২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করা হবে, যা মুজিববর্ষ নামে অভিহিত হচ্ছে৷ ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আয়োজনটি আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করে অনন্য মাত্রায় উন্নীত হয়েছে। জাতিসংঘের এ অঙ্গ সংস্থার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ।
এরই মধ্যে সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়েছে, মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ৬৮ হাজার ৩৮টি গ্রামে একটি করে দরিদ্র পরিবারকে পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেবে সরকার। প্রতিটি বাড়িতে খরচ হবে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬০ টাকা। চলতি ও আগামী অর্থবছর এসব বাড়ি নির্মাণ করা হবে। এ জন্য দুই বছরে বরাদ্দ প্রয়োজন ২ হাজার ৪০ কোটি ১৮ লাখ ৭৪ হাজার ৬৮০ টাকা। ইতোমধ্যে ৩০ হাজার বাড়ি নির্মাণ খাতে ৮৯৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা স্থানান্তরের প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ।
তবে এই উপলক্ষে চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) ও কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচির বিশেষ বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। এটা কতোটুকু বাস্তবসম্মত তা ভেবে দেখা উচিৎ।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন খাতে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারীরা কী পাবে? এত এত বরাদ্দের ভিড়ে তাদের জন্য কেন কিছুই করা হলো না? কেন এ বর্ষেও নূন্যতম মূল্যায়িত হচ্ছে না তারা? জাতির জনককে ১৯৭৫ সালে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়৷ শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে না থাকলে সেদিন নিশ্চয়ই তাদেরকেও হত্যা করা হতো৷ এখানে ছিল বেশকিছু পক্ষ, হত্যাকারী, হত্যার সমর্থনকারী, নিরবতা পালনকারী ও হত্যার প্রতিবাদকারী৷ বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারীদের কি প্রশংসিত হওয়ার কথা নয়? মুজিব বর্ষে আজকে যারা সক্রিয় মুজিব প্রেমীর ভূমিকায় তাদের কতজন সেদিন মুজিব হত্যার প্রতিবাদ করেছিল? প্রধানমন্ত্রীও কয়েকদিন আগে এমন প্রশ্ন রেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বুলেটবিদ্ধ মরদেহ যখন সিঁড়িতে পড়ে ছিল, তখন আওয়ামী লীগের এত এত নেতাকর্মীরা কোথায় ছিল? তবুও যারা সেদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবাদ করেছিল তারা কি মুজিব বর্ষে আমন্ত্রিত ও মূল্যায়িত হচ্ছে? এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখা দরকার।
১৫ আগস্টের দিনে ঘটা করে মুজিব হত্যার শোক পালন করা হয়। কিন্তু এ হত্যার প্রতিবাদকারীদের স্মরণও করা হয় না৷ এ দিনটিতে তারা আমন্ত্রিতও হয় না৷ অথচ এই দিনটির জন্যই তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবাদ করেছিল৷ অথচ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে তাদেরকে যে একলাখ টাকা করে দেয়ার ঘোষণা ছিল সেটাও পায়নি অনেকে৷
নিম্নোক্ত মুজিব হত্যার প্রতিবাদকারীদের নামে চেক ইস্যু হওয়া সত্ত্বেও তারা অনুদান পায়নি বলে জানালেন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী সাধারণ যোদ্ধাদের সংগঠন ‘জাতীয় মুক্তিবাহিনী ৭৫’ এর সাধারণ সম্পাদক স্বপন চন্দ৷
তালিকা
(১) মোফাজ্জল হোসেন। পিতা মৃতঃ আঃ হাসেম, গ্রামঃ আড়াইআনি বাজার, পোঃ নালিতাবাড়ি বাজার, উপজেলাঃ নালিতাবাড়ি, শেরপুর৷
(২) শাহজামাল, পিতা মৃতঃ তাহের আলি, গ্রামঃচকপাড়া, পোঃ নালিতাবাড়ি বাজার, জেলাঃ শেরপুর
(৩) মোঃ শামসুদ্দীন, গ্রামঃ তালুকপাড়া পোঃ বাথুয়ার কান্দা উপজেলাঃ নালিতা বাড়ি, শেরপুর৷
(৪) বদিউজ্জামান, গ্রামঃ তালুকপাড়া, পোঃ বাথুয়ারকান্দা, নালিতাবাড়ি, শেরপুর৷
(৫) মোঃ ওয়ারেছ আলী, গ্রামঃ কড়কুড়িয়াকান্দা, পোঃ নালিতাবাড়ি, জেলাঃশেরপুর৷
(৬) মোঃ আনোয়ার চৌধুরী, গ্রামঃ সমচুরা, পোঃ পোড়া গাঁও, উপজেলাঃ নালিতাবাড়ি,শেরপুর৷
(৭) মোঃ আখতার আলী, গ্রামঃসমচুরা, পোঃ পোড়াগাঁও, উপজেলাঃ নালিতাবাড়ি,শেরপুর৷
(৮) জীতেন্দ্র সাংমা, পিতা মৃতঃ জগত মারাক, গ্রামঃ সোহাগপুর, পোঃ কাকরকান্দি উপজেলাঃ নালিতাবাড়ি, শেরপুর৷ (৯) হারিচরন ঢালু, পিতা মৃতঃ কুকুরচাঁন ঢালু গ্রামঃ পাইকাতলা পোঃ গাছগড়া উপজেলাঃনালিতাবাড়ি,শেরপুর৷ (১০) জয়নাল আবেদিন, গ্রামঃ সমচুরা পশ্চিম পোঃ পোড়াগাঁও উপজেলাঃ নালিতাবাড়ি জেলাঃশেরপুর৷
(১১) সলিম চিসিম, গ্রামঃ বিশগিরিপাড়া, পোঃ কাকরকান্দা উপজেলাঃনালিতাবাড়ি,শেরপুর৷
(১২) শামসুল হক, গ্রামঃ গজারিয়া পূর্ব পোঃ গনকুদ্দি থানাঃনকলা জেলাঃ শেরপুর৷
(১৩) আমানুল্লাহ, গ্রামঃ রানীশিমুল পোঃ দরপট বাজার, থানাঃনকলা, শেরপুর৷
(১৪) আব্দুল্লাহ গ্রামঃগমচুরা পোঃ পোড়াগাঁও উপজেলা নালিতাবাড়ি,শেরপুর৷
(১৫) স্বরূপ দ্রং, গ্রামঃ দুধনই, পোঃ দুধনই, উপজেলাঃ ঝিনাইগাতী, শেরপুর
(১৬) প্রভাত সাংমা গ্রামঃবারোয়ামাড়ি পোঃবারোয়ামাড়ি ঝিনাইগাতী,শেরপুর৷
‘জাতীয় মুক্তিবাহিনী ৭৫’ এর সাধারণ সম্পাদক স্বপন চন্দ বলেন: চেক আমার নামেও হয়েছিল৷ আমিও পাইনি৷ আমি নিজে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে বহুকষ্টে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি৷ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রাক্তন সচিব সাজ্জাদুল হাসানের কথায় আমি দরখাস্তও জমা দিয়েছিলাম৷ পরে রহস্যজনক কারণে সেটাও আটকে যায়৷ আমরা মুজিব হত্যার প্রতিবাদ করে এমনই হতভাগ্য হলাম যে মুজিব বর্ষেও আমাদেরকে স্মরণ করা হয়না? আমরা জীবদ্দশাতেও মূল্যায়ন পেলাম না, মরার পরেও না৷ তবুও আমাদের মনের একমাত্র সান্তনা, আমরা জাতির পিতার সন্তান হিসাবে সেদিন পিতা হত্যার প্রতিবাদ করতে পেরেছিলাম৷
এটা ঠিক যে, কোনো কিছু পাওয়ার আশায় তারা সেদিন জাতির পিতাকে হত্যার প্রতিবাদ করেননি। তবে দলের সুসময়ে এই সাহসী বীরদের মূল্যায়ন করা না হলে দুর্দিনে প্রতিবাদ করার মতো কাউকে পাওয়া যাবে না। সুতরাং তাদের নামে বরাদ্দ হওয়া চেক বুঝিয়ে দেওয়াসহ মুজিববর্ষে যথাযথ মূল্যায়ন করা অতি জরুরি।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)