বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে যখন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা বড়দিন উদযাপনে ব্যস্ত, ঠিক তখনই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার মুখে শোনা গেলো শঙ্কা জাগানো এক খবর।
বড়দিন উপলক্ষে মঙ্গলবার তিনি গিয়েছিলেন বনানীর ক্যাথলিক চার্চ পরিদর্শনে। সেখানে সাংবাদিকদের কাছে ডিএমপি কমিশনার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশ হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এই দেশে সব ধর্মের মানুষ পাশাপাশি থেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। মাঝে মধ্যে যে, তাতে কিছুটা বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা যে হয়নি; তাও বলা যাবে না। নানা উদ্দেশ্য নিয়ে তা করা হয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী মহল ধর্মের লেবাসে তাতে ইন্ধন দিয়েছে। যদিও তাতে তারা ব্যর্থই হয়েছে বারবার।
মূলত এ দেশের মানুষের মধ্যে থাকা শক্তিশালী অসাম্প্রদায়িক চেতনার কারণে প্রতিক্রিয়াশীল সেই চক্রটি সফল হতে পারেনি। হাতে হাত রেখে জনগণ তা রুখে দিয়েছে। কিন্তু তারপরও উদ্বেগ ও শঙ্কা তৈরি হওয়ার কারণ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কেননা, নির্বাচনকে কেন্দ্র এদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনা নতুন নয়।
সোশ্যাল মিডিয়ার তুমুল অগ্রগতির পাশাপাশি তার অপব্যবহারের শঙ্কা অমূলক নয়। ডিএমপি কমিশনার নিশ্চয়ই, নির্দ্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই তার উদ্বেগের কথা বলেছেন। তবে এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কোনোভাবেই কেউ যেন এর সুযোগ না নিতে পারে।
বাংলাদেশে বড়দিনে এমন উদ্বেগের খবরের মধ্যে সুন্দর কিছু কথা বলেছেন খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। উন্নত দেশের লোকজনকে তিনি ভোগবাদী জীবন পরিহার করে সাধারণ জীবনযাপনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, একটি স্থিতিশীল দারিদ্র্যের মধ্যে যিশুর জন্ম হয়েছিল, এটা প্রত্যেককে জীবনে প্রতিফলিত করা উচিত।
তিনি ভোগবাদীদের আত্মজিজ্ঞাসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জীবনযাপনের জন্য আমার কি সত্যিই এত ভোগবাদী বস্তু এবং জটিল ব্যবস্থার দরকার আছে? এসব অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত জিনিস ছাড়াই কি চলতে পারি না?
আমরা মনে করি, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদেরও খোঁজা প্রয়োজন। মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা আর সম্প্রীতিই পারে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ বা পৃথিবীকে প্রতিষ্ঠা করতে।