ইউরোপের দেশগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার রোহিঙ্গাদের পাশে ভারতের দাঁড়ানো উচিত বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন। এই সাক্ষাতকারে তিনি ধর্ম, রাষ্ট্র, ধর্মীয় উগ্রপন্থা, নারী অধিকার, অং সান সু চির কর্মকাণ্ড সহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।
এনটিভির সাংবাদিক শেখর গুপ্তার সঙ্গে আলাপকালে তসলিমা নাসরিন বলেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সিরীয় শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ভারতেরও উচিত মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যদি কোন মুসলিম দেশে যায় তাহলে তারা ইসলামী উগ্রপন্থার সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারে, কারণ অনেক রোহিঙ্গারই উগ্রপন্থীদের সঙ্গে যোগসূত্র আছে। সেক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা যদি কোন অমুসলিম দেশে আশ্রয় নেয় তাহলে তারা আইএস বা অন্যান্য উগ্রপন্থী দলের সঙ্গে যোগ দিতে পারবে না।
তিনি বলেন, আমি বলছি না ভারতের অবশ্যই রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে হবে, কিন্তু তারা বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। অতীতেও শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে ভারত দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে।
নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তসলিমা বলেন, সু চি জাতিগত দাঙ্গা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সমর্থন করছেন। তাই আমি তাকে সমর্থন করতে পারি না। অনেক সময় ভুল মানুষকে শান্তিতে নোবেল দেয়া হয়, যারা আসলে শান্তির জন্য এই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য নয়। এসময় তিনি হেনরি কিসিঞ্জারের কথাও উল্লেখ করেন।
‘তসলিমা নাসরিনকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বোন বলা হয়’- এ প্রশ্নের জবাববে তিনি বলেন, ‘আমি তা মনে করি না, যদি তাই হতো তাহলে আমি মোদির সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তিনি দেখান করেননি। বোন হলে তো দেখা করতেনই।
এর সঙ্গে ভারতের রাজনীতি বা বাংলাদেশের কোন যোগসূত্র আছে কি না- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার সঙ্গে দেখা করলে হয়তো মোদি ভোট হারাতে পারেন, বিশেষ করে মুসলিম ভোট। তবে এর সঙ্গে বাংলাদেশের কোন সম্পর্ক নেই, কারণ বাংলাদেশ বা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই।
নারী অধিকার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তসলিমা বলেন, ধর্ম বরাবরই মানবাধিকারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ধর্ম নারীদের বিরুদ্ধে বেশি জুলুম করেছে, সেটা যে ধর্মই হোক। ধর্ম আর রাষ্ট্র কখনও এক হতে পারে না। রাষ্ট্র থেকে ধর্ম আলাদা করতে হবে। ইসলামী রাষ্ট্র থেকে তো অবশ্যই।
এসময় তিনি ধর্মীয় উগ্রপন্থার কঠোর সমালোচনা করেন।