‘অসম্ভবকে সম্ভব করা’র মূলমন্ত্র নিয়ে ছুটে চলেছেন চিত্রনায়ক, প্রযোজক অনন্ত জলিল। ব্যবসার পাশাপাশি সিনেমাতেও দাগ রাখতে মরিয়া এই চিত্রনায়ক! শেষ করেছেন বাংলাদেশ-ইরানের যৌথ প্রযোজনায় বিগ বাজেটের ছবি ‘দিন দ্য ডে’র কাজ। চমক সৃষ্টি করে সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন নতুন ছবি ‘নেত্রী দ্য লিডার’ এর। যে ছবিতে থাকছেন নামিদামি ভারতীয় ও তুর্কি শিল্পী কলাকুশলীরা। অনন্ত জানিয়েছেন, পুরোপুরি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তৈরি হবে এই সিনেমাটি, যার মূল চরিত্রে অভিনয় করবেন চিত্রনায়িকা ও তার স্ত্রী বর্ষা। রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এই ছবি নিয়েই রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলের সাথে এক চুক্তি স্বাক্ষর করেন অনন্ত জলিল। সেখানে সিনেমার সার্বিক বিষয় নিয়ে অনন্ত জলিল মুখোমুখি চ্যানেল আই অনলাইনের…
বর্ষার সঙ্গে নতুন সিনেমা ‘নেত্রী দ্য লিডার’ এর প্রেক্ষাপট জানতে চাই?
আমার চিত্রনাট্যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে এ সিনেমা। সিলেটের একজন মন্ত্রী (লিডার) মারা যাওয়ার পর তার পার্টির সম্মতিতে তারই মেয়ে নেত্রী হন। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ভালো কাজ করতে গেলে যে একজন নেত্রী যে বিভিন্ন বাঁধার মুখোমুখি হন সেসব তুলে ধরা হবে। দেশের ভালো কাজ করতে গেলে তাকে টেনে ধরার প্রবণতা দেখা যায় সেটা তুলে ধরার চেষ্টা করবো। বর্ষা নেত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করবেন। নেত্রীর একজন বিশ্বস্ত বডিগার্ড থাকেন, যিনি চিফ সিকিউরিটি অফিসার। আমি ওই চরিত্রে অভিনয় করবো। ২৭ ফেব্রুয়ারি সব শিল্পী, নির্মাতাদের এক করে মহরতের আয়োজন করবো। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুটিং শুরু হবে। তুরস্কের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা এটি। তুরস্ক ও ভারতীয় অভিনেতারা থাকছেন এই ছবিতে। তুরস্কের দুজন নায়ক-নায়িকা আছেন। চুক্তি হয়নি বলে নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। তবে প্রত্যেক শিল্পীই তাদের দেশের সুপরিচিত ফিল্ম স্টার। ওই দিনেই ‘দিন দ্য ডে’র অফিশিয়াল ট্রেলার প্রকাশ হবে। আমি ছাড়াও অন্যান্যরা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে কাজ করেছেন বোঝা যাবে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে কাজী হায়াৎ এবং ইলিয়াস কাঞ্চন আছেন।
‘দিন দ্য ডে’র মুক্তি নিয়ে কী পরিকল্পনা করছেন?
সিনেমাটা শুধু আমার প্রযোজনা করা না। বাংলাদেশে এই বাজেটে একশ সিনেমা বানানো যায়। এখানে ইরানের বিনিয়োগ বেশি। আমি শুধু বাংলাদেশের অংশটুকু বিনিয়োগ করেছি। না হলে এতো টাকা আমি একা লগ্নী করলে মার্কেট থেকে টাকা তুলে না আনতে পারলে আমার কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যেতো। তাছাড়া মুক্তির সিদ্ধান্তটা আমার একার নয়। এপ্রিলে ইরানে ফজর ফেস্টিভ্যাল হয় যেটি অস্কার বা কানের পর গণ্য করা হয়। সেই অনুযায়ী ওই দেশের প্রযোজকরা মুক্তি দিতে চান। সবকিছু মিলিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমার ইচ্ছে ছিল ঈদে মুক্তি দেব। শুধু বাংলাদেশ নয়, ইউরোপ, আফ্রিকাসহ বিশ্বের আশিটি দেশে ‘দিন দ্য ডে’ মুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। তুর্কি, ইংরেজি এবং বাংলাদেশের ভাষায় সিনেমাটির ডাবিং/সাবটাইটেল করা হচ্ছে।
খোঁজ দ্য সার্চ, দিন দ্য ডে, নেত্রী দ্য লিডার। আপনার অধিকাংশ সিনেমার বাংলা নামের পর ইংরেজি টাইটেল যুক্ত থাকে কেন?
শুধু দেশে সিনেমা চালাবো এই চিন্তা আমার কোনোদিনই ছিল না। ‘খোঁজ দ্য সার্চ’ মুক্তি পায় ২০১০ সালে। আগের বছর বাবা দিবসে হলিউডে একটি অ্যাকশনের সাউন্ডের সফটওয়্যার বের হয়। সেটা আমার সিনেমাতে ব্যবহার করি। তখনকার আমেরিকান সিনেমা আর আমার সিনেমায় একই সফটওয়্যারে ব্যবহার করা হয়েছে। তখন থেকেই ইন্টারন্যাশনাল মানের সিনেমা করি এবং বিদেশে এক্সপোর্টের ইচ্ছে ছিল। বাংলা নাম দিলে কেউ বুঝবে না, তাই বাংলা ইংরেজিতে মিলিয়ে দুইটা নাম ব্যবহার করি।
আপনি কেন অন্য নায়িকার সঙ্গে কাজ করেন না এবং বর্ষাকে কেন অন্য নায়কের সঙ্গে দেখা যায় না?
আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে সংসারটা সবসময় সুখে শান্তিতে রাখতে চাই। মিডিয়াতে স্বামী-স্ত্রীর সুখ শান্তি ঘরের ছাদ ভেঙে পালিয়ে যায়। আমরা কখনই চাইনা আমাদের সুখ শান্তি জানালা বা ছাদ ভেঙে পালিয়ে যাক। এই কারণে ব্যবসার কাজে কোথাও গেলেও সবসময় বর্ষাকে নিয়ে যাই। আমার সাথে থাকলো এবং ব্যবসাও বুঝলো। চুল কাটাতে যেতাম ধানমন্ডিতে। সেখানেও তাকে পাশে বসিয়ে রাখতাম। অনেকেই গার্লফ্রেন্ড সাথে রাখে। কিন্তু আমি বউকে সবসময় সাথে রাখি। এটা আমার অভ্যাস। অফিসের শেষে এক সেকেন্ড সময়ও বাইরে দেইনা। সোজা বাসায় চলে যাই। পরিবারকে সময় দেই। সপ্তাহে সময় করে বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে যাই। যাতে তারা কখনো অনুভব না করে যে বাবা সময় দিতে পারে না। আশা করছি, উত্তর পেয়েছেন।
বলিউডের তারকা দম্পতিরা অন্যদের সঙ্গে কাজ করেন এবং হ্যাপি ফ্যামিলি ক্যারি করছেন। আমাদের দেশে কি ‘ল্যাক অব কনফিডেন্ডস’ নাকি আমরা ব্যবহার করতে পারছি না বা আমরা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ?
সালমান খান তার এক ইন্টার্ভিউতে বলেছিলেন, নিজের ঘরে দুই ভাই (সোহেল খান, আরবাজ খান) এর বউদের মধ্যে অশান্তি দেখে তার আর বিয়ে ইচ্ছে হয় না। ক্যামেরার সামনে আমাদের চেহারাটা হাস্যকর থাকলেও আমাদের বাস্তবটা অনেক কঠিন। ঘরে যদি শান্তি না পাই, স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া শুনে যদি বাচ্চারা বড় হয় তাহলে মেন্টালিটি কোথায় যাবে? এজন্য সকালে জিম করলেও আমি বাচ্চাদের সঙ্গে রাখি। আমাদের দেশে নাঈম-শাবনাজ, মৌসুমী-ওমর সানী ওনারা সংসার করছেন, অনেকেই করছেন না। আমি আর বর্ষা না হয় একটু ভেজালহীন থাকি। শখের বসে প্রথম সিনেমা করেছিলাম। পরে দেখলাম মানুষ আমাদের ভালোবাসছে। পরে একের পর এক কাজ করতে গিয়ে দায়িত্ববোধ চলে এসেছে। এর পর জেদ চাপলো কেন কলকাতার মানুষ আমাদের দেশের আর্টিস্টদের চেনেন না। আমি চিনিয়েই ছাড়বো। সেজন্য জেদ করেই বাইরে বড় বড় প্রজেক্ট করছি এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুক্তির সুদূরপ্রসারী প্ল্যান করেছি।
ইন্ডাস্ট্রি চাঙ্গা করতে মাল্টিকাস্টের সিনেমা দরকার। সেই সুবাদে আপনার উদ্যোগে দেশের সুপারস্টার শাকিব খানের সঙ্গে দর্শক চায় আপনি সিনেমা করেন। আপনার মন্তব্য কী?
আমি আর শাকিব খান একসঙ্গে ছবি করলে বাংলদেশের ৯০ ভাগ দর্শক হ্যাপী হবে। দর্শক চান অনন্ত জলিল ও শাকিব খান একটি হলেও সিনেমা একসঙ্গে করুক। তাই যৌথ প্রযোজনার না হোক দেশের বড় কোন বাজেটের ছবি শাকিব খানের সঙ্গে কীভাবে করা যায় সেটা দেখবো। শাকিব খানের সঙ্গে আমার কাজ করার ইচ্ছে আছে। সবার আশাটা কীভাবে পূরণ করা যায় সেটা আগামীতে চেষ্টা দেখবো।