ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে যেই নামটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, তিনি মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। সমাজের সকল অবিচারের বিরুদ্ধে তার ভিন্ন ধারার প্রতিবাদের কারণে তিনি পুরো বিশ্বেই জনপ্রিয়। বিশেষ করে তার ‘অহিংসা’ এবং ‘সত্যাগ্রহ’ নীতি পুরো বিশ্বের নেতাদের কাছে জনপ্রিয়। ২ অক্টোবর তার ১৫১তম জন্মবার্ষিকী।
ভারতবর্ষে তার জীবনের নানান অধ্যায় নিয়ে বহু সিনেমা মুক্তি পেলেও তিনি কিন্তু দেখে ছিলেন একটি মাত্র হিন্দি ছবি! যা ছিল বিজয় ভাটের ‘রাম রাজ্য’। তবে ইংরেজিতে দেখা তার সিনেমার তালিকা কিন্তু অনেক দীর্ঘ। বিশেষ এই দিনে গান্ধী’র স্মরণে জেনে নেওয়া যাক তার জীবন কিংবা তার আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত দশটি সিনেমার নাম:
গান্ধী (১৯৮২)
ব্রিটিশ অভিনেতা বেন কিংসলি অভিনীত ‘গান্ধী’ ছবিটিকে এযাবৎ কালে নির্মিত গান্ধীকে নিয়ে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ জীবনকাহিনী বলা হয়ে থাকে। ছবিটি অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। এই ছবিতে গান্ধীর জীবনকে খুব সুন্দর এবং বাস্তবধর্মীভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দেখানো হয়েছে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়গুলো। জন ব্রেইলির চিত্রনাট্য অনুসারে নির্মিত ছবিটি প্রযোজনা এবং পরিচালনা করেছেন রিচার্ড অ্যাটেনব্রো।
লাগে রাহো মুন্না ভাই (২০০৬)
সাম্প্রতিক সময়ের ছবিগুলোর মধ্যে সঞ্জয় দত্ত অভিনীত ‘লাগে রাহো মুন্না ভাই’ ছবিটি দর্শকদের মন কেড়েছে। বেশ রসাত্মকভাবে এখানে গান্ধীর নীতিগুলো পর্দায় দেখানো হয়েছে। ছবিতে গান্ধীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মারাঠি অভিনেতা দিলীপ প্রভাভালকর। তবে ছবির মূল ভূমিকায় ছিলেন সঞ্জয় দত্ত। ছবিতে গান্ধীর জীবন ফুটিয়ে তোলার বদলে বর্তমান জমানায় গান্ধীর নীতিমালার প্রয়োগ দেখানো হয়েছে। ছবিটি পরিচোলনা করেছেন জনপ্রিয় নির্মাতা রাজকুমার হিরানি।
হামনে গান্ধী কো মার দিয়া
২০১৮ সালে মুক্তি প্রাপ্ত নাঈম এ সিদ্দিকী পরিচালিত ‘হামনে গান্ধী কো মার দিয়া’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল। যেখানে কৈলাশ ও দিবাকর নামে দুটি চরিত্র ছিল, যারাই মূলত কাহিনী বর্ণনা করেন। চলচ্চিত্রটি ব্রিটিশ রাজের সমাপ্তির পরে পার্টিশনের উত্তাল পটভূমির বিপরীতে তৈরি। কাহিনীটিতে আরো রয়েছে মহাত্মা গান্ধীর হত্যার সাথে মিলেমিশে ভ্রমণের সময় দুটি চরিত্রের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া এবং মহাত্মা ও তার দর্শন সম্পর্কে মতবিরোধ।
হেই রাম (২০০০)
কমল হাসানের এই ছবিতে গান্ধীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নাসিরুদ্দিন শাহ। ছবিতে আরও আছেন শাহরুখ খান, রানী মূখার্জি এবং হেমা মালিনী। ছবিতে একটি ভিন্ন আঙ্গিকে গান্ধিকে দেখানো হয়েছে। একজন সাধারণ মানুষের জীবনকে গান্ধী কিভাবে প্রভাবিত করতে পারেন তা নিয়ে নির্মিত হয়েছে ছবিটি।
রোড টু সঙ্গম
অমিত রায় পরিচালিত ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘রোড টু সঙ্গম’ সিনেমাটিও মহাত্মা গান্ধীর স্মরণে নির্মিত। ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত ওমপুরি, পবন মালহোত্রা, পরেশ রাওয়াল সহ আরো অনেকে।
গান্ধী মাই ফাদার (২০০৭)
‘গান্ধী মাই ফাদার’ হল মহাত্মা গান্ধীর কনিষ্ঠ পুত্র হরিলাল গান্ধীর গল্প। হরিলাল গান্ধীর ভূমিকায় ছিলেন অক্ষয় খান্না। গান্ধীর রাজনৈতিক জীবন তুলে ধরার বদলে তার পারিবারিক জীবন এবং ছেলের সঙ্গে সম্পর্ককে তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে। ছবিতে গান্ধীর চরিত্রে অভিনয়ে করেছেন দর্শন জারিওয়ালা।
গান্ধীগিরি
২০১৬ সালে অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে মুক্তি পেয়েছিল গান্ধী জী’র আরেক সিনেমা ‘গান্ধীগিরি’। যেখানে প্রয়াত অভিনেতা ওমপুরি অভিনয় করেছিলেন এনআরআই রাই সাহেবের চরিত্রে, যিনি মহাত্মা গান্ধীর নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। যারই প্রেক্ষিতে ছবিতে নানান মত বিরোধের সম্মুখীন হতে হয়েছিল ওমপুরিকে।
নান্নু গান্ধী
২০০৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল এনআর নানজুন্দে গৌড়ার কন্নড় ছবি ‘নান্নু গান্ধী’। মূলত একদল বাচ্চাদের মনে গান্ধীর নীতি এবং মতামত নিজেদের ভেতর ধারণ করা নিয়েই নির্মিত হয়েছিল সিনেমাটি। বর্তমানে ছবিটি ডিজনি হটস্টারে পাওয়া যাবে।
রিবুটিং মহাত্মা
২০১৯ সালে মুক্তি প্রাপ্ত গুজরাটি ছবি ‘রিবুটিং মহাত্মা’ ছবিটি মহাত্মা গান্ধীর মানবিক সংস্করণের ধারণার উপর ভিত্তি করে নির্মিত। যেখানে তার মতাদর্শগুলোকে একবিংশ শতাব্দীতে আনা হয়েছে এবং বাপু বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন যা আজকের বিশ্বে যেমন রাজনৈতিক ব্যবস্থা, বলিউড, সামাজিক মিডিয়া এবং যুব সমাজকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।
গান্ধি সে মহাত্মা তক (১৯৯৬)
এই ছবিতে একটু ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা যায় গান্ধীকে। একজন সাউথ আফ্রিকান ব্যারিস্টার কীভাবে ভারতের মহাত্মা হয়ে ওঠে সেই ঘটনা দেখানো হয়েছে ছবিতে। ছবির মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রজিত কাপুর। তার চরিত্রটি ভক্তদের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে এখনো।