দেশের শীর্ষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে বিতর্কিত হচ্ছেন । সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে না পারর অভিযোগে আলোচনায়-সমালোচনায় ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
সিনেট নির্বাচন হওয়ার পরও প্যানেল নির্বাচনের আগেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামকে পুনরায় নিয়োগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে সেখানে শিক্ষকদের মধ্যে অস্থিতিশীলতা চলছে। এ নিয়ে বিতর্ক চলছে।
বারবার কেন বিতর্কিত হচ্ছেন ভিসিরা?
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন না মেনে ভিসি নিয়োগ দেওয়ায় যে অসন্তোষ তৈরি হয় সে কারণেই মূলত ভিসিরা বিতর্কের মধ্যে পড়েন।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: চারটি বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) বিশ্ববিদ্যালয় আইনে পরিচালিত হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিসি হওয়ার একটা পদ্ধতি আছে। পদ্ধতিটা হলো ভিসি পদ শূন্য হলে সিনেট কর্তৃক তিন জনের একটি প্যানেল হবে। এই তিনজনের ভেতর থেকে একজনকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন।
তিনি বলেন: দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত কয়েক বছর যাবত এই চর্চাটা ভালোভাবে চলছে না। অনেক সময় সাময়িক শূন্যতা সৃষ্টি হয় বা মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তখন সরকার সাময়িকভাবে কাজ চালানোর জন্য একজনকে নিয়োগের জন্য আচার্যের কাছে নাম পাঠান এবং তিনি নিয়োগ দেন। এই যে আচার্য যাকে নিয়োগ দিলেন, তিনি ছিলেন সাময়িকভাবে নিযুক্ত উপাচার্য। তার উচিত ছিলো যখনই সময় হবে সিনেট নির্বাচন দিয়ে নিয়মিত প্যানেলে নির্বাচিত হয়ে তিনি যেনো নিয়োগ পান।”
‘‘কিন্তু দুঃখজনকভাবে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইন আছে, সেখানেও এই সাময়িক নিযুক্তি নিয়েই তারা (ভিসি) চার বছর চালিয়ে দেন, নির্বাচনের দিকে যান না। তাতে একটা হতাশা-বঞ্চনার সৃষ্টি হয়। কারণ ভিসি হওয়ার জন্য অনেকেই প্রত্যাশী থাকেন, তারা হয়তো সিনেট নির্বাচনের জন্য বসে থাকেন এবং প্রত্যাশা করেন যে সিনেট নির্বাচন হলে তাদের ভিসি হওয়ার সুযোগ আসবে। কিন্তু সেই সুযোগ আর আসে না। অসম্পূর্ণ সিনেট দিয়েও কখনও কখনও নাম প্রস্তাব করার চেষ্টা করা হয়েছে। কখনও কখনও পূর্ণ করেও নির্বাচন হয়নি বা নির্বাচন হলেও তার আগে আবারও সাময়িক নিয়োগ নিয়ে এসেছে।”
“এইটা কিন্তু সিনেটর বা বাইরের লোকেরা, এমনকি শিক্ষার্থীরা খুব একটা ভালো চোখে দেখে না, পছন্দ করে না।’’
সাম্প্রতিক উদাহরণ টেনে তিনি বলেন: জাহাঙ্গীরনগরের ব্যাপারটা হলো, সিনেট নির্বাচন হলেও প্যানেল নির্বাচন করা হয়নি। এই সুযোগে তারা তখন (ভিসি) নিয়োগ নিয়ে এসেছেন। যদি প্যানেল হয়ে যেতো তাহলে হয়তো এমনটি হতো না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট দ্বারা তিনজনের প্যানেল নির্বাচন করা হলেও সেই প্যানেল থেকে কাউকে নিয়োগ না দেওয়া প্রসঙ্গে অ্যধাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন: সেটা পূর্ণ সিনেট না থাকায় কোর্টের একটা স্টে অর্ডার ছিল। তবে এটাও ঠিক যে প্যানেল যেহেতু হয়ে গেছে, তাই প্যানেল থেকেই সেটা (ভিসি নিয়োগ) করতে পারতো। কিন্তু কেন করা হলো না সেটাতো আমি আর বলতে পারবো না। পূর্ণ হলে হয়তো একথাটা আর উঠতো না।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: যেকোনো বিষয়ে সমালোচনা করা সুশীল সমাজের একটি বৈশিষ্ট। তবে প্রতিটি বিষয় সমাধান করার জন্যও সময় দরকার, সে ব্যাপারটিও বুঝতে হবে।
‘‘সমালোচনাগুলোকে ইতিবাচকভাবে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করে যাওয়াই হবে আমাদের কাজ,’’ বলে জানান অধ্যাপক আখতারুজ্জামান।