Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

‘মেসির সঙ্গে তুলনা ভীষণ উপভোগ করি’

ছবি: জাকির সবুজ

Advertisements

মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের কথা। সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে আলো কাড়লেন তহুরা খাতুন। ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুরের মেয়ে। সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ঠেলে ততদিনে জাতীয় পর্যায়ে তারকা তিনি। ছোটবেলা থেকেই যখন বল নিয়ে ছোটাছুটি শুরু করতেন, লোকে ‘মেসি মেসি’ বলে চিৎকারে সমর্থন জানাত।

তহুরার সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হয়েছে আরেকটি পালক। মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছেন। ঘরের মাঠের আসরে তার পা থেকে এসেছে দুই গোল। কিংবদন্তি লিওনেল মেসির ‘নামের সঙ্গে মিলিয়ে’ ডাকাটা বাড়াবাড়ি মনে হলেও আসলে তো সেটি তুলনা নয়, তহুরার সামর্থ্যকে প্রকাশ করার রূপকঅর্থ। যারা তহুরার খেলা দেখেছেন, বল নিয়ে মুগ্ধ করা কারিকুরির কারণে মোটেই বাড়াবাড়ি মনে হবে না!

মেসির সঙ্গে তুলনাটা কেমন লাগে? মহাতারকার সঙ্গে নিজের নাম উচ্চারিত হতে দেখে কি চাপ অনুভব হয়? চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এমন প্রশ্নের সামনে হাসি ছড়াল তহুরার মুখে। করলেন স্মৃতিচারণ।

‘যখন ছোট ছিলাম, বল পায়ে পেলেই সবাই বলতো মেসি মেসি। তখন তাকে চিনতাম না। সবার কাছে জানতে চাইতাম মেসি কে? সত্যি কথা বলতে মেসি কে তা জানতাম না। যখন বড় হয়েছি, তখন সবার কাছে জানতে পেরেছি মেসি বিশ্বের একজন সেরা খেলোয়াড়।’

‘মেসির সঙ্গে তুলনা করলে মোটেও চাপ অনুভব করি না। মেসির সঙ্গে তুলনা ভীষণ উপভোগ করি। আমার খুবই ভালো লাগে, যখন গ্রামে যাই, তখন আমাকে অনেক মানুষ মেসি বলে ডাকে। আমাকে এত বড় একটা খেলোয়াড়ের সঙ্গে তুলনা করে।’

বাংলাদেশ এখন মেয়েদের ফুটবল নিয়ে বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছে। মেয়েরা সামনে আরও সাফল্য আনবেন, এমন প্রত্যাশা। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে তারা খেলার সুযোগ করে নেবেন, এমন আশা পালে জোর হাওয়া লাগছে।

কত বছরের মধ্যে আমরা এশিয়া কাপ কিংবা বিশ্বকাপ খেলব? দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তহুরা শান্ত ও স্থির মেজাজে পরিপক্বতার ছাপ রাখলেন সুদূরের স্বপ্ন বুনতে গিয়ে।

‘আসলে হুটহাট করে কোনকিছু হয় না। এখন যেহেতু আমরা একটার পর একটা ট্রফি আনছি, তাই অবশ্যই এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চেষ্টা করব। আমরা যেকোনো টুর্নামেন্টে একত্রিত হয়ে আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে ভালো করার এবং এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাব।’

কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দলের হয়ে প্রথমবার কোনো ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলেছেন তহুরা। এরপর এগিয়ে এসেছেন বহু পথ। কিন্তু অতীত ভোলেননি। সেইসব দিন স্মরণ করে সেসময় যারা তাদের গড়তে অবদান রেখেছিলেন, কৃতজ্ঞতা চিত্তে বললেন তাদের নাম।

‘আমাদের স্কুলের শিক্ষক মুকিদ স্যার, মিনতি রানী সরকার ম্যাডাম, স্থানীয় জুয়েল ভাই, রাজীব দাদা, আমাদের ফুটবল খেলতে অনেক সাহায্য এবং উৎসাহ দিয়ে গেছেন। ময়মনসিংহে (শহরে) আসার পর সেখানে কুদ্দুস স্যার, মকবুল স্যার, বোরহানউদ্দিন স্যার, সালাউদ্দিন স্যার ছিলেন।’

মাঠ ও মাঠের বাইরে পাওয়া সবার সমর্থন অনুপ্রেরণা যোগায়, আত্মবিশ্বাসী করে তোলে আরও বেশি করে, সবাইকে তাই ধন্যবাদ জানাতে ভুললেন না তহুরা।

‘আসলে মা-বাবার দোয়া ও মানুষের দোয়া ভালোবাসাটাই সবচেয়ে বড়। মানুষ আমাদের খেলা দেখেছে, সমর্থন করেছে। ওনাদের দোয়া আর ভালোবাসাতেই আমরা এগিয়ে যেতে চাই। ওনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ। আমাদের যেভাবে সমর্থন করেছেন, তাতেই আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি। অনেকেই কষ্ট করে মাঠে এসে খেলা দেখেছেন। ওনাদের সবার পক্ষ থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।’

Exit mobile version