স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, মাদকের যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতেই হবে। সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মাদক বিরোধী যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এ যুদ্ধে আমাদের জিতেই হবে। জঙ্গিবাদ নির্মূলের ন্যায় আমরা মাদককেও নির্মূল করবো।
পুলিশের বিশেষায়িত এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন(র্যাব) নির্মিত মাদক বিরোধী বিজ্ঞাপন (টিভিসি) চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে প্রচারণা অনুষ্ঠান উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন।
রোববার বিকেল সাড়ে চারটায় কারওয়ান বাজারস্থ র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং বিভাগ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ছিল ঠুঁটো জগন্নাথ। সেখান থেকে আমূল পরিবর্তন করা হয়েছে। জনবল ও শক্তি বাড়িয়ে ঢেলে সাজানো হয়েছে। মাদকমুক্ত করার প্রচেষ্টার সাথে সাথে মাদকসেবীদের নিরাময় ও পুনর্বাসন করার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, মাদককে নির্মূল করতেই হবে। নইলে আমরা পথ হারাবো। এই যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতেই হবে। এই যুদ্ধ সেদিন থামবে যেদিন আমরা দেখবো সেই মাদক মুক্ত বাংলাদেশকে। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি।
কলাম্বিয়ার উদাহরণ টেনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেখানেই অবৈধ ব্যবসা সেখানেই অবৈধ অর্থ, অবৈধ অস্ত্র। সুতরাং মাদক আগে নির্মূল জরুরি। সারা পৃথিবীতে দেখবেন মাদক নির্মূলে সর্বাত্মক যুদ্ধেই নামতে হয়েছে। এক সময় কলম্বিয়ায় মাদকের আধিপত্য বেশি ছিল আর সেই কলম্বিয়ায় এখন মাদক নেই। আমরাও সেই জায়গাটিতেই যাবো। আমরা যেমন করে জঙ্গিবাদ দমন করেছি তেমনিভাবে মাদকও দমন করা হবে।
তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আত্মসমর্পণ করুন। যারা আত্মসমর্পণ করেছে তাদের অনেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে। তবে আমরা কাউকে মারছি না। অনেক তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীকে ধরতে গেলেই চ্যালেঞ্জ করে, অস্ত্র ব্যবহার ও গুলি চালা, যে কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে বাধ্য হয়।
জেলখানার ধারণ ক্ষমতা ৩৭ হাজার। বর্তমানে ৯০ হাজার পার হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৩ হাজারই মাদক সংশ্লিষ্ট কারণে গ্রেফতারের পর কারাগারে বলে জানান মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাভেদ পাটোয়ারী বলেন, শুধু অভিযান নয়, মাদক বিরোধী প্রচারণা আরো বেশি দরকার। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর প্রতিষ্ঠার আগে পুলিশ এককভাবে মাদকবিরোধী ভূমিকা পালন করেছে। মাদককে শুধুমাত্র পুলিশি সমস্যা ধরে নিলে চলবে না। এটা সামাজিক সমস্যা, ব্যাধি। মাদকবিরোধী ভূমিকায় সকল শ্রেণির পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত হতে হবে। একটি পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য একজন মাদকসেবী থাকলেই যথেষ্ট। অনেক বাবা মা দু:খ প্রকাশ করেন, বলেন, আমার ছেলেকে জেলে দিন, যেন ৫/৬ বছর জেল থেকে বের হতে না পারে।
মাদক উৎপাদন, কেনা বেচা, বিপণন, নিরাময়, পুনর্বাসন সবকিছুকেই মাদক বিরোধী ভূমিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
আইজিপি বলেন, ৬৪ জেলার সরকারি হাসপাতালে যদি ১০টি করে বেড সংরক্ষিত রেখে মাদকসেবীদের চিকিৎসা দেয়া যায় তবে কার্যকরী ভূমিকায় আসবে। সার্বিকভাবে প্রচেষ্টা সফল করতে হলে সকলকেই ঐকান্তিক সমর্থন ও ভূমিকা পালন জরুরি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন বলেন, এক সময় আফিম, সিগারেট আসতো এখন ইয়াবা আসছে। পৈত্রিকভাবে যারা সম্পত্তি পান তাদের সম্পত্তি চলে যাচ্ছে। সব বিক্রি করে খাচ্ছে, নিঃস্ব করে দিচ্ছে। অধিক নেশাগ্রস্তের পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী বিকল মানসিকতা নিয়ে জন্ম নেবে যারা কোনো কাজে আসবে না। র্যাব যে সব কাজ করছে তা সুন্দর জাতিগঠনের জন্য দরকার।
তিনি বলেন, মাদকাসক্তির কারণে মানসিকতার ঠিক নাই, খাওয়া নাই, কাপড়ের ঠিক নাই। দুটা খেয়েই বুদ হয়ে পড়ে থাকে। এমন ধরণের নাগরিকে দেশের উপকার হয় না।
সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মাদ চৌধুরী বলেন, এনফোর্সমেন্ট সাপ্লাই ডিটেকশনে কাজ করছি। কিন্তু সাপ্লাই ডিমান্ড যদি বন্ধ করা না যায় তবে মাদক নির্মূল সম্ভব না। সকল স্তরের মানুষকে একীভূত ভূমিকা দরকার।
মাদকসেবীদের দূরে ঠেলা যাবে না। তাদেরকে শারীরিক ও মানসিক নিরাময় করতে হবে। এজন্য নিরাময় কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। সাংবাদিক সমাজের পবিত্র দায়িত্ব মাদকবিরোধী প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচারণা চালানো বলে তিনি মনে করেন।