একদিন পরই ভোট। নানা নাটকীয়তা এবং উত্তেজনার মধ্য দিয়ে হিম হিম শীতে চলেছে নির্বাচনী প্রচারণা। তবে এবারের নির্বাচনে ‘মিছিল-মিটিং’য়ে বৈচিত্র্যতা এনেছে ডিজিটাল প্রচারণা। তরুণ ভোটারদের কাছে ভোট চাওয়ায় নান্দনিক উপস্থাপনে অনেকটাই এগিয়ে ছিল আওয়ামী লীগ। ‘জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা’ এ গানটি সবার মুখে মুখে। দল মত সকলের কাছে এর জনপ্রিয়তা লক্ষ্যণীয়। অন্যদিকে বিএনপি তাদের নেতা-কর্মীদের মামলা গ্রেপ্তার নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছে অনেকটাই বেকায়দাতে। সহিংসতার ঘটনা উভয় দল থেকেই ঘটেছে, যা দমন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সচেষ্ট ছিল।
মিটিং মিছিল শেষ। এখন চলছে নীরব জনসংযোগ। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ দলগুলোর কাছে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিরাপদে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের নিশ্চিয়তা চাইছে। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশনের কিছু নির্দেশনা আলোচিত হচ্ছে। এর সাথে গণমাধ্যমে নাশকতার শংকা নিয়ে সংবাদগুলো ভাবনার বিষয়।
শনিবার রাত থেকে রোববার গভীর রাত পর্যন্ত যানবাহন চলাচলের প্রতি নিষেধাজ্ঞা, মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ, ইন্টারনেটের ধীর গতি, মেস-বাড়িতে থাকা ব্যাচেলরদের বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ; এ বিষয়গুলো নাগরিকের অধিকারের সাথে সম্পৃক্ত।
আধুনিক জীবন ব্যবস্থায় এসবের সাথে অভ্যস্ত নাগরিক জীবন। শহরে প্রচুর ছেলে মেয়ে মেস সিস্টেমে থেকে পড়াশোনা আর চাকরি করে। তাদের সবার পক্ষে এভাবে বাসা ছেড়ে যাওয়াও সম্ভব নাও হতে পারে। এ বিষয়টি একজন নাগরিককে বেকায়দা পরিস্থিতিতে ফেলা। আর সেই সাথে এটি ভোটে বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে তা ভাবনীয় ছিল অতি উৎসাহীদের। কোন ধরনের নাশকতা যেকোন অবস্থান থেকে ঘটার শংকা থাকলে সেই শংকা যেন সত্যি না হয় তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে হবে। কাউকে ঘর থেকে সাময়িকভাবে চলে যেতে বলা তার অধিকারে হস্তক্ষেপ করা। যদিও শেষ পর্যন্ত পুলিশ বলেছে েএমন কোনো নির্দেশনা কাউকে দেয়া হয়নি।
আবার ভোটের পরের দিন কোন ছুটির দিন নয়। সেক্ষেত্রে যারা শহর ছেড়ে যাচ্ছে ভোট দিতে বা মেসের বাসিন্দারা তারা যানবাহন চলাচলের পর গভীর রাতে ফেরার জন্য নিরাপদ বোধ করবে না। এ বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন ছিল। সুতরাং ভোটের দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা হলেও অলিখিতভাবে তার পরের দিনও ছুটির রেশ থাকবে অফিস আদালতে।
আবার যানবাহন চলাচলের নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক ভোটার ভোট দিতে যেতে চাইবে না। কারণ সবার ভোটকেন্দ্র নিজের ঘরের কাছে তা কিন্তু নয়। এতে করে ভোট নষ্ট হবার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। ভাসমান ভোটারদের বেলায় এ কারণটি দলগুলোকে মাথায় রাখা প্রয়োজন। বিশেষ করে শহরে এর প্রভাব পড়বে বেশী।
একইভাবে ইন্টারনেট মোবাইল সংক্রান্ত বিষয়গুলোও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শক্তিশালী ব্যবস্থা করা উচিত। পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতে নির্বাচন একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে সম্পন্ন হয়। তারা জনজীবনকে ব্যাহত করে ভোট করে এমন ঘটনা শোনা যায় না। গণতান্ত্রিক দেশে ভোট নাগরিকের অন্যান্য অধিকারের মতো একটি অধিকার। যার মাধ্যমে সে তার রাজনৈতিক মত প্রকাশ করে।
একটি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার স্বার্থকতা তখনই আসবে, যখন নাগরিক তার অধিকারকে কর্তব্য মনে করে প্রয়োগ করবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উন্নয়নের বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচ্য হবে সেই প্রত্যাশা জনগণের। সুতরাং সেই পরিপ্রেক্ষিতে জনজীবনের কোন দুর্ভোগ ভোটে যেন প্রভাব না ফেলে তা খেয়াল রাখতে হবে নির্বাচন কমিশনসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)