মুনিয়া কি আত্মহত্যা করলো না তাকে হত্যা করা হলো এ নিয়ে চলছে দেশজুড়ে আলোচনা। বিচার দাবি করছে মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চ। শাহবাগে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছে বিভিন্ন নারী সংগঠন। মুনিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। গুলশানের একটি লক্ষ টাকার ফ্ল্যাটে তার লাশ পাওয়া গেছে। মেয়েটি কেন এই বিলাসী ফ্ল্যাটে একা থাকতো? তার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তানী নারী নির্যাতনকারী, অত্যাচারী শোষক শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেই সোচ্চার ছিলেন বাবা। মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছেন। কে হচ্ছেন তার সম্মানী ভাতার দাবিদার, নিশ্চয়ই তার সন্তানরা। কিন্তু কী দেখছি আমরা। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসাবে বাবার আদর্শিক চেতনার ন্যূনতম কোন বোধও নেই তাদের।দেশের মানুষ মুনিয়ার মৃত্যুর বিচার দাবি করছে। মৃত্যুর আগে মুনিয়ার সাথে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। যাতে একজন আনভীরকে অশ্লীল ভাষায় গালি দিতে শোনা গেল। কন্যাটিও কেনইবা গেলো একজন শিল্পপতির কাছে? অসম অবস্থানের কারণে এই সম্পর্কের পণিতিও ভালো হলো না। হেফাজত নেতা মামুনুল হকের কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্নাও একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তিনি স্বামী শহীদুলকে ছেড়ে মামুনুলের কাছে গিয়েছিলেন। এখন ঝর্না মামুনুলের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও ধর্ষণের মামলা করলেন।
মুনিয়া ইস্যুর সুষ্ঠু বিচার করতে গেলে আগে হত্যা না আত্মহত্যা তা নিরূপন করতে হবে। হত্যা হলে এক ধরনের বিচার। আত্মহত্যা হলে আরেক ধরনের বিচার। মুনিয়ার বিষয়টাকে কিশোরী সুলভ অবুঝ চঞ্চলতা হিসাবে ছাড় দেয়া যায়। সায়েম সোবহান আনভীরকে ছাড় দেয়া যায়না। তিনি বিবাহিত ও পরিণত বয়সের একজন পুরুষ হওয়া স্বত্বেও তার মেয়ের বয়সী একজন মেয়ের সাথে কেন অনৈতিক সম্পর্কে জড়ালেন? এখন যারা মেয়েটার চরিত্র নিয়ে কথা বলছেন। তাদের উদ্দেশ্যে একটি প্রশ্ন, সমাজে দুশ্চরিত্র পুরুষ না থাকলে কি কোন নারী দুশ্চরিত্র হতে পারে? এক্ষেত্রে মুনিয়া দুশ্চরিত্রা হলে আনভীর কি দুশ্চরিত্র নয়? কোন কোন পত্রিকায় মুনিয়াকে লোভী ও বহু পুরুষের সাথে সম্পর্ককারিনী বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। এটা সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের বিষয় হলে সায়েব সোবহান আনভীরেরটা কেন বিষয় নয়? তিনিওতো পরিবার ও স্ত্রীকে না জানিয়ে এমন অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। মুনিয়া ছাড়াও অন্য মেয়ের সাথেও তার এমন সম্পর্কের কথা শোনা যাচ্ছে। যারা মুনিয়াকে নিয়ে লিখেছেন তারা সায়েব সোবহান আনভীরকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন লিখবেন কি?
মুনিয়া অপরাধী হলে তার বিচারতো সে নিজেই করলো যদি তার মৃত্যুটা হয়ে থাকে আত্মহত্যায়। আত্মহত্যা কোন সুখকর বিষয় নয়। আত্মযন্ত্রণায় দংশিত হয়েই মানুষ এই পথ বেছে নেয়। মুনিয়া আত্মহত্যা করলে সেটাই হয়েছে। পৃথিবীর কোন আদালত আর তার কোন বিচার করতে পারবেনা। তার সর্বোচ্চ বিচার হয়ে গেছে। পৃথিবীর আদালত নিশ্চয়ই তাকে মৃত্যুদণ্ড দিতো না। কিন্তু সে নিজেকেই মৃত্যুদণ্ডই দিয়েছে। সুতরাং এখন আর তাকে নিয়ে লিখলে কী হবে? আর কেউ তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করলে তারও শাস্তি হওয়া উচিত পৃথিবীর আদালতে। আর যদি হত্যা হয়ে থাকে যে শাস্তি তাকে আদালত দিতোনা সে শাস্তি কে দিলো তাকে? কেন সে আইন নিজের হাতে তুলে নিলো? পৃথিবীর আদালতে কী তার শাস্তি হওয়া উচিত নয়? মুনিয়ার দেহ হাড্ডি এতদিনে হয়তো পচে গলে গেছে। গলা পচা দেহ হাড্ডি কিংবা কংকালেরতো কোন বিচার নেই। মুনিয়াকে নিয়ে যা খুশি লেখা যাবে এতে আর তার কোন আত্মপক্ষ সমর্থনেরও সুযোগ নেই। এ তে মুনিয়ার কিছু আসে ও যায়না।
মুনিয়া আনভীর আজ টক অব দি কান্ট্রি। এরই মাঝে মুনিয়ার এক ভাই হত্যা মামলা করলো শারুন চৌধুরীর নামে। তিনি এতদিন কই ছিলেন? ভাই হিসাবে বোনের কি দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি? তার বোন ঢাকায় কীভাবে থাকতো, কী করতো ভাই হিসাবে জানার কী তার দায়িত্ব ছিলোনা? এখন বোন বলে এক কথা ভাই বলে আরেক কথা। বোন বলছে ভাই টাকা খেয়ে এই মামলা করেছে। মানুষ এখন কার কথা বিশ্বাস করবে? ভাইবোনে এমন পাল্টাপাল্টি করলে কি মুনিয়া মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য বের হবে? মুক্তিযোদ্ধা মারা যায় আর তার ভাতার জন্য কাকে উত্তরাধিকার রেখে যায়? যদি টাকা খেয়ে কারও নামে মামলা করার অভিযোগটি সত্যি হয়। তবে এমন সন্তানের কি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ভোগ করার কোন অধিকার আছে? এ ব্যাপারে কি বলবে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড। যে বাবা দেশের জন্য জীবনবাজী রেখে যুদ্ধ করেছে তার সন্তানকে কেন এক লাখ টাকার ফ্লাটে থাকতে হবে। আর শিল্পপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা কেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরকেই বেছে নিচ্ছে। একজনকে আত্মহত্যায় ঠেলে দিল এখন আবার আরেক মুক্তিযোদ্ধা সন্তানকে দিয়ে বিতর্কিত মামলা দায়ের করানো হলো। তাও আবার সরকার দলীয় হুইপের ছেলের বিরুদ্ধে। এগুলো কিন্তু খুবই ভাববার বিষয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সুবিধা দিচ্ছে বর্তমান সরকার। আর এই সরকারের আমলেই একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হত্যার অভিযোগ আনা হলো একজন সরকার দলীয় হুইপের ছেলের বিরুদ্ধে। আর এই অভিযোগটিও আনলো একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। এখন যারা মুনিয়ার মৃত্যুতে সায়েম সোবহান আনভীরের বিচার দাবি করছিল। তারা কী করবে এখন? এক মুনিয়াকে নিয়ে দুই ধরনের মামলা কেন? কেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের একে অপরের সাথে বনিবনা নেই। মুক্তিযোদ্ধা মারা যাওয়ার পর তারা রেখে যাওয়া সম্পদ নিয়ে নিজেরা মারামারি করে। মামলা করে একের বিরুদ্ধে অপরে। মুনিয়ার ভাই বলছে বোন নুসরাত ও বোন জামাই মুনিয়াকে নষ্ট করেছে। ছোট বোন ও শ্যালিকাকে দিয়ে তারা নানা ধরনের সুবিধা নিয়েছে। এক লাখ টাকার ফ্ল্যাট ভাড়া দেয়ার সময়ও নাকি বোন ও বোন জামাই উপস্থিত ছিল। এখন প্রশ্ন ফ্ল্যাটটি কার নামে ভাড়া হয়েছিল। কেউ বলছে মুনিয়া ও আনভীর স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে ভাড়া নিয়েছিল। কেউ বলছে নুসরাত ও নুসরাতের স্বামীর নামে ভাড়া হয়েছিল। এগুলোও পরিস্কার হতে হবে।
এই শিল্পপতি পরিবারের অনেক ঔদ্ধ্যতের কথা শোনা যায়। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ সোবহান শাহআলমের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কথা বলায় একজন মন্ত্রীকে ধমক দিয়ে কথা বলেছিলেন তিনি। বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মকর্তা সাব্বিরকে খুন করে আনভীরের ভাই সানভীর। সে মামলাটি ধামাচাপা দিতে মোটা অংকের লেনদেনের কথা শোনা যায়। চার দলীয় জোট সরকারের আমলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে উৎকোচ গ্রহণের। আর এর নেপথ্যে ছিলেন বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সম্মতিতেই এই লেনদেন হয়েছিল বলে সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছিল। ঘটেছিল টাকার কাছে আইনের পরাজয়। এবার এমনটি হোক তা চাইনা। সত্যানুসন্ধানী তদন্ত সাপেক্ষে মুনিয়ার মৃত্যুর ন্যায়বিচার হোক দেশের মানুষ এমনটিই প্রত্যাশা করে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)