রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়েও প্রায় ১০ বছর কারাবন্দী থাকা স্কুল শিক্ষক আজমত আলী (৭১) অবশেষে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ আজমত আলীকে মুক্তির নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছেন। সোমবার সেই রায়ের অনুলিপি জামালপুর জেলা ও দায়রা জজ এবং জামালপুরের জেলারের কাছে পাঠানো হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৭ সালের ১ এপ্রিল জমি নিয়ে বিরোধের জেরে জামালপুরের সরিষাবাড়ির কলিম উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিম নিহত হন। ওই ঘটনায় একই এলাকার পাখিমারা গ্রামের ইজ্জত উল্ল্যা সর্দারের ছেলে স্কুল শিক্ষক আজমত আলীসহ আরো কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। সেই মামলায় ১৯৮৯ সালের ৮ মার্চ জামালপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত আজমত আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
বিচারিক আদালতের এই সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আজমত আলী। তার আপিল হাইকোর্টে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় ১৯৯৬ সালের ২১ আগস্ট জামালপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান আজমত। আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজার বিরুদ্ধে তিনি যে আপিল করেছিলেন সে আপিলের শুনানি নিয়ে ২০০৫ সালের ২ মার্চ হাইকোর্ট আজমতকে খালাস দিয়ে রায় দেন।
তবে হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০০৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আজমত আলীকে নিম্ন আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন।
২০০৯ সালের ১৯ অক্টোবর গ্রামের বাড়ি থেকে আজমতকে গ্রেপ্তার করে নিম্ন আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। সেই থেকে কারাগারে আছেন আজমত আলী।
২০১০ সালের ১১ আগস্ট হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের রায় ঘোষণা করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের রায়ে হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের আদেশ রদ করে আজমতের কিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ বহাল রাখেন।
এরই মধ্যে আজমত আলীর মেয়ে বিউটি খাতুন সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে তার বাবার বিষয়ে আইনি সহায়তার জন্য আবেদন করেন। তাতে যাবজ্জীবন সাজা বহাল রেখে আপিল বিভাগে দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করা হয়।
সেই রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করে অবিলম্বে আজমত আলীকে মুক্তির নির্দেশ দিয়ে রায় দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।
রায়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির আদেশে সাজা মওকুফের পরও আজমত আলীকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক।’
আপিল বিভাগে আজমত আলী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন।
১৫ জুলাই আপিল বিভাগের সহকারী রেজিস্টার স্বাক্ষরিত রায়ের অনুলিপি জামালপুর জেলা ও দায়রা জজ এবং জামালপুরের জেলারের কাছে পাঠানো হয়েছে। এখন কেবলই মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছেন কারাবন্দী স্কুল শিক্ষক আজমত আলী।