জর্জিয়ার রাজধানি তিবিলিসি’তে ভয়াবহ বন্যায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর বন্যার ধ্বংসযজ্ঞের পর স্থানীয় অধিবাসিদের নতুন আতঙ্করূপে আবিভূর্ত হয়েছে চিড়িয়াখানা থেকে পালিয়ে যাওয়া হিংস্র প্রাণি।
ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ দেশটিতে সোমবার শোকদিবস ঘোষণা করা হয়েছে।
তিবিলিসের চিড়িয়াখানার মুখপাত্র জিয়া শারাশিদজে ইন্টারপ্রেসনিউজ এজেন্সিকে জানিয়েছেন, চিড়িয়াখানার ভেতর থেকে তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুই জন চিড়িয়াখানার কর্মি।
তিনি বলেন, এখানকার ভূমি ‘নারকীয় আবর্তে’ পরিণত হয়েছিলো। কিছু নেকড়ে, সিংহ, বাঘ, শেয়াল এবং জাগুয়ারকে বিশেষ বাহিনী গুলি করে হত্যা করতে বাধ্য হয়। তারপরও কিছু হিংস্য প্রাণি চিড়িয়াখানা থেকে পালিয়ে গেছে।
বন্যার পানি চিড়িয়াখানাটির বেষ্টনির ছাদ পর্যন্ত উঠেছিলো। এতে শত শত প্রাণি ডুবে যায়। এর মধ্যে অনেক প্রাণি সাঁতরে বেষ্টনির বাইরে চলে যায়।
চিড়িয়াখানা থেকে মুক্ত হয়ে পালিয়ে যাওয়া প্রাণিদের মধ্যে রয়েছে বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক এবং নেকড়ে। নিখোঁজ হওয়া প্রানির সংখ্যা কতো তা এখনো পরিষ্কার নয়। তাই হেলিকপ্টার দিয়ে তিবলিসি শহর পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
পালিয়ে যাওয়া প্রাণিদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয় অধিবাসীদের ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য সতর্কতা জারি করেছে দেশটির প্রশাসন।
প্রধানমন্ত্রী ইরাক্লি গারিবাশভিলি সব প্রাণিকে খুঁজে পাওয়ার আগ পর্যন্ত স্থানীয় অধিবাসীদের ঘরের ভেতরেই থাকার আহবান জানিয়েছেন।
শহরের প্রধান স্কয়ারে একটি জলহস্তিকে কোণঠাসা করে ট্রাঙ্কুলাইজার বন্দুক দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এছাড়াও একটি ভবনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ সংলগ্ন জায়গায় একটি ভালুককে পাওয়া যায়। বাসার বারান্দায় হায়েনার দেখার মতো ভয়াবহ অভিজ্ঞতাও হয় স্থানীয় এক বাসিন্দার।
বন্যায় রাজধানীর রাস্তাগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং ছোট ছোট বাড়ি ও অনেক গাড়ি ভেসে গেছে। এছাড়াও শহরের কবরস্থান থেকে কফিন ভেসে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
দুর্গত এলাকায় অনেক মানুষই ঘরহারা হয়ে পড়েছেন। উদ্ধার কার্যে নিয়োজিত কর্মীরা আটকে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধারে পানিতে তলিয়ে যাওয়া বাড়িগুলোতে অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে।
হাজার হাজার মানুষ পানি এবং বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছেন। অনেকেই বিমানে নিরাপদ জায়গায় সরে গেছেন। পরিস্থিতিকে অত্যন্ত সঙ্গিন বলে বর্ণনা করেছেন মেয়র ডেভিট নারমানিয়া ।
প্রেসিডেন্ট জিয়োর্গি মার্গভেলাশভিলি আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
ভাইস-মেয়র ইরাকলি লেকভিনাদজে প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পর্যালোচনা করে এর পরিমান ১০ মিলিয়ন ইউএস ডলার বলে উল্লেখ করেছেন।
প্রবল বৃষ্টিতে ক্ষুদ্র নদী ভেরের তীর উপচে বন্যার সৃষ্টি হয়।
২০১২ সালের মে মাসে তিবিলিসিতে বন্যায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছিলো।