করোনা মহামারীর কারণে সারাবিশ্বের মতো ধুঁকছে বাংলাদেশও। মহামারী আতঙ্কে স্বাভাবিক অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা সেবা গ্রহণও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অপরিণত ও অসুস্থ নবজাতকদের জন্য সেই ঝুঁকি আরও বেশি।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে স্পেশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিটের মাধ্যমে অসুস্থ ও নবজাতকদের জন্য হাসপাতাল সহায়তা চালু করেছে ইউনিসেফ। আর সেখানে দেওয়া হচ্ছে জরুরি জীবনরক্ষাকারী সেবা।
তাসলিমা বেগম (৩৫) আনন্দচিত্তে তার শিশু ছেলের চোখের দিকে তাকালেন এবং তিনি কৃতজ্ঞ যে, কোভিড-১৯ এর এই সংকটের মধ্যেও তার শিশু বেঁচে আছে। তার জীবন রক্ষার জন্য সিলেটে ইউনিসেফ সমর্থনপুষ্ট দুটি স্পেশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিটের (স্ক্যানু’র) একটিকে কৃতিত্ব দিলেন তিনি।
তাসলিমা বলেন, তুলনামূলক ঝামেলাহীনভাবেই আমার ছেলেটি হল এবং পরপরই আমরা বাসায় চলে গেলাম। কিন্তু চার দিন পর দেখলাম তার ত্বকে হলদেটে ভাব দেখা যাচ্ছে। আমি দ্রুত তাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটলাম এবং জানলাম, তার জন্ডিস হয়েছে। তাকে ফটোথেরাপি দেওয়া হল এবং এখন সে সুস্থ হয়ে উঠছে। আমি এখানকার চিকিৎসকদের প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ।
তাসলিমা সেই সব মায়েদের একজন, যাদের নবজাতক সন্তানরা অসুস্থ ছিল বা সন্তান জন্মের সময় নিজে জটিলতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। অন্যান্য মায়েদের তুলনায় তাদের সিলেটসহ বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় দুই জেলায় সেবা প্রদানকারী দুটি স্ক্যানু’র প্রতি কৃতজ্ঞ প্রকাশ করেছেন তিনি।
সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলা (১৫ শয্যা) ও সিলেট শহরে (৫০ শয্যা) দুটি স্ক্যানুর কর্মীদের কাছে জীবন-মৃত্যুর এই লড়াই নিয়মিত ঘটনা।দুটো প্রতিষ্ঠানই সন্তান জন্মদানে জটিলতা সামাল দেওয়ার জন্য বিশেষায়িত এবং সেখানে নবজাতকের ওজন স্বল্পতা, শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য জীবাণু সংক্রমণসহ বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতার চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।
শিশু বিশেষজ্ঞ (জুনিয়র পেডিয়াট্রিক কনসালট্যান্ট) ডা. মোজাম্মেল হক বলেন, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও কিশোরী মায়েরা যারা এখানে আসেন তাদের প্রথমে লকডাউনের মধ্যে হাসপাতালে আসার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হয়। এর মধ্যে হাসপাতালে গেলে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করেন।কিন্তু একবার তারা এসে পড়লে আমরা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এবং সর্বোচ্চ মাত্রার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে তাদের সম্ভাব্য সবচেয়ে ভালো মানের চিকিৎসা দিতে সচেষ্ট থাকি।
ইউনিসেফ উভয় হাসপাতালেই প্রযুক্তি ও অবকাঠামোগত সহায়তা দিচ্ছে, যার মধ্যে মানব সম্পদ, সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ, লজিস্টিকস ও রক্ষণাবেক্ষণের মতো বিষয়গুলো রয়েছে।
দুটি হাসপাতালেই জন্ম নেওয়া সব শিশুর নিবন্ধন হয়ে থাকে, যাতে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে তাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার মতো মৌলিক অধিকারগুলোর নিশ্চিত হয়।
সিনিয়র স্টাফ নার্স রুমা রানী দাস বলেন, হাসপাতালের কর্মীরা সবাই কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্য পরিপূর্ণ পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম) পরিধান করেন এবং নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেন।
হাসপাতালে নারীদের উচ্চ মানের সেবা দেওয়া হয়ে থাকে। তাদের অনেকে প্রসব বেদনা বা গুরুতর অসুস্থ বাচ্চা নিয়ে আসেন- বলেন তিনি।