাজিত হয়। তবে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে সবশেষ ছয়টি ম্যাচের চারটিতেই জয় পেয়েছে আকাশী-নীল জার্সিধারী।
মরিনহো যতটা আত্মবিশ্বাসের সুরে কথা বলেছেন, গার্দিওলার মধ্যে ততটা ইতিবাচক মনোভাব দেখা গেল না। তার মতে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে মরিনহো তার ইউনাইটেড স্কোয়াডকে যতটা উজ্জীবিত ভাবে গড়ে তুলেছেন, সেটার বিপরীতে সিটি কিছুটা হলেও পিছিয়ে থাকবে। মধ্যমাঠে নেমানজা মার্টিজ, পল পগবাদের সাথে আরও রয়েছেন জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচ ও মারোয়ান ফেলাইনির মত তারকারা। যদিও নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারবেন না ফ্রেঞ্চ তারকা পগবা।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে মরিনহো দলের মধ্যে অন্যরকম এক পরিবেশ তৈরি করেছেন। ডার্বি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে মরিনহো বলেছেন, ‘সবাই যদি বিষয়টা ইতিবাচক হিসেবে দেখে তবে ডার্বির মধ্যেও অনেক সুন্দর বিষয় রয়েছে। একই শহর, তবে ভিন্ন ভিন্ন রং। বন্ধুরা সবাই ভিন্ন ভিন্ন রংকে সমর্থন করছে। এমনকি একই ছাদের নীচে থাকা একই পরিবারের সদস্যরা একেক দলকে সমর্থন করছে। এসব দিক ছাড়িয়ে ইতিবাচক ভাবে বিবেচনা করলে পুরো বিষয়টা অনেক সুন্দর।’