প্রথম ইনিংসে স্টিভেন স্মিথ, দ্বিতীয় ইনিংসে মার্নাস লাবুশেন, লর্ডস টেস্টে দুজনকেই কাবু করে ছেড়েছে ইংল্যান্ড পেসার জফরা আর্চারের বাউন্সার। এরমধ্যে স্মিথকে তো মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে একঘণ্টা। পরের ইনিংসে নামতেই পারেননি। ছিটকে গেছেন হেডিংলি টেস্ট থেকেও। তার বদলি হিসেবে নেমে লাবুশেনকেও সইতে হয়েছে আঘাত। মজার বিষয় হচ্ছে এই দুজনের একজনও ব্যবহার করেননি নেক গার্ড। তা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। ঢেউটা এসে পড়েছে ভারতেও!
খেলোয়াড়দের বলের আঘাত থেকে বাঁচতে ‘অ্যান্টি-কনকাশন’ বা আঘাত সহনশীল হেলমেট বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে সিএ। অস্ট্রেলিয়া স্পোর্টস মেডিসিন প্রধানও নিশ্চিত করেছেন খেলোয়াড়দের নেকগার্ড যুক্ত হেলমেট বাধ্যতামূলক করা কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র।
অস্ট্রেলিয়ার দেখাদেখি পুরো ক্রিকেট বিশ্বেই এই হেলমেট বাধ্যতামূলক করার ইচ্ছা আছে আইসিসির। এরইমধ্যে মাথায় আঘাত পাওয়া খেলোয়াড়ের বিকল্প নামানোর পদ্ধতিও চালু হয়ে গেছে অ্যাশেজ থেকেই। লাবুশেন প্রথম ক্রিকেটার যিনি কনকাশন পদ্ধতিতে মাঠে নেমেছেন। ক্রিকেট বিশ্ব বেশ ইতিবাচকভাবেই নিয়েছে এই নিয়মকে।
তবে ভারত আছে বিপাকে। অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের অনেকেই এ ধরনের হেলমেট ব্যবহার করেন না। শেখর ধাওয়ানসহ দু-একজন ক্রিকেটার সুরক্ষাযুক্ত হেলমেট নিলেও বাকিরা স্বস্তি বোধ করেন না বলে এই বিষয়টা বাধ্যতামূলক করতে পারছে না ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। বোর্ডটির একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, ক্রিকেটাররা নিজ নিজ পছন্দমত হেলমেট ব্যবহার করায় বোর্ড এক্ষেত্রে অনেকটা অসহায়।
‘যখন বিষয়টি সবার নজরে এলো তখন বিসিসিআই অধিনায়কসহ সবাইকে বলে দিয়েছে সবাই যেন নিজ নিজ হেলমেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে বাড়তি সুরক্ষা বা নেক গার্ড যুক্ত করতে বলে দেয়। শেখর ধাওয়ানসহ কয়েকজন বিষয়টি আমলে নিয়েছে কিন্তু আমরা তো এ বিষয়ে তাদের চাপ দিতে পারি না। এখানে আরামের বিষয় সম্পর্কযুক্ত।’
অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ফিল হিউজের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার বিষয়টি মাথায় আছে বিসিসিআইয়ের। এরসঙ্গে আবার স্মিথের আঘাতও টনক নড়িয়েছে বোর্ডের। তবে আইসিসি বাধ্যতামূলক না করায় খেলোয়াড়দের চাপ দিতে পারছে না বোর্ড, এমনটাই বলেছেন সেই কর্মকর্তা।
‘হেলমেট এমন একটা বস্তু যেখানে খেলোয়াড়দের স্বস্তির বিষয়টা জড়িত। অনেক খেলোয়াড় এটাতে আরাম বোধ নাও করতে পারে। যেহেতু আইসিসি এটা বাধ্যতামূলক করেনি তাই আমরা খেলোয়াড়দের কাছেই বিষয়টা ছেড়ে দিচ্ছি।’
এদিকে ভারতের বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটাররাও বলছেন স্মিথের ঘটনা দিয়ে বাকিদের উপর যেন এই হেলমেট চাপিয়ে না দেয়া হয়। স্পিনার হারভজন সিং যেমন বলছেন টেকনিকের ঘাটতি ছিল বলেই মাথায় বাউন্সারের আঘাত সইতে হয়েছে স্মিথকে!
‘শর্ট খেলতে হয় কীভাবে সে বিষয়ে সুনীল গাভাস্কারের কথাগুলো আমি মনোযোগ দিয়ে শুনতাম। তিনি বলতেন শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে বলটাকে দেখো। কঠিন বলগুলো হয়তো আপনাকে আঘাত করবেই। তবে দিনশেষে এটা টেকনিকের বিষয়। অতীতের বোলারদের দিকে তাকান। মাইকেল হোল্ডিং, ম্যালকম মার্শাল, ইমরান খান, শোয়েব আখতার, ব্রেট লি- সবাই ছিলেন গতিমান বোলার। ’
‘আপনি একজন তরুণকে স্মিথের খেলার ধরণ অনুকরণ করতে বলতে পারেন না। এটা অনন্য ও বেশ কার্যকরী। কিন্তু কেবল মাত্র তার জন্যই। আর সব দলের কিন্তু জফরা আর্চারের মতো গতিমান বোলারও নেই। তাহলে আপনার কেন নেক গার্ড লাগবে?’